একটা বড় সবুজ মাঠ।
মাঠের মাঝে মাঝে পানি ছেটানোর মেশিন। হঠাৎ বেরিয়ে এলো মেশিনের মুখ। চারদিকে ঘুরে ঘুরে পানি ছেটাতে থাকলো। বিদেশি কোনো মাঠের দৃশ্য যেন।
না, আমাদের সাকিব আল হাসানের অ্যাকাডেমির ছোট্ট একটা ভিডিও। এটাই সাকিব পোস্ট করেছেন নিজের ফেসবুক পেজে। আর লিখেছেন – ‘স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে।’
হ্যাঁ, সাকিবের অনেকদিনের স্বপ্ন একটা পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করা। আর সেই স্বপ্ন এখন সত্যি হওয়ার কাছে পৌঁছে গেছে। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিব আল হাসান বা কারো পক্ষ থেকে অ্যাকাডেমি সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে ভেতরের সূত্র থেকে জানা গেলো, প্রস্তুতির প্রায় শেষ দিকে এই অ্যাকাডেমির অবকাঠামোগত কাজ। সব ঠিক থাকলে দ্রুতই শুরু হবে অ্যাকাডেমির কার্যক্রম।
আমরা এই অ্যাকাডেমির সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র থেকে তাদের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কেমন হচ্ছে অ্যাকাডেমিটি।
- কোথায় হবে অ্যাকাডেমি?
মূল ঢাকা থেকে খুব দূরে নয়। জায়গাটা পূর্বাচলের কাছে। পাশ থেকেই ৩০০ ফিট রাস্তা গেছে বলে এই জায়গাটাকে লোকে ‘৩০০ ফিট’ বলেই চেনে। কাঞ্চন ব্রিজের পাশ থেকেই চলে গেছে এই অ্যাকাডেমির রাস্তা। ইদানিং ঢাকার অনেক মানুষের ভ্রমণগন্তব্য এই জায়গায়।
এই পূর্বাচলের পাশে বেশ কয়েক একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে সাকিবের অ্যাকাডেমি। বেশ কিছু স্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে অনেকগুলো বাসের নিয়মিত রুট আছে এখানে। ফলে যাওয়াটা খুব বড় সমস্যা হবে না।
- কী কী থাকছে?
বেশ কয়েকটা অনুশীলনের মাঠ তো থাকছেই। থাকছে খেলা চলার মতো পূর্ণাঙ্গ মাঠও। এ ছাড়া বিশেষায়িত নেট থাকছে। থাকছে সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ইনডোর। এখানে একেবারে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে অনুশীলন করা যাবে। থাকছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত জিমনেসিয়াম।
এর সাথে থাকছে একটি আবাসিক ভবন, একটি রেস্টুরেন্ট এবং প্রশাসনিক ভবন।
- কত জন ক্রিকেটার ভর্তি হবে?
আপাতত সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। শুরুতে এক থেকে দেড়’শ জন ক্রিকেটার এখানে ভর্তি হতে পারবেন। এই সংখ্যাটা কালক্রমে বাড়তে পারে। তবে কতৃপক্ষ খুব বেশি সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে নন। আমাদের সূত্র বলছিলেন, ‘আমরা আসলে কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটির দিকে বেশি মন দিতে চাই। অনেক ভিড় করে ফেললে কোয়ালিটি ধরে রাখা কঠিন হবে।’
- কারা ভর্তি হতে পারবেন?
এখানে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াটা একটু কঠোর থাকবে। বিভিন্ন অ্যাকাডেমিতে যেটা হয়, চাইলেই ভর্তি করানো যায়। এখানে ব্যবস্থাটা ভিন্ন রাখতে চায় কতৃপক্ষ। তারা একটা পরীক্ষার ভেতর দিয়ে নির্বাচন করতে চায় ছাত্রদের।
ছাত্রদের একাধিক বয়সভিত্তিক গ্রুপে ভাগ করা হবে। তাদের দায়িত্বে থাকেবে বিশেষজ্ঞ কোচরা। প্রতিটি বয়সভিত্তিক গ্রুপের জন্য একজন করে প্রধান কোচ থাকবেন।
শুধু দেশি শিক্ষার্থী নয়, বিদেশিদের জন্যও এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকছে। কার্যত সাকিব মনে করেন,ম এখানে একটা আর্ন্তজাতিক অ্যাকাডেমি গড়ে উঠবে। এই অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা নিয়ে।
- কোচিং করাবেন কারা?
দেশের শীর্ষ এক কোচ থাকবেন পুরো কোচিংয়ের দায়িত্বে। তার অধীনে কয়েক জন বয়সভিত্তিক কোচ থাকবেন। দেশ থেকেই বাছাই করে নেওয়া হবে এই কোচদের।
প্রতিটি গ্রুপের প্রধাণ কোচের অধীনে আবার বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কোচ থাকবেন। এ ছাড়া মূল কাঠামোতে একেবারেই বিশেষায়িত স্পিন বোলিং কোচ, পেস বোলিং কোচ, উইকেটরক্ষন কোচ থাকবেন। থাকবেন এক দল ফিজিও, ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ।
তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্যাম্প ভিত্তিক বিদেশি বিশেষজ্ঞ কোচরা আসতে পারেন এখানে। এমনকি বিভিন্ন তারকা খেলোয়াড়কেও দেখা যেতে পারে।
- আবাসন ব্যবস্থা কেমন?
একটা হোস্টেল থাকবে এখানে। যে ভবনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এখনই সব ছাত্র আবাসিক হবেন না। চল্লিশ জন থাকতে পারবেন এই হোস্টেলে। এর মধ্যে কিছু খুব বিলাশবহুল কক্ষ থাকছে। থাকছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও।
- খরচ কেমন হবে?
এক বাক্যে বলা হলো, এটা একটু ব্যয়বহুল হবে। যিনি বলছিলেন, ‘সাকিব এবং বিনিয়োগকারীরা কোনো কোয়ালিটির সাথে আপোষ করতে চান না। ফলে এটা গড়েই তোলা হচ্ছে বিপুল ব্যয়ে। তাই এখানে কোর্স করতে বেশ খরচ হবে।’
যদিও টাকার পরিমানটা এখনও নির্ধারন হয়নি। তবে পরিমানটা প্রচলিত অ্যাকাডেমিগুলোর চেয়ে বেশ বেশিই হবে।
- সাকিবকে পাওয়া যাবে এখানে?
অবশ্যই। সাকিব নিয়মিত অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করবেন, তাদের টিপস দিবেন। যদিও শেখানোর কাজটা কোচরাই করবেন। আরেকটা ব্যাপার হলো সাকিব অফ সিজনে নিজের অনুশীলনটাও সম্ভবত এখানে করবেন।
এই জায়গাটাতে শুধু সাকিব না, আরও কিছু খ্যাতনামা ক্রিকেটারের অনুশীলন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হতে পারে শিক্ষার্থীদের। কারণ এখানে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য আলাদা একটা উইং রাখা হচ্ছে। ফলে কাঠামোর বাইরে, এমন কিছু ক্রিকেটারকে এখানে নিয়মিত অনুশীলনে দেখা যেতে পারে।
- কেন এই অ্যাকাডেমি?
সাকিব আল হাসান অনেকদিন ধরেই ক্রিকেটের জন্য একটা কিছু করতে চাচ্ছিলেন। সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন করে সেই সংস্থার মাধ্যমে কিছু চ্যারিটি এবং কিছু কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে একটা বিশ্বমানের অ্যাকাডেমি করা দেশের ক্রিকেটের জন্যই জরুরী। আর সেই মনে করা থেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে এই অ্যাকাডেমির কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আমি যেহেতু একজন ক্রিকেটার, আমার ইচ্ছা আমার একটি অ্যাকাডেমি হবে। বিশ্বমানের একটি অ্যাকাডেমি হবে। সেখানে শুধু বাংলাদেশই প্লেয়ার বানাবে না। অন্যান্য দেশ থেকেও আসবে এবং ওই অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করে যাবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁদের ধারণাটা তাহলে পরিবর্তিত হবে।’
- বিনিয়োগ করবে কারা?
সাকিব আল ফাউন্ডেশন একটা বড় বিনিয়োগ করছে এখানে। সেই সাথে বিনিয়োগ করছে মাস্কো গ্রুপ। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ একটি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এই গ্রুপটি এই অ্যাকাডেমিতে বিনিয়োগ করছে।