ধরে নেওয়াই যায় এটাই সাকিব আল হাসানের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেই ২০০৭ সাল থেকে শুরু। এরপর টানা চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেন সাকিব। পঞ্চম বিশ্বকাপে তিনি আবার ফিরেছেন অধিনায়ক বেশে। এদফা নিজ হাতে একটা বর্ণিল স্মৃতি এঁকে যেতে চাইবেন নিশ্চয়ই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লিখতে গেলে শব্দ ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়। তাকে ঠিক কোন বিশেষণে জড়িয়ে নেওয়া যায় সেটা নিয়েও হতে পারে দ্বিধা। সাকিব সবকিছুর উর্ধ্বে। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সেই জায়গাটা তৈরি করে নিয়েছেন দারুণভাবে।
এবারের বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি রয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় যেমন নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি। ঠিক তেমনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকাতেও সবার উপরেই অবস্থান করছেন সাকিব আল হাসান।
চার বিশ্বকাপ খেলা সাকিবের নামের পাশে ১১৪৬ রান রয়েছে। সেই সাথে ৩৪টি উইকেটও রয়েছে বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডারের ঝুলিতে। এমন একজন ক্রিকেটার বাংলাদেশকে দিচ্ছেন নেতৃত্ব। তিনি অবশ্য ২০১১ বিশ্বকাপেও ছিলেন দলের অধিনায়ক। তবে পরিপক্কতার খানিক ঘাটতি ছিল।
প্রায় ১৬টি বসন্ত পার করেছেন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। দেশ-বিদেশের নানা ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলে বেড়িয়েছেন বছর জুড়ে। অভিজ্ঞতার ঝুলি কাঁধ থেকে নিশ্চয়ই ছুঁয়ে দেখছে মাটি। তিনি এখন আরও বেশি পরিণত। তিনি এখন আরও বেশি অভিজ্ঞ। তিনি দল ও প্রতিপক্ষের পরিস্থিতি খুব ভাল করেই বুঝতে পারেন।
সে অনুযায়ী দলকে পরিচালনাও করতে পারবেন তিনি। তবে তার আগে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করতে হবে তাকে। দলের প্রয়োজনে তাকে হাজির হতে হবে। এর আগেও তো বহুবার তিনি দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন। এদফা সামনে থেকেই দিতে হবে সেই নেতৃত্ব। গোটা দলকে যেমন গুছিয়ে রাখতে হবে, তাদেরকে সাথে নিয়েই এগুতে হবে সাকিবকে।
বাড়তি দায়িত্ব তো বটেই। তাছাড়া এই দলটার দায়িত্বভার একেবারেই শেষ মুহূর্তে পেয়েছেন সাকিব। সেদিক থেকেও একটু বাড়তি মনোযোগ দিতেই হচ্ছে তাকে। তিনি এ কথা অবশ্য স্বীকারও করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। তার আর দল কিংবা বিশ্বকাপ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। তিনি এদফা দিতে চান। তাছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপের সাকিব আল হাসানকে দেখতে না পারার সম্ভাবনাই প্রবল।
কেননা সেদফা নির্ভার হয়ে সাকিব নিজের খেলাটাই খেলেছেন স্রেফ। এবার গোটা দলের সেরাটা বের করে নিয়ে আসার দায়িত্ব তার কাঁধে। একটু বাড়তি চাপ তো থাকছেই। তবে চাপে দমে যাওয়ার মত চরিত্র সাকিব নন। বরং আগ্নেয়গিরির মতই বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকেন সাকিব।
তাছাড়া তার আক্রমণাত্মক মনোভাবও বাড়তি সংযোজন। ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের দিক থেকে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখতেই পছন্দ করেন। ব্যক্তিগত অর্জনের থেকেও দলগত সাফল্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। গোটা দলে নিশ্চয়ই এই বার্তাই ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। এখন মাঠে তার প্রতিফলনের অপেক্ষা।
বহু আগে থেকেই সাকিব ২০২৩ বিশ্বকাপে ভাল কিছু হওয়ার প্রত্যাশা করেন। অবশ্যই সেটা দলগতভাবে। সময় এসেছে। মঞ্চ প্রস্তুত। বর্ণিল এক চরিত্রের স্রেফ পারফর্ম করবার পালা। দিনশেষে চওড়া এক হাসি নিয়েই দেশে পা রাখতে চাইবেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের আগে হওয়া বিতর্কের জবাবটা মাঠেই দিয়ে দেবেন নিশ্চয়ই। যেমনটা করে এসেছেন দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে।