অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনার আলো-ছায়ায় যখন পর্তুগালের খেলোয়াড়েরা উল্লাসে ভাসছে, তখন ডাগআউটের কোণায় এক চেনা মুখের চোখজোড়া টলমল করছিল। নাম তাঁর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
ইতিহাসের পাতায় যে নামটা ইতিমধ্যেই অলিখিত স্বর্ণাক্ষরে লেখা, সেই নামটাই যেন নতুন করে বুক ভরে শ্বাস নিল—জাতীয় দলের জার্সিতে আরেকটি চূড়ান্ত মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে।
দ্বিতীয়বারের মতো উয়েফা নেশনস লিগের শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। ২০১৯ সালের পর ২০২৫—ছয় বছরের ব্যবধানে আবার। ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্পেন। ১২০ মিনিটের এক ক্লাসিক যুদ্ধ, যেন সময়ও থমকে দাঁড়িয়ে ছিল।
২-২ গোলে সমতা শেষে টাইব্রেকারে গড়ায় লড়াই, আর সেখানে পর্তুগিজরা রাখে বরফশীতল স্নায়ুর নিখুঁত পরীক্ষা—পাঁচটি শট, পাঁচটিই জালে। স্পেন থমকে যায় ৫-৩ তে।
রোনালদো এদিন গোলও করেছেন। আন্তর্জাতিক গোলের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩৮-এ। কিন্তু সেটা নিয়েই উল্লাস নয়, তাঁর চোখের জলের মানে ছিল আরও গভীর। ম্যাচের ৮ ৮তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
এরপর অতিরিক্ত সময়, পেনাল্টি, শিরোপা—সবই তাঁর চোখের সামনে, মাঠের বাইরে থেকে। অনেকে বলে ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর ট্রফি ভাণ্ডার পূর্ণ, কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে জেতা শিরোপার অনুভূতি ভিন্ন।
২০১৬ ইউরোর ফাইনালে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, আজও তাই। এবারও ডাগআউটে বসে নয়, ডাগআউট থেকেই দাঁড়িয়ে, কাঁধে দলের নেতা হওয়ার বোঝা নিয়ে ট্রফিটা তুলে ধরেছেন নিজ হাতে।
ম্যাচে পর্তুগাল দুইবার পিছিয়ে পড়ে। ফিরে আসে দুইবারই—প্রথমে নুনো মেন্দেজ, তারপর সেই রোনালদো। যেন ফুটবলের নতুন রূপকথা লিখতেই মাঠে নেমেছিল রোনালদোর পর্তুগাল।
শিরোপা জয়ের পর রোনালদো বলেন, ‘পর্তুগালের হয়ে এই জয়, আমার ক্লাব ক্যারিয়ারের সব ট্রফির চেয়ে বড়।’ হয়তো এই কথার ভেতরেই লুকিয়ে ছিল তাঁর ২১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আবেগী সন্ধ্যা।
এই ম্যাচটা আরেকটা কিছুর গল্পও—রক্তমাংসের এক কিংবদন্তি কেমন করে দলকে টেনে নেয় শেষ সীমানা অবধি, এমনকি যখন তাঁর পা চোটে, তবু বুকের ভেতর এক অদৃশ্য ছন্দে বাজে জাতীয় পতাকার সুর।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ৪০ ছুঁইছুঁই বয়সে এসেও যার চোখে জয়ের স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ে না—বরং শিরোপায় পরিণত হয়। স্বপ্ন মাখা এই লড়াইটার জন্য তিনি সবার চেয়ে আলাদা।