২৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সহজ কোনো ব্যাপার নয়। ক্যারিয়ারে ২০০ টেস্ট ম্যাচ কিংবা ১০০ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি সবই অবিশ্বাস্য মনে হতো যতদিন না শচীন টেন্ডুলকার সেটি করে দেখিয়েছিলেন। ২৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রায় সমান তালে পারফর্ম করে গেছেন শচীন।
তাঁর ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা, গবেষণা নিয়মিত হলেও শচীনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা হয় খুব কমই। শচীনের দীর্ঘদিনের ওপেনিং পার্টনার বিরেন্দর শেবাগ জানালেন, ফিটনেসের প্রতি দারুণ মনযোগী ছিলেন শচীন। এমনকি ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসেও তখনকার তরুণ বিরাট কোহলির সাথে ফিটনেস নিয়ে পাল্লা দিতেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’।
ক্রিকেটে ফিটনেসের গুরুত্বটা আলোচনায় এসেছে মোটামুটি দেড় দশক আগে থেকে। এর আগে ক্রিকেটের সাথে ফিটনেসের ধারণাটার খুব একটা প্রচলন ছিলো না ক্রিকেটে। ভারতীয় ক্রিকেটে প্রথম ফিটনেসের ওপর গুরুত্ব দেয়া শুরু করেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। বিরাট কোহলি অধিনায়ক হবার পর বিষয়টিকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।
২৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাটা আপত অসম্ভবই মনে হবার কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত নিজেকে এবং নিজের শরীরকে শচীন গড়ে তুলেছেন ক্রিকেট মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেবার জন্য। ২৫ বছরের এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার ইঞ্জুরিতে পড়েছেন শচীন। তবে যেখানে অন্য খেলোয়াড়রা ইঞ্জুরিতে পড়লে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন, সেখানে শচীন ইঞ্জুরি থেকে যেন ফিরে আসতেন আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে। আরো বেশি রানের ক্ষুদা যেন পেয়ে বসত শচীনকে।
শচীনের ফিটনেস নিয়ে খুব একটা আলোচনা কখনোই ছিলা না ক্রিকেট পাড়ায়। বিরেন্দর শেবাগ খুব কাছ থেকে দেখেছেন ফিটনেসের জন্য কি পরিমাণ নিবেদিত ছিলেন শচীন। মাহেন্দ্র সিং ধোনী অধিনায়কত্ব নেবার অনেক আগে থেকেই নিজের ফিটনেস নিয়ে অনেকটাই সিরিয়াস ছিলেন শচীন। আড়াই দশকের ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি প্রজন্মের সাথে খেলেছেন শচীন। ক্রিকেটের পরিবর্তনের ধারার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন তিনি।
বিরেন্দর শেবাগ, যুবরাজ সিংদের প্রজন্ম থেকে শুরু করে হালের বিরাট কোহলিদের সাথে পাল্লা দিতে নিজের ফিটনেস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন শচীন। শচীন জানতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে নিজেকে ভাঙতে হবে প্রতিনিয়ত, নিজের শরীরের যত্ম নিতে হবে, ফিটনেসকে নিয়ে যেতে হবে পরের পর্যায়ে।
শচীনের ফিটনেস নিয়ে শেবাগ বলেন, ‘শচীন কেন এতগুলো বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পেরেছে? এর কারণ বছরই সে চিন্তা করেছে কিভাবে সে তাঁর ব্যাটিংয়ে নতুন কিছু যোগ করবে এবং নিজেকে আরো ভালো ভাবে কিভাবে গড়ে তুলবে। যদি আমি আমার ব্যাটিংয়ে কিছু যোগ করতে না পারি তাহলে আমার ফিটনেসকে সেভাবেই ধরে রাখতে হবে যেন আমি সেঞ্চুরি গুলোকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারি। ২০০০ সালের দিকে যখন আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসি তখনো শচীন আমাদের চেয়ে বেশি মনযোগী ছিলো।ফিটনেস নিয়ে। যখন ২০০৮ সালে বিরাট কোহলি আসে তখনো সে বিরাটের সাথে প্রতিযোগীতা করতো ফিটনেস নিয়ে। আরো বেশি মনযোগী হয়েছিলো সে তখন।’
শচীনের নিজের গড়ে তোলার প্রক্রিয়া নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন শচীনের সব সতীর্থরা। নিজেকে কতটা ভাঙতে চাইতেন শচীন তা জানালেন শেবাগ, ‘একদিন আমরা সবাই জিমে ছিলাম। সেখানে ১-২০ কেজি ওজনের ডাম্বেল ছিলো। আমরা পাঁচ কেজির বেশি ওজননের ডাম্বেল তুলছিলাম না। ৫-৬ বার সব গুলো ডাম্বেল তোলার পরই আমার আর শক্তি ছিলো না। কিন্তু শচীন সবগুলো ডাম্বেলই ১০ বার করে তুলছিলো। এটি তাঁর বাহুর শক্তির জন্য খুবই উপকারী ব্যায়াম ছিলো যেন সে তাঁর ভারি ব্যাট দিয়ে দীর্ঘক্ষন ব্যাটিং করতেও ক্লান্ত না হয়। ‘
শচীনের রানের ক্ষুদা দিয়ে মুগ্ধ ছিলেন শেবাগ। তিনি বলেন, ‘তখনো কিন্তু সে ১০-১৫০০০ হাজার আন্তর্জাতিক রান আর ৭০ সেঞ্চুরির মালিক। তখনো কেন সে এত পরিশ্রম করতো? কারণ সে জানত যদি সে নিজেকে ফিট রাখতে পারে তাহলে সে আরো বেশিদিন খেলতে পারবে। সে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত খেলতে পেরেছিলো।কারণ সে ছিলো আমাদের মধ্যে সবচাইতে ফিট।’
শচীনের সম্পর্কে আরেক চমকপ্রদ তথ্য দিলেন শেবাগ। নিজের চোখে না দেখলেও সেই তথ্য শুনে অবাক হয়েছিলেন তিনি। শেবাগ বলেন, ‘আমি এটি দেখেনি কখনো কিন্তু শুনেছি। তাঁর বাসা ছিলো ১০ তলায় এবং সে ওই ১০ তালায় প্রতিদিন ১০০ বার দৌড়ে উঠত এবং নামত। এমন দৌড়ানোর পর তাঁর পায়ের শক্তি ছিলো অবিশ্বাস্য।’