যে বিদায় অর্থহীন, তবুও…
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়তো রুবেল খুব বড় কোন নাম নন। অন্তত সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর তেমন বড় কোন অর্জন নেই। তবে রুবেল হোসেন জোরে বল করতে পারতেন। প্রায় একটা যুগ বাংলাদেশের হয়ে লাল বলটা নিয়ে তিনি জোরে বল করেছেন। মিরপুরের চির ধরে যাওয়া উইকেটেও এক্সপ্রেস গতি তুলতে চেয়েছেন। মরা উইকেটের পরিসংখ্যান হয়তো রুবেলের সেই ক্ষিপ্রতা দেখাতে পারবেনা কখনোই।
২০০৯ সাল। কুয়াশায় ঢাকা এক শীতের সকালে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের যুক্ত হলো এক নয়া এক্সপ্রেস। সেই সময় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসার বলতে শুধু মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে সেদিন সকালে প্লাটফর্মে এসে পৌছাল নতুন এক এক্সপ্রেস ট্রেন, বাগেরহাট এক্সপ্রেস। একেবারে ঝা তকতকে একটা শক্তপোক্ত শরীর, যে শরীরে আছে বাঘের মত ক্ষিপ্রতা, আর জোরে বল করতে পারার ক্ষমতা। বাঘের দেশের সেই ছেলেটার নাম রুবেল হোসেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়তো রুবেল খুব বড় কোন নাম নন। অন্তত সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর তেমন বড় কোন অর্জন নেই। তবে রুবেল হোসেন জোরে বল করতে পারতেন। প্রায় একটা যুগ বাংলাদেশের হয়ে লাল বলটা নিয়ে তিনি জোরে বল করেছেন। মিরপুরের চির ধরে যাওয়া উইকেটেও এক্সপ্রেস গতি তুলতে চেয়েছেন। মরা উইকেটের পরিসংখ্যান হয়তো রুবেলের সেই ক্ষিপ্রতা দেখাতে পারবেনা কখনোই।
বলছিনা, রুবেল হোসেন ভালো উইকেট পেলে সবকিছু ছারখার করে ফেলতেন। বলছিনা রুবেল বিশ্বের সেরাদের একজন হতেন, কিংবা বাংলাদেশের সেরা হতে পারতেন তাও বলছিনা। তবে রুবেল পারতেন। একযুগ আগে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে তাসকিন আহমেদ ছিলেন না, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদরা আসেননি তখনো। হালের শরিফুল ইসলামও তখন নিতান্তই শিশু। সেই সময় বাংলাদেশের একটা ছেলে জোরে বল করতে পারতো। মাশরাফি বিন মর্তুজার পর আশা নতুন এক সম্ভাবনা। বাঘের দেশের ছেলে বলে কথা।
ফলে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই রুবেলকে নিয়ে অনেক আলোচনা ছিল। খানিকটা মালিঙ্গার মত বোলিং স্টাইল সেই আলোচনায় বাড়তি খোরাক দিয়েছিল। তবে সাদা পোশাকে রুবেল কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। একবার শুধু ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছিলেন। এছাড়া পরিসংখ্যানের পাতা পুরোটাই ভীষণ ফ্যাঁকাসে।
তবুও রঙিন পোশাকে রুবেল নিজের সাহসটা দেখিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সার্ভিস দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পেসার বললেও ভুল বলা হবেনা। ওয়ানডে ফরম্যাটে ১০৪ ম্যাচে ১২৯ টি উইকেট আছে। একটা সময় বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন।
তবে রুবেলের সেদিন ফুরিয়েছে। ধীরে ধীরে নিজের ক্ষীপ্রতা হারিয়েছেন। বাঘেদেরও তো একটা সময় শিকারের ক্ষমতা কমে আসে। বাংলাদেশের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২১ সালে। এরপর আর আসলে সেভাবে আলোচনাতেও তিনি নেই। আর সাদা পোশাকে শেষ খেলেছিলেন ২০২০ সালে। প্রায় দুই বছর।
এরপর টেস্ট ক্রিকেটে আগমন ঘটেছে এবাদত, খালেদ, তাসকিন, শরিফুলদের। ফলে এই সময়ে এসে রুবেল আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটের ভাবনাতেও নেই। হয়তো আবার কখনো ফিরে আসাটাও প্রায় অসম্ভব। একই কথা খাটে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও। ৩২ বছর বয়সী রুবেলের আবার জাতীয় দলে ফেরাটা ভীষণ কঠিন কিংবা প্রায় অসম্ভব।
রুবেল হোসেনও হয়তো সেই রূঢ় বাস্তবতা বোঝেন। সেজন্যই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন আনুষ্ঠানিক ভাবে। যে বিদায় আসলে অর্থহীন, যে বিদায়ের অপেক্ষায়ও হয়তো কেউ ছিল না। যে বিদায় কারো অন্তরে ঝড় তুলেনা, যেমনটা তুলতে রুবেলের ইয়োর্কার গুলো। বিদায়টা মলিন, সাদামাটা তবুও তো লোকটা রুবেল, আমাদের বাগেরহাট এক্সপ্রেস, আমাদের নিজস্ব মালিঙ্গা, আমাদের বাঘ।