আঘাতটা বুকেই থাকুক

পাকিস্তানের ইনিংসের চৌদ্দ তম ওভারের খেলা চলছে। ব্যাট হাতে নিজের আরেকটি অর্ধশতক করে ফেলেছেন ততক্ষণে। তবে শারজাহ’র গরমটা আর সহ্য করতে পারছিলেন না। ডাগ আউটে থাকা সতীর্থদের দিকে তাকিয়ে পানির জন্য ইশারা করলেন। তবে ওভারের মাঝপথে বলে বারবার তাড়া দিচ্ছিলেন মাঠে থাকা আম্পায়ররা।

সময়ের ব্যাপারে এখন বেশ কড়াকড়ি আছে। যে করেই হোক সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে হবে। তবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের শরীরটা যে আর চলছেনা। সতীর্থদের বুকে হাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন নিজের কষ্টটা। তবুও একটু পানি খেয়ে আবার ব্যাটটা তুলে নিলেন। আঘাতটা বুকে চাপা দিলেন যেন। কেননা রিজওয়ান জানেন তাঁর কাজ তখনো শেষ হয়নি। দল তখনো একটা নিরাপদ জায়গায় পৌছাতে পারেনি।

মোহাম্মদ রিজওয়ান একটা বিশাল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন যেন আজ। আজ আর কোন ভুল করতে চাননা তিনি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটায় লড়াই হয়েছিল সমানে সমানে। তবে ভারতকে জয় এনে দিয়েছিলেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডেয়া। সেদিন নিজের মন্থর ইনিংসের দায়টা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন রিজওয়ান।

সেদিন ৪২ বল খেলে করেছিলেন ৪৩ রান। ফলে পাকিস্তানের রানটাও একটু কম হয়েছিল। ভারত আর ভুল করেনি, জয় তুলে নিয়েছিল। ওদিকে আজো রিজওয়ানের শুরুটা একটু ধীরই। কেননা ম্যাচের শুরুতেই বাবর আজম ফিরে গিয়েছিলেন। ফলে দায়িত্বটা তাঁর উপর আরো বেশি ছিল।

ওদিকে হংকং এর বোলাররাও প্রশংসার দাবি রাখেন। শুরু থেকেই পাকিস্তানকে ভীষণ চাপে রেখেছেন তাঁরা। হংকং এর বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল রিজওয়ান ও ফখর জামানের জন্য। রান করার জন্য একটা সময় রীতিমত হাসফাস করছিলেন তাঁরা।

তবে দুজনই বাইশ গজে ধৈর্য ধরেছেন, নিজের উপর আস্থা রেখেছেন। তাঁরা ম্যাচটাকে আরো গভীরে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। পরবর্তী ব্যাটারদের জন্য একটা শক্ত ভীত গড়ে দিতে চাচ্ছিলেন। মোহাম্মদ রিজওয়ান তাঁর হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে খেলেছেন ৪২ বল। তবে এরপর ধীরে ধীরে রিজওয়ানের ব্যাট চাবুক হয়েছে। শারজাহ’র ধীর হয়ে আসা উইকেটেও বাহারি শটের পশরা সাজিয়েছেন।

প্রথম দশ ওভারে মাত্র ৬৪ রান করা পাকিস্তানও তাই পরে বড় সংগ্রহ করতে পেরেছে। এই সময় রিজওয়ানকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন ফখর জামান। ৪১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। তবে রিজওয়ান নিজের কাজটা চালিয়ে গিয়েছেন পরে খুশদিলকে নিয়েই।

ওপেন করতে নামা রিজওয়ান খেলেছেন ইনিংসের শেষ ওভার অবধিই। পাকিস্তানও হংকংকে ছুড়ে দিয়েছে বিশাল স্কোর। শেষ দশ ওভারে পাকিস্তান করেছে ১২৯ রান। ফলে পাকিস্তানের স্কোর দাড়িয়েছে ১৯৩। এতে অবশ্য বড় অবদান ছিল খুশদিল শাহ’র। শেষ ওভারে যেন ছক্কা বৃষ্টি নামিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১৫ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও খেলেন তিনি।

মোহাম্মদ রিজওয়ানও নিজের ইনিংস শেষ করেছেন ১৩৬.৮৪ স্ট্রাইকরেট নিয়ে। প্রথমে দলকে একটা নিরাপদ জায়গায় এনেছেন। তারপর আস্তে আস্তে নিজেও ব্যাট চালিয়েছেন সজোরে। শেষ পর্যন্ত ৫৭ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ছিলেন অপরাজিত।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link