বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সবচেয়ে ‘আলোচিত’ মানুষগুলোর একজন সাকিব আল হাসান। তিনি ক্রিকেটের মাঠে থাকুন কিংবা না থাকুক তাঁকে নিয়ে আলোচনা থাকবেই। অনেক সময় সঙ্গী হয় বিতর্কও।
আগাগোড়া তিনি একজন ‘রহস্যঘেরা’ মানব। বলা উচিৎ ‘অতিমানব’। নিষেধাজ্ঞায় যাওয়ার আগে তিনি খেলোয়াড়দের আন্দোলনের অন্যতম ‘নেতা’ হয়ে সরব ছিলেন। এর আগে বিশ্বকাপ দিয়ে সময়েরই অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বনেছিলেন। তিনি যেখানে যাবেন, সেখানেই নতুন কিছু একটা ঘটবে তাই যেন ছিল নিয়তি।
নিষেধাজ্ঞার সময়টা তিনি আক্ষরিক অর্থেই গুহাবাসী হয়ে গিয়েছিলেন। আমেরিকায় পরিবারের সাথে থেকেছেন। ফিটনেস নিয়ে যতটুকু কাজ করা যায় বা সম্ভব সেখানে বসেই করেছেন। আইসিসির বিধি মেনে গণমাধ্যমের সামনে আসেননি বললেই চলে। আসলেও সেটা সংস্থাটির অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের আওতায়।
তবে, সাকিবকে ঘিরে অপেক্ষাটা ছিল। তিনি কি করছেন, কবে ফিরবেন – সেসব নিয়ে ছিল জল্পনা-কল্পনা। ফেসবুকে সাকিব কি করছেন, তাতেও ছিল সার্বক্ষণিক নজরদারী।
তিনি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই ফিরলেন। বিকেএসপতে চললো তাঁর নিবিঢ় অনুশীলন। দেশীয় কোচরা থাকলেন সাথে, রীতিমত মহাযজ্ঞ। তবে, রুদ্ধদ্বার সেই অনুশীলন। অনেক কসরত করেও সেই অনুশীলনের আদ্যোপান্ত জানা গেল না।
শ্রীলঙ্কা সফর ভেস্তে যাওয়ায় তিনি ফিরে গেলেন। যখন ফিরলেন রাজার বেশেই ফিরলেন। ফিরেই বিতর্ক। কোয়ারেন্টাইন বিধি না মেনে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কোনো একটা সুপারশপ উদ্বোধন করলেন লোকসমাগমে। কিছু গণমাধ্যম বিস্তর সমালোচনাও করলো। আলোচনা-সমালোচনা তার ফেরার শুরুতেও পিছু ছাড়লো না।
তিনি মিরপুরের শেরে বাংলায় আসলেন। এই ‘আসা’র সাথে অন্য যে কোনো সময়ের অনেক পার্থক্য। এবার তিনি ফিরেছেন নিষেধাজ্ঞা শেষ করে, মুক্ত পাখি হয়ে। ফেরার পর বোঝা গেল, একটা বছর হয়তো কেটে গেছে, কিন্তু সাকিব বা তার চারপাশ – কিছুই বদলায়নি।
মিরপুরে এসেই ঝড় তুললেন ক্যামেরার সামনে। চোখে লাল চশমা, প্রসারিত দুই বাহু – যেন কোনো সিনেমার নায়ক। রাজা ফিরেছেন তাঁর রাজত্বে। সেই ছবি ভাইরাল হল। ফেসবুক, টুইটার, পত্রিকা-টেলিভিশন ভরে গেল সেই ছবিতে।
কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়, সাকিব সময়ের সবচেয়ে সেরা ‘সেলেবল’ তারকা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের ‘ইলেভেন ইলেভেন’ নামের একটা প্রচারণায় ঘণ্টাখানেক লাইভে ছিলেন সাকিব। সেই সময় নাকি মাত্র ১৫ মিনিটেই সাড়ে আট কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে দারাজ।
সাকিব খেলবেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। ফিটনেস টেস্ট দিলেন। জানা গেল তিনি বিপ টেস্টে ১৩.৭ স্কোর গড়ে ফেলেছেন, এত স্কোর গড়া ছেলের হাতের মোয়া নয়।
তুমুল হইচই চললো সারা বেলা। মাঠের বাইরে থেকেও কি ভয়ানক পরিশ্রম করে এই ফিটনেস রাখা যায় – সেই নিয়ে আলোচনা হল। যেখান থেকে খবরটা বের হয়েছিল সেটাকে সত্যি মনে না করারও কারণ ছিল না।
সন্ধ্যা বেলাতেই পাশার দান পাল্টে গেল। কেউ কেউ বলতে শুরু করলো, বিপ টেস্টে সাকিবের স্কোরটা নাকি এত বেশি নয়। সাকিব নিজ মুখে কাউকে তার স্কোর বলেননি, কিন্তু তিনিই তো এখানে ‘সাবজেক্ট’। ফলে আবারো তিনি আলোচনায়। আর এবার তো আলোচনা রহস্যময়তায় রূপ নিল।
কোনো না কোনো ভাবে তিনি তাই আলোচনায় থাকবেন। আলোচনায় তিনি ছিলেন, আছেন, সামনেও থাকবেন। সময়ের সাথে মাত্রাটা যেন আরো বাড়ছে। যত দিন যাচ্ছে – তত বেশি তিনি সাকিবসুলভ হয়ে উঠছেন।
এরপর সাকিব জাতীয় দলের হয়ে ফিরলেন। ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেরা খেলোয়াড় হলেন। আবার আলোচনায় সাকিব। আবার সে সময়ই ইনজুরিতে পড়ে টেস্টে দূরন্ত একটা ইনিংস খেলার পরও মিস করলেন দেড় টেস্ট। সেই চোট থেকে সেরে ওঠার আগেই নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটি নিয়ে আবার আলোচনায়। এর মধ্যে আইপিএল খেলার জন্য টেস্ট না খেলতে চেয়ে ছুটির আবেদন করায় উঠলেন আলোচনার তুঙ্গে।
সর্বশেষ একটি সংবাদ মাধ্যমের লাইভে এসে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন। ফলে আবার বাংলাদেশ হয়ে উঠলো সাকিবময়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাই ঘটুক, আলোচনায় থাকবেন সাকিব আল হাসানই।
তিনি ঠিকই বলেছেন, তিনি না থাকলে ক্রিকেটটা বড় বোরিং হয়ে যেতো।