শচীনকে ঘিরে পাগলামি

শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট ঈশ্বর। ভারত তো বটেই গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আবেগের এক নাম। ক্রিকেট ছাড়লেও ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন প্রতিনিয়ত। কেবল বাইশ গজ নয়, মাঠের বাইরের নানা কর্মকান্ডে শচীন ভক্তরা শিরোনাম হয়েছেন বারবার। আসুন দেখে নেয়া যাক শচীনকে ঘিরে ভক্তদের নানা কর্মকান্ডের নমুনা। 

শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট ঈশ্বর। ভারত তো বটেই গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আবেগের এক নাম। ক্রিকেট ছাড়লেও ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন প্রতিনিয়ত। কেবল বাইশ গজ নয়, মাঠের বাইরের নানা কর্মকান্ডে শচীন ভক্তরা শিরোনাম হয়েছেন বারবার। আসুন দেখে নেয়া যাক শচীনকে ঘিরে ভক্তদের নানা কর্মকান্ডের নমুনা। 

  • দাবার টেন্ডুলকার

রাশিয়ার বিখ্যাত দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার পিটার ভিদলারকে ডাকা হতো ‘টেন্ডুলকার’ নামে। কেননা বিখ্যাত এই দাবাড়ু ভীষণ ক্রিকেট অনুরক্ত ছিলেন। আর ক্রিকেটের প্রতি তাঁর এই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। 

  • অবিকল শচীন

স্রেফ শচীনের সাথে চেহারার মিল থাকার সুবাদেই জীবন বদলে গিয়েছিল বালবীর চাঁদের। শচীনের সাথে বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ তো বটেই, ‘ক্যাসি মোহাব্বত’ নামের এক সিনেমায় স্বয়ং শচীনের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। 

  • বিয়ের জন্য ভালো পারফরম্যান্স

ভারতীয় ক্রিকেটে পার্থিব প্যাটেলকে ঘিরে একটি বহুল প্রচলিত গল্প আছে। তাঁর চাচা জগত প্যাটেল নাকি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পার্থিব জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করলেই কেবল বিয়ে করবেন তিনি। তাঁর এই টেকনিক কাজেও লেগেছিল। তবে এই পদ্ধতি সবার প্রথমে বেরিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের ভাই অজিতের মাথা থেকে। তিনি ভাইয়ের ভালো খেলার জন্য এমন শর্তই জুড়ে দিয়েছিলেন। 

  • পাঠ্যবইয়ে শচীন

ভারতের জাতীয় শিক্ষাক্রমেও যুক্ত করা হয়েছে শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী। দিল্লীর হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকেই জানতে পারছেন শচীনের জীবন সম্পর্কে। বইতে শচীনের একটি সাক্ষাৎকার সংযোজন করা হয়েছে এবং শচীন যেখানে ক্যারিয়ারে সফল হবার পেছনের মূলমন্ত্র জানিয়েছেন। এছাড়া মাস্টার ব্লাস্টার নামে কমিক বইয়েও সুপার হিরো হিসেবে আছেন শচীন। 

  • গাড়ির জন্য আলাদা পেট্রোল

শচীন টেন্ডুলকার একবার ভারতের বাইরে থেকে প্রায় এক কোটি রুপি মূল্যের ফেরারি মর্ডানা সিরিজের গাড়ি কেনেন। পরবর্তীতে সেই গাড়ি দেশে আনার পর ট্যাক্স এবং রোড সার্টিফিকেটের সমস্ত খরচ মওকুফ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। এছাড়া ভারত পেট্রোলিয়াম শচীনের গাড়ির জন্য আলাদা পেট্রোল বানিয়েছিল যাতে ভারতের রাস্তায় গাড়ি চালাতে কোন অসুবিধা হয়। সেই অকটেন-৯৭ পেট্রোল আজো ভারতের কোনো দোকানে পাবেন না কেউই। 

  • হেলমেটে জাতীয় পতাকা

শচীন টেন্ডুলকার যাতে নিজের হেলমেটে দেশের পতাকা নিয়ে নামতে পারেন সে কারণে দেশের আইন পর্যন্ত পরিবর্তন করেছিল ভারত সরকার। জানানো হয়, এখন থেকে চাইলে খেলোয়াড়রা চাইলে নিজের সরঞ্জামাদিতে জাতীয় দলের পতাকার লোগো ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সেটা অবশ্যই বেল্ট কিংবা অন্তর্বাসের নিচে হওয়া যাবে না। 

  • অমিতাভ বচ্চনকে ছাড়িয়ে যাওয়া

ভারতের সবচেয়ে অর্থ আয়কারী ব্যক্তিদের মাঝে একজন হলেন শচীন টেন্ডুলকার। এক সমীক্ষায় জানা যায় শচীন প্রতি মিনিটে ১,১৬৩ রুপি আয় করে থাকেন। অন্যদিকে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন প্রতি মিনিটে তাঁর অর্ধেকের চাইতে কম আয় করেন, মাত্র ৩৬১ রুপি। এছাড়া ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আয় ছিল মিনিটে ৫৭ পয়সা মাত্র।

  • আমের নাম যখন শচীন

উত্তরপ্রদেশের এক কৃষক একবার নতুন প্রজাতির আম উদ্ভাবন করার পরও শচীনের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর নামেই আমের নামকরণ করেছিল। মজার ব্যাপার হলো তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধে সেই প্রজাতির আম কখনো বাজারজাত করেননি হাজী কালিমুল্লাহ নামের সেই কৃষক। তিনি বলেন, ‘শচীন আমাদের জাতির নায়ক এবং সে অমূল্য। আমি এই প্রজাতির সমস্ত আম তাঁকে পাঠানোর চেষ্টা করবো।’

  • অজি প্রধানমন্ত্রীর মুগ্ধতা

শচীন টেন্ডুলকার ততদিনে পৌঁছে গেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে অজি প্রধানমন্ত্রী তাই শচীনের সেঞ্চুরি চাক্ষুসের আশায় করে বসেন বিতর্কিত এক মন্তব্য। নিজের দেশের প্রতি সমর্থন ছাপিয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁর আশা শচীন শততম সেঞ্চুরিটা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই করবেন।

অজি ক্রিকেটাররা সেসময়ে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছিল নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে। এমনকি অজি প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড সে সময়ে শচীনকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান সূচক খেতাবে ভূষিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও শেষপর্যন্ত সেটা আলোর মুখ দেখেনি।  

  • সংবর্ধনার বিড়ম্বনা

মুম্বাইয়ের মিউনিসিপ্যালিটি  বহুবছর ধরেই চাচ্ছিলো শচীন টেন্ডুলকারকে সংবর্ধনা দিতে। কিন্তু টানা এগারো বছর চেষ্টা করে গেলেও তাঁদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শচীনকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি একবারো চিঠির জবাব দেননি। এবারে আমরা তাঁকে শেষবারের মতো চিঠি পাঠাবো।’

  • ভারতীয় রাজ্যসভার সদস্য

খেলোয়াড়ি জীবনেই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভারতীয় রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন শচীন টেন্ডুলকার। যদিও খেলোয়াড়ি জীবনেই বেশি মনোযোগী থাকায় খুব বেশি রাজ্যসভায় আসেননি তিনি। অনেক সমালোচক অবশ্য শচীনকে স্থান দেবার বিরোধীতা করেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট ঈশ্বরের বিপক্ষে কোনো অভিযোগ ধোপে টিকতে তো!

  • মূর্তিতে ভুল

২০১৪ সালে সিডনির বিখ্যাত মাদাম তুসোর জাদুঘরে শচীন টেন্ডুলকারের মোমের মূর্তি উন্মোচন করা হয়। সেই মূর্তিতে ভারতের টি টোয়েন্টি জার্সি পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মজার ব্যাপার হলো খেলোয়াড়ি জীবনে কখনো সেই জার্সি পরেননি শচীন। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...