রোনালদোর ‘আরব’ জয়

ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা কলম - এই কলমের কালি শেষ হয় না। ফুরিয়ে আসার সময় হলেই নতুন করে কালি ভরে লেখা যায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বোধহয় ফুটবলের ফাউন্টেন পেন।

ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা কলম – এই কলমের কালি শেষ হয় না। ফুরিয়ে আসার সময় হলেই নতুন করে কালি ভরে লেখা যায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বোধহয় ফুটবলের ফাউন্টেন পেন।

ফিনিশড ট্যাগ দিতে গেলেই নতুন করে শুরু করেন তিনি; মনে একটু সংশয় জাগলেই দুই পায়ের জাদুতে আবারো শিক্ত করেন হৃদয়। প্রশ্ন ওঠে রোনালদো কি আসলেই মানবীয় সত্তার অধিকারী?

কারণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যা করেছেন সেটা অতিমানবীয়, অবিশ্বাস্য। পিছিয়ে পড়া আল নাসেরকে প্রায় একা হাতে জিতিয়েছেন আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নস কাপ। ৪২ বছর ধরে যে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠেনি দলটি, তাঁরাই শিরোপা জিতলো রোনালদোর দুই গোলে ভর করে।

ম্যাচের ৫১ মিনিটের কথা, মাইকেলের গোলে এগিয়ে যায় আল হিলাল। সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠা আল নাসেরের জন্য কাজটা আরো কঠিন হয়ে যায় ৭১ মিনিটে; লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ডিফেন্ডার আবদুলেলাহ আল আমরি। দশ জনের দল নিয়েই খেলতে হয় নাসেরকে, তবে যেখানে রোনালদো আছেন সেখানে আশার প্রদীপও জ্বলতে থাকে শেষ পর্যন্ত।

মিনিট তিনেক পরেই রাইটব্যাক ঘানামের ক্রস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে দলকে ম্যাচে ফেরান পর্তুগিজ যুবরাজ। এরপর আরো একখানি গোলও করেন তিনি; তবে বাঁধা হয়ে দাড়ায় লাইনসম্যানের পতাকা।

অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে শেষপর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই। প্রায় দশ-বারো গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক হেডারে দলকে লিড এনে দেন তিনি।

দশজনের দলকেও ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে দাড়ানো কেউ একজন যে টেনে নিতে পারেন সেটা বোধহয় রোনালদোকে আজ না দেখলে কখনো কল্পনা করা যেত না। ম্যাচের বাকি সময় লিড ধরে রেখেছিল অ্যালেক্স টেলেসরা; আর তাতেই আল নাসের ভক্তদের বহুল আকাঙ্খিত ট্রফি উঠেছে রোনালদোর হাতেই।

ফাইনাল মানেই অবশ্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ‘শো’। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে এর আগে ৩২টি ফাইনাল খেলা রোনালদো গোল করেছেন বিশটি, এবার সেই সংখ্যা পৌঁছেছে বাইশে। লিগে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ তো বটেই এশিয়ান অঞ্চলেরই সেরা পরাশক্তি আল হিলালকে হারানোতে রোনালদোর কাছ থেকে এমন কিছুই প্রত্যাশা করেছিল সমর্থকেরা।

সবমিলিয়ে এই তারকার ক্লাব ক্যারিয়ারে এখন ট্রফি ৩৫টি। আড়াই বছর আগে নিজের শেষ শিরোপা জিতেছিলেন রোনালদো, তাই তো আরব কাপের গুরুত্ব তাঁর কাছেও নেহায়েৎ কম নয়।

পুরো আসর জুড়েই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ছিলেন নিজের আলোয় ভাস্বর। মোট ছয় ম্যাচের এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জালের দেখা না পেলেও শেষ পাঁচ ম্যাচে করেছেন ছয়টি গোল। এই ছয় গোলের তিনটিই ম্যাচ উইনিং গোল, একটা এসেছে ম্যাচের শুরুতে বাকি দুইটি সমতাসূচক গোল।

চলতি বছরে এরিই মাঝে এগারোটি ম্যাচ জেতানো গোল এসেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাছ থেকে। এছাড়া দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন একাধিকবার; সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তেই নিজের সেরাটা দিয়েছেন তিনি। এমনিতে তো আর ‘বিগ ম্যাচ প্লেয়ার’ বলা হয় না তাঁকে।

বয়সটা ৩৮, তবু দলের জন্য সবমিলিয়ে দুই ঘন্টারও বেশি সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। হয়তো আগের মত ড্রিবলিং করতে দেখা যায় না, দূরপাল্লার শটে গোলরক্ষককে বোকা বানাতে পারেন না তবে রোনালদো ঠিকই ছুটছেন নিজের গতিতে। সেই সাথে দলকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিশ্বকাপ জেতেননি, ইউরোপীয় ফুটবলেও তিনি জায়গা হারিয়েছেন – রোনালদোকে ট্রল করার উপলক্ষ অনেক। কিন্তু এত এত বিদ্রুপের মাঝেও রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব ঠিকই ফুটে ওঠে বারবার। বারবার ‘সিইউউ’ সেলিব্রেশনে রোনালদো বুঝিয়ে দেন এই ফুটবল জগতে তিনিও সেরাদের একজন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...