রানিং বিটউইন দ্য উইকেট – আধুনিক ক্রিকেটের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচলিত ধারনা এই যে, ব্যাপারটা নিয়ে আগেকার যুগের ব্যাটসম্যানরা (মাফ কিজিয়ে!) খুব একটা মাথা ঘামাতেন না। এই ধারনা ঠিক না ভুল এটা বোঝার সরাসরি কোন উপায় নেই কারন অনেকটা আউট ফিল্ডে ফিল্ডিঙের মতো উইকেটের মাঝখানে দৌড়ের কোন স্ট্যান্ডার্ড মাপকাঠি নেই।
নাকি আছে?
এস গিরিধর এবং ভি জে রঘুনাথ নামের দুই ক্রিকেট পাগল বন্ধু ‘মিড উইকেট টেলস’ নামের একটা অত্যন্ত সুখ পাঠ্য বই লিখেছেন। তারই একটা অধ্যায়ে খুঁজে পেলাম এই বিষয়ে একটা চিত্তাকর্ষক আলোচনা।
তারা একদিনের ক্রিকেটের স্ট্রাইক রেটের হাত ধরে কিছু ব্যাটসম্যানদের ‘রোটেটিং স্ট্রাইক রেট’ বের করেছেন। জিনিসটা আর কিছুই নয়, যে বলগুলোতে ব্যাটসম্যানেরা চার বা ছয় হাঁকিয়েছেন সেগুলো বাদ দিলে তাদের স্ট্রাইক রেট কেমন দাঁড়াবে? অর্থাৎ ভিভ বা সেহওয়াগদের দুর্ধর্ষ স্ট্রাইক রেটের পেছনে তাদের উইকেটের মাঝখানে দ্রুত ছোটার কতটা হাত আছে?
কয়েকজন বিখ্যাত আক্রমণাত্মক এবং দৌড় বীর ব্যাটসম্যানদের সাধারন স্ট্রাইক রেট এবং রোটেটিং স্ট্রাইক রেট নিচে দেওয়া হল –
- ভিভ রিচার্ডস – ৯০.২ / ৫৩
- মাইকেল বেভান – ৭৪.২ / ৫৬.৩
- ডিন জোন্স – ৭২.৬ / ৫২.৬
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট – ৯৬.৯ / ৪৭.৩
- বীরেন্দ্র শেবাগ – ১০১.৯ / ৪২.৯
- ব্রায়ান লারা – ৭৯.৫ / ৪৫.৮
- শচীন টেনডুলকর – ৮৬.২ / ৪৮
- বিরাট কোহলি – ৯৩.১৭ / ৫৮.২
- এ বি ডি ভেলিয়ার্স – ১০১.১ / ৫৯.৩
কিন্তু রোটেটিং স্ট্রাইক রেটের শীর্ষে যিনি রয়েছেন তার নাম দেখলে মোটামুটি সবাই বেশ বড়সড় ধাক্কা খাবেন – কপিল দেব নিখাঞ্জ (৬১.২)। অথচ সবাই কপিলকে বিগ হিট নেওয়ার জন্যই মনে রেখেছে। অবশ্য কপিলের সামগ্রিক স্ট্রাইক রেটও খারাপ নয় – ৯৫.১ – সে যুগের শীর্ষে। যে যুগে ভিভ বিচরন করতেন।
ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে হয়ত অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে কিন্তু পুরনো দিনের ক্রিকেট প্রেমীরা কপিলের উইকেটের মাঝখানে ছোটার কথা খেয়াল করে দেখুন। মনে পড়বে দুই রান নেওয়ার পর যখন ভেঙসরকার, পাতিল বা অমরনাথ ব্যাটের ওপর ভর দিয়ে ‘হ্যা হ্যা’ করে হাঁপাচ্ছেন তখন কপিল অলরেডি তৃতীয় রান নেওয়ার জন্য উইকেটের মাঝপথে।
মনে পড়বে কখনও রান নেওয়ার পর ক্রিজ পেড়িয়ে এগিয়ে যেতেন না কপিল, জাস্ট ক্রিজ ছুঁয়েই ঘুরে দাঁড়াতেন পরের রানের জন্য। মনে পড়বে বিগ হিটের মাঝে আলতো হাতে ফিল্ডারদের এদিক ওদিক বল ঠেলে খুচরো রান চুরি করে নেওয়ার কথা। এবং একটা বিশ্ব রেকর্ডের কথাও মনে পড়তে পারে – ১৩১ টেস্টে একবারের জন্যও রান আউট হননি কপিল।
এবং এর সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখবেন ব্যাটিঙকে সব সময় ‘ফাউ’ হিসেবে ধরতেন কপিল। এসব উনি করতেন বোলিং বা আউট ফিল্ডিং থেকে ছুটি পেলে। তা সত্বেও ১৭৫! চারটে ছয় মেরে ফলো অন বাঁচানো! ২২ বলে ৫০! টাই টেস্টে সেঞ্চুরি! ডোনাল্ডকে তার দেশে গিয়ে ঠ্যাঙ্গানো! এবং ৩৩ বলে ৫০ – এবার টেস্টে!
এত কিছুর পর এবার টুপিতে উইকেটের মাঝখানে দৌড়ের জন্য আরও একটা পালক। এবং ৮৩ আসছে!