টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছিলো এতো অল্প বয়সে অধিনায়কত্বের ভার সামলাতে পারবেন তো শাহিন শাহ আফ্রিদি? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যিনি সফলতার লাল গালিচায় হাঁটছেন বছরখানেক ধরে সেই শাহিনের কাঁধেই এবার ছিলো পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দল লাহোর কালান্দার্সের দায়িত্ব ভার। অল্প বয়সে এতো চাপ সামলাতে গিয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ভাটা পড়তে পারে এমনটাও ধারণা করেছিলেন পাকিস্তানি সমর্থকদের একাংশ।
সাবেক পাকিস্তানি তারকা শহীদ আফ্রিদি (শাহিনের হবু শশুর) পর্যন্ত শাহিনকে নিষেধ করেছিলেন আপাতত এই গুরুদায়িত্ব না নিতে। আফ্রিদিকে তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি চাপ সামলাতে পারবো।’ নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন লাহোরের। আর দায়িত্ব পেয়ে প্রথম আসরেই করলেন বাজিমাত! ২১ বছর বয়সে অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম আসরেই লাহোর কালান্দার্সের হয়ে শিরোপা জিতলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি!
পিএসএলের ফাইনালে মুলতান সুলতান্সকে ৪২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পিএসএলের শিরোপা জেতে লাহোর। প্রথমবারের মতো দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরই এই ২১ বছর বয়সী তরুণ তারকার হাত ধরে শিরোপা জিতলো লাহোর। প্রথম চার আসরেই লাহোর ছিলো পয়েন্টস টেবিলের তলানিতে।
পঞ্চম আসরে ফাইনাল খেললেও ভাগ্য সহায় না হওয়ায় জিততে পারেনি শিরোপা। এরপর ২০২১ সালে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় দলটি। পিএসএলের ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অধরা ছিলো লাহোরের! অবশেষে শাহিনের হাত ধরেই সাফল্য ধরা দিলো লাহোরকে।
লাহোরকে শিরোপা জেতাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন এই পেসার। ১৩ ম্যাচে ১৯.৭০ গড়ে ৭.৫৭ ইকোনমিতে ২০ উইকেট নিয়ে এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন শাহিন! ফাইনালেও ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের পক্ষে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
একই সাথে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েন শাহিন। মাত্র ২১ বছর বয়সেই লাহোরের হয়ে শিরোপা জেতেন এই তরুণ অধিনায়ক। এর আগে ২০১২ সালে ২২ বছর বয়সে সিডনি সিক্সার্সের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিতেছিলেন অজি তারকা স্টিভ স্মিথ। সেই রেকর্ড গুড়িয়ে নিজের নাম লেখালেন শাহিন।
এইতো মাসে দুয়েক আগে ২০২১ আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতলেন এই পাকিস্তানি পেসার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছাতে দলের হয়ে দিয়েছেন নিজের সেরাটা। তাঁর দুর্দান্ত বোলিং স্পেলে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। টেস্টের বর্তমান সেরা পাঁচ বোলারের একজন তিনি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতো কম সময়ে এতো সাফল্যের পর অধিনায়ক হিসেবে নিজের সেরাটা দিতে পারবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবটা তিনি দিয়েছেন শিরোপা উঁচিয়েই!
বয়সটা মাত্র ২১! ক্রিকেটে এখনো পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। তবে এই অল্প সময়ে যে যশ, খ্যাতি আর নামডাক অর্জন করেছেন এই পেসার সে অবধি পৌঁছাতে পারে গুটিকয়েকই! সাম্প্রতিক সময়ে শাহিনের চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স আর সেরাটা দেওয়ার ক্ষুদা প্রমাণ করে তিনি বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড।
আপাতত পা মাটিতে রেখেই সফলতার আকাশে ডানা মেলতে চাইবেন এই তরুণ তারকা।