ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ রানারআপ হওয়া কি ফ্লুক ছিল!

এবারের ইউরো তাই ক্রোয়েশিয়ার জন্য নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ। কিন্তু নিজেদের প্রমাণ করতে তারা পারছে কই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে চেক রিপাবলিকের কাছেও প্রায় হেরে যাচ্ছিলো। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় কোনোরকমে সমতা ফিরিয়ে হার এড়িয়েছেন মদ্রিচ-পেরিসিচরা। শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বিকল্প অন্য কোনো ফলাফল হলে বিদায়ঘন্টা বেজে যাবে ক্রোয়েশিয়ার। সেক্ষেত্রে হয়তো তুরস্ক কিংবা সুইডেনের মতো বিশ্বকাপ ফ্লুক হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবেন মড্রিচ-রাকিটিচ-পেরিসিচরা।

২০১৭ সালে ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান জলাৎকা দালিচ। কোচিং ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় এশিয়াতে থাকা কাউকে কোচের দায়িত্ব দেয়াতে সবাই খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে ডেভর সুকারের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের সুবাদে তৃতীয় হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।

এরপর থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই নিশ্চিত করতে পারেনি ক্রোয়াটরা। অন্যদিকে নতুন ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্মের আভা তখন পড়তির মুখে, সামনে শেষ সুযোগ হিসেবে তখন টিকে রয়েছে কেবল বিশ্বকাপ। যদিও বিশ্বকাপে সুকারের সাফল্য ছাড়িয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনাই ছিল নাহ দলটির মাঝে; ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব এবং ২০১৬ ইউরোতে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে দলটি।

অথচ এই ক্রোয়েশিয়াই দালিচের অধীনে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে, বিশ্বকাপের আগে এই কথা বললে হয়তো পাড় ক্রোয়েশিয়া ভক্তও পাগল বলে আখ্যা দিতো। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক সময় এমন সব ঘটনা ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা থাকে নাহ, বিশ্বকাপটাও ক্রোয়েশিয়ার জন্য ছিল সেরকমই।

বিশ্বকাপের আগে থেকেই রক্ষণ সামলানোর দিকে মনোযোগ দেন দালিচ। গোল দিতে না পারি কিন্তু গোল খাওয়া চলবে নাহ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন দলকে। পুরো নকআউট পর্বজুড়ে এই ট্যাকটিক্স অনুসরণ করেন দালিচ। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে ক্রোয়েশিয়া।

তবে, ক্রোয়েশিয়া পুরো ফুটবল বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে পরের ম্যাচ দিয়ে, মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর। শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয় তারা। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্ক, কোয়ার্টারে রাশিয়া আর সেমিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় তারা। যদিও ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় তারা।

ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপে ভালো করার পেছনে যতটা না ছিল তাদের পারফর্ম করার ক্ষমতা, তারচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন ফুটবলবিধাতা। নকআউটে ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ব্রাজিল, বেলজিয়ামের মতো দলগুলো থাকলেও তাদের প্রথম বড় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয় সেমিতে গিয়ে! নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই আগে গোল খেয়েছে ক্রোয়াটরা।

ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুন নাহ, পুরো ক্যারিয়ারে তিনটি পেনাল্টি সেভ না করা ড্যানিয়েল সুবাসিচ সেদিন একাই তিনটি পেনাল্টি সেভ করেন। শুধু তাই নাহ কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়ার বিপক্ষেও টাইব্রেকারে জয়লাভ করে তারা। টানা দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে জয়! আপনি একে ভাগ্য ছাড়া অন্য কিছুতেই বিশেষায়িত করতে পারবেন নাহ।

আবার সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুন, ম্যাচে তখন ১-০ গোলে এগিয়ে থ্রি লায়ন্সরা। এমন সময় খালি গোলবার পেলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেইন, গোলটা হয়ে গেলে ম্যাচ নিশ্চিত পকেটে পুরে ফেলবে ইংলিশরা।

সেই শট অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মারেন কেইন, আপনি একে ভাগ্য ব্যতীত কি বলবেন? কিংবা মারিও মানজুকিচের ১০৯ মিনিটের গোলটা, পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ডিফেন্স সামলানো স্টোন্স কি করে তখন অতটা খালি জায়গা দেন মানজুকিচকে। তবে ফাইনালে ফ্রান্সের সাথে আর পেরে উঠেনি ক্রোয়েশিয়া, ভাগ্যের মারপ্যাঁচ বোধহয় একেই বলে।

বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলাটা যে ফ্লুক ছিল না সেটা দালিচের শিষ্যরা প্রমাণ করতে পারেননি গত তিন বছরে। বড় কোনো দলকে তো হারাতে পারেইনি উলটো বেশ কয়েকবার হেরেছেন ছোট দলগুলোর সাথে। স্পেনের বিপক্ষে হজম করতে হয়েছে ৬ গোল। ন্যাশন্স লীগেও বাদ পড়ে যেতে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই।

এবারের ইউরো তাই ক্রোয়েশিয়ার জন্য নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ। কিন্তু নিজেদের প্রমাণ করতে তারা পারছে কই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে চেক রিপাবলিকের কাছেও প্রায় হেরে যাচ্ছিলো। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় কোনোরকমে সমতা ফিরিয়ে হার এড়িয়েছেন মদ্রিচ-পেরিসিচরা। শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বিকল্প অন্য কোনো ফলাফল হলে বিদায়ঘন্টা বেজে যাবে ক্রোয়েশিয়ার। সেক্ষেত্রে হয়তো তুরস্ক কিংবা সুইডেনের মতো বিশ্বকাপ ফ্লুক হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবেন মড্রিচ-রাকিটিচ-পেরিসিচরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...