দায়িত্বটা আবারো তাঁর কাঁধেই উঠলো। এবার ক্যারিয়ারের একেবারে শেষবেলায়। বড়জোর আর কয়েকটা বছর বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন তিনি। আর এই সময়টায় অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা তাঁর কাছেই থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব আরেকবার সাকিব আল হাসানের কাঁধে। আর এটা নিয়মিতই চিত্র বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ব্যাটিং, বোলিং থেকে শুরু করে যে কোনো সমস্যারই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান হলেন সাকিব আল হাসান।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এই মুহূর্তে তাঁর চেয়ে যোগ্য লোক আর নেই। ব্যাট, বল ও ক্রিকেট মেধায় তাঁকে ছুঁতে পারে এমন আর কে আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় নাম, সবচেয়ে বড় আস্থাও তিনি। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও অনুপ্রেরণার নাম তিনি। ফলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া, পথ দেখানোর জন্য সবচেয়ে যোগ্য নামও এই সাকিব আল হাসানই।
তবুও সাকিব টেস্ট অধিনায়ক হবেন সেটা কিছুদিন আগে পর্যন্তও কারো কল্পনাতে ছিল না। কেননা সাকিবকে তো সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে পাওয়াই যাচ্ছিল না। নানা কারণেই সাকিব টেস্ট ম্যাচগুলো খেলছিলেন না। পরিবারকে সময় দিতে আমেরিকাও যাওয়া-আসা করতে হয় তাঁকে।
এছাড়া বয়সও একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে তিন ফরম্যাটে খেলাটা কঠিন। এছাড়া সাকিবের মত ক্রিকেটার যিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও নিয়মিত খেলেন। ফলে এই সময়ে এসে বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই একটা ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। আরো বেশিদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন বলে। ফলে সাকিবকে টেস্ট ক্রিকেটে আর নিয়মিত পাওয়া যাবেনা এমনটাই মনে হচ্ছিল।
এমনকি এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটাও তাঁর খেলা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। দ্রুতই আবার ফিট হয়ে ম্যাচের আগে মাত্র একদিন অনুশীলন করেই মাঠে নেমে পড়েছিলেন। এছাড়া গত ছয় মাসে লাল বলে বল করেও দেখেননি।
তবুও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে বল হাতে সেই পুরনো সাকিব। সাকিব তাঁর ক্যারিশমটা দেখিয়েছেন মূলত ক্রিকেট মেধা দিয়ে। ব্যাটসম্যানদের ফাঁদে ফেলে উইকেট গুলো তুলে নিয়েছেন। ফলে টেস্ট ক্রিকেটকে এই সাকিবকে অন্তত আরো কয়েকটা বছর পাওয়ার বাসনা চেপে বসেছিল।
ওদিকে উল্টোচিত্র ছিল অধিনায়ক মুমিনুল হকের ব্যাটে। কোনভাবেই রানের দেখা পাচ্ছিলেন না এই অধিনায়ক। টানা কয়েক ম্যাচে তো দুই অংকের স্কোরই করতে পারেননি। এছাড়া অধিনায়ক হিসেবেও তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এসবকিছুর মাঝে নিজে থেকেই টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। নিজের ব্যাটিংটাকে ফিরে পেতেই মুমিনুলের এমন সিদ্ধান্ত।
ফলে মুমিনুলের জায়গায় অধিনায়ক হিসেবে কে আসবেন এমন আলোচনায় সবার উপরেই তাঁর নামটা ছিল। তবে এর আগে সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) নিশ্চিত করেছেন এখন থেকে সব ফরম্যাটেই তাঁকে নিয়মিত দেখা যাবে। ফলে সাকিবকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়ায় আর কোন বাঁধা ছিল না।
এই নিয়ে অবশ্য তৃতীয় বারের মত টেস্ট অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেলেন সাকিব। প্রথম ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাশরাফির ইনজুরির কারণে তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে আবার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় তাঁর কাঁধে। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজই। এরপর নিষেদ্ধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত তিনিই অধিনায়ক ছিলেন।
এবার আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে সাকিবের অধিনায়ক যাত্রা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তৃতীয়বারের মত এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তিনি। তবে এবার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে পরিণত সময়ে দায়িত্বটা পেয়েছেন।
ফলে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এবার প্রত্যাশার চাপটাও বেশি। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ খুব ভালো করছেনা সেটা সত্য তবে একটা পক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ আছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন পারফর্মও করছেন। ফলে সাকিবের সামনে দায়িত্ব থাকবে দ্রুত দলটাকে গুছিয়ে ফেলা। এরপর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা, বাইশ গিজে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা।
সবমিলিয়ে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে আর হয়তো খুব বেশি সময় খেলবেন না। তবে অধিনায়ক হিসেবেই সাকিবের বিদায় হোক সেটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় চাওয়া। ওদিকে সাকিবের পর পরবর্তী অধিনায়ক প্রস্তুত রাখার জন্য ঘোষণা করা হয়ছে সহ-অধিনায়কের নামও। টেস্ট ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান লিটন দাস থাকছেন সাকিবের ডেপুটি হিসেবে।