শক্ত প্রেমিক লালা

‘লালা,  বিশ্রাম করো। এই বয়সে এই  ভালবাস সহজ নয়!’ – টুইটারে বন্ধু শহীদ আফ্রিদির সাথে ছোট্ট একটা মজা করলেন বন্ধু শোয়েব আখতার। তাতেই যেন আবারও প্রমান হল যে – ‘বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা মাত্র’ – এর প্রমাণ পাকিস্তানি তারকা অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি কত লম্বা সময় ধরে দিয়ে গেছেন।

ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার বয়সেও দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছিলেন এই তারকা। ৪১ বছর বয়সে এসেও ২২ গজ মাতাচ্ছেন অনায়াসে। কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন, তাঁর বয়সটা আসলে ৪৫-এরও বেশি। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ কিংবা শরীরি ভাষায় বয়সের ছাপটাও বোঝার উপায় নেই। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইনজুরির সাথে পাল্লা দিয়ে লড়াকু সৈনিকের মতো দিনের পর দিন নিজের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে গেছেন আফ্রিদি।

গেলো বছরই জানিয়েছিলেন চলতি আসরই হবে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) আফ্রিদির শেষ আসর। পিএসএল শুরুর আগেও সংশয় ছিলো আফ্রিদি খেলবেন কিনা! ব্যাক ইনজুরিতে শরীরটাও যে আর সায় দিচ্ছে না। তবে ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সিদ্ধান্ত নিলেন খেলবেন। কিন্তু তিন ম্যাচেই শেষ হলো আফ্রিদির পিএসএলের শেষ আসর। হটাৎ ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় টুর্নামেন্টের মাঝ পথেই বিদায় জানিয়েছেন পিএসএলকে।

তবে এই দেখাই শেষ দেখা নয় সেটিও ইঙ্গিত দিয়েছেন এই পাকিস্তানি তারকা। ক্রিকেটকে এখনই বিদায় জানাচ্ছেন না তিনি! খেলে যেতে চান আরো কিছু সময়! সেটি কতদিন তা হয়তো খোদ জানেন না আফ্রিদিও। শরীর যতদিন সায় দিবে ততদিন হয়তো ২২ গজে মাতিয়ে যাবেন এই অলরাউন্ডার। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পিএসএলকে বিদায় বলার সময় সময় রিহ্যাবের পর পুনরায় ভক্তদের জন্য ক্রিকেটে ফেরার কথাও জানিয়েছেন এই এভারগ্রিন অলরাউন্ডার।

পিএসএলের পরই পর্দা উঠবে কাশ্মির প্রিমিয়ার লিগের (কেপিএল)। এর আগে দুই থেকে তিন মাস রিহ্যাবে থেকে পুরোদমে ফিট হবার আশা আফ্রিদির। আর সবঠিক থাকলে কাশ্মির প্রিমিয়ার লিগেই আবারো দেখা যাবে এই তারকাকে। চলতি আসরের পিএসএলে তিন ম্যাচে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৪ ওভারে ২২ রানে শিকার করেন ২ উইকেট।

২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ২০১৫ সালে ওয়ানডে ও ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানান এই অলরাউন্ডার। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) সহ পিএসএলে খেলেছেন নিয়মিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২০ বছর কাটানোর পরও বিদায় জানাননি ক্রিকেটকে। ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে আপন করে নিয়ে খেলে যাচ্ছেন বছরের পর বছর!

পেশোয়ার জালমির অধিনায়ক হিসেবে উদ্ভোধনী আসর থেকেই পিএসএলে যাত্রা শুরু আফ্রিদির। পরের বছর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও সেবার পেশোয়ারের হয়ে শিরোপা জেতেন এই তারকা। পরের আসরে করাচি কিংস এবং মুলতান সুলতানসের পর চলতি বছর খেলছিলেন কোয়েটা গ্লাডিয়েটরসের হয়ে। তবে পুরোনো ব্যাথা হটাৎ বেড়ে যাওয়ায় অবশেষে পুরো আসর না খেলেই পিএসএলকে বিদায় জানিয়েছেন আফ্রিদি।

এই ইনজুরিও নতুন নয়! ২৫-২৬ বছর বয়স থেকেই এই ইনজুরি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। ব্যাক ইনজুরি নিয়েই খেলে গেছেন টানা ১৬-১৭ বছর। ব্যাথা উপেক্ষা করেই খেলেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ৬ বছর আগে!

তাঁর বয়সী অনেকেই এখন কোচিং পেশায় কিংবা ক্রিকেটের সাথে ভিন্ন ভিন্ন কাজে নিযুক্ত। কেউ বা অবসরের পর পরিবারকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু ক্রিকেটই যে আফ্রিদির ধ্যান-জ্ঞান, ভালোবাসা। বয়সে ভারে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা যে কখনো করেননি সেটির প্রমাণ ২২ গজে তাঁর বার বার ফিরে আসা।

পিএসএল ক্যারিয়ারে বল হাতে ৪৭ উইকেট আর ব্যাট হাতে করেছেন ১৫১ স্ট্রাইক রেটে ৪৫৯ রান। ১৯৯৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেকের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে ২৭ টেস্ট, ৩৯৮ ওয়ানডে ও ৯৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন আফ্রিদি।

৩৭ বলে সেঞ্চুরি কিংবা ডাকের রেকর্ড, চার-ছক্কার ফুলঝুরি কিংবা ধংসাত্মক বোলিং স্পেল – আফ্রিদি যেনো সব পারেন। অবসর ভেঙে বার বার ফিরে আসা, ৪১ বছর বয়সেও ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রিকেটে ফেরার ইঙ্গিত – এসব যেনো আফ্রিদির পক্ষেই সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পর পিএসএল ক্যারিয়ারেও ইতি টেনেছেন আফ্রিদি। তবে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন কবে এমন প্রশ্ন আফ্রিদির জন্য বড্ড বেমানানই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link