একচোখা-একরোখা মাস্টারক্লাস

নাসুম আহমেদের সাথে সাকিব আল হাসানের নিশ্চিতরুপেই রয়েছে অনেক স্মৃতি। তবে এমন বেধম প্রহার হয়ত কোনদিনই ভুলতে পারবেন না নাসুম। তিন খানা ছক্কা ও দুই খানা চার- নাসুমের এক ওভারেই যেন দেখা মিলল সাকিবের ‘মাস্টারক্লাস’।

সাকিব আল হাসান এই নামের সমার্থক হয়ে যেতে পারে একরোখা। অদম্যও যুক্ত হতে পারে। অতুলনীয় তো তিনি বহু আগে থেকেই। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে তিনি সেই অনবদ্য সাকিব হয়েই ধরা দিলেন। চট্টগ্রামের রান উৎসবের প্রথম দিনে সাকিবও যুক্ত হলেন। দেখিয়ে গেলেন একচোখেও খেলা যায় দূর্দান্ত ইনিংস।

ইংলিশ বোলার লুক উড এক ওভারের ব্যবধানে রংপুর রাইডার্সের দুই ওপেনারকে ফেরালেন সাজঘরে। সাকিব দাঁড়িয়ে থেকে রিজা হেন্ডরিকসের আউট হওয়া দেখলেন। আর মনে মনে হয়ত ছক কষে নিলেন। তারপরই তিনি হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। খুলনার বোলারদের মনোবল ভেঙে চুরমার করে দিলেন।

২২২ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে একটা ধ্বংসলীলা চলল। সাগরিকার স্টেডিয়াম স্রেফ মনোমুগ্ধকর সেই ব্যাটিং প্রদর্শনী গোগ্রাসে হজম করে গেল। চট্টগ্রামের দারুণ উইকেটের বরদান দুই হাতে লুফে নিলেন সাকিব। সম্ভবত নিজের শরীরের বিরল প্রতিকূলতা সামলে এমন ইনিংস সাকিব কমই খেলেছেন।

চোখের সেই সমস্যাও যেন দমাতে পারল না এদিন। নাহিদ রানা, লুক উডদের গতিতে খানিকটা অস্বস্তি হচ্ছিল বটে। কিন্তু নাসুম, নাহিদদের বাউন্ডারি ছাড়া করে সেই অস্বস্তি টের পেতে দেননি বা-হাতি অলরাউন্ডার। মারকুটে এক ইনিংসে করে ফেললেন এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি।

২০ বলে ৫০ করে শেষ অবধি তিনি থেমেছেন ৬৯ রানে। তবে ৩১ বলের এই ইনিংসটিতে সাকিব নিজের অভিজ্ঞতাই যেন নিঙড়ে দিলেন। সমান সমান বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি মেরে আনন্দে ভাসিয়েছেন চট্টলার দর্শকদের। ছয়টি বিশাল ছক্কা মেরেছেন তিনি। সেই সাথে দারুণ দক্ষতায় ছয়টি চারের মারও এসেছে তার ব্যাট থেকে।

এদিন অবশ্য সাকিবকে থামানো যেত হাফসেঞ্চুরির আগেই। ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা নাহিদ রানা, অতি সাধারণ এক ক্যাচ ফেলেছেন সাকিবের। তখন সাকিবের রান ১৬ বলে ৪৬। এরপরের ১৫ বলে আরও ২৩ রান যুক্ত করেছেন সাকিব। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ শেখ মেহেদীকেও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন সাকিব।

মেহেদীর সাথে মাত্র ৪৮ বলে ১০৯ রানের জুটি গড়েছেন সাকিব। সেই জুটিতেই বরং আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন মেহেদী। তাতে করে তিনিও খুঁজে পেয়েছেন ফিফটির পথ। সাকিবের সেই ইনিংসের আগ্রাসী বার্তা ছড়িয়েছে রাইডার্সদের ব্যাটিং অর্ডারে।

সাকিব চাইলেই সবকিছুকে প্রভাবিত করতে পারেন। তিনি প্রতিটা মুহূর্ত যেন পঙ্গপালের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকার দীক্ষাটাই দিয়ে যাচ্ছেন। দুয়োধ্বনির স্লোগানের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেও গেয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব জয়গান। তোয়াক্কা তো তিনি কখনোই করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link