আর্থার কিং-এর সেই ম্যাজিশিয়ান। মার্লিন। ব্রিটিশ রূপকথার জাদুকাঠি হাতে কয়েকশো বছর হাঁটছেন। অবশ্য এ রূপকথাটাই জরুরি ছিল দ্যা আসেজে। ২০০৫। হেনরি প্রায়ার। ১৫ বছর ধরে বানিয়েছেন এক যন্ত্র।
স্পিন বোলারের মগজের সমস্ত জারিজুরি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভরা থাকবে তার মেমারিতে। নাম মার্লিন। জাদু আখ্যানের রসদ মজুত। ইংলিশ ব্যাটারদের লাগাতার প্র্যাকটিস। গ্যাটিং-এর স্টাম্প ছিটকানো, আসলে ব্রিটিশ শিড়দাঁড়ায় আঘাত।
বদলা। হল না। ওয়ার্নিকে আটকাতে হাজার দশেক বল খেলেছিলেন। ব্রিটিশ ব্যাটাররা। মার্লিনের সামনে। অথচ, আশেজে ওয়ার্ন তুলে নিলেন ৪০ টা উইকেট। ঘটনাটা জানা। আমাদের মধ্য কৈশোরে শেন ঐ বুঝিয়ে দিলেন যতই অঙ্ক কষো বাপু, মানুষ আর রাজনীতি পরিবর্তনশীল।
ঘুরবে। মন। ভাবনা। ভাঙবে। পিচ। বিশ্বাস। হাসতে হাসতে শেন বলবেন – ‘ইউ কান্ট আফোর্ড টু লিভ আ লাইফ উইথ রিগ্রেটস!’
অথচ রিগ্রেটস-এর কতকিছু ছিল। ক্লাস টেস্টে অঙ্কে ৪৯। ১ নাম্বারের আফশোস। বিকেলে ঠিক ঠাক মিডব্যাট না হওয়ায় কানা লাগা ক্যাচ। সে সব সময়ে ফিরে গিয়ে, ননডাস্ট ইরেজার দিয়ে আমরা মুছে দিতে পারিনি এইসব রিগ্রেটস। সুভাষ চক্রবর্তীর রোয়াব। পালটা মমতা ব্যানার্জি। স্ট্রেটকাট। জামাবদল নেই।
দল বলতে যা বুঝতাম- ফ্রন্ট বলতে যা বুঝতাম, যত কাদা মাখা সব ধুলো ধুলো দেহ- পাশাপাশি-ভুলেও। ঠিক-এও। কোথাও গিয়ে নিরুপম সেনের সামনে মদন মিত্রের পাল্টা। পার্টিজান। ক্যাডার। সোমনাথ চ্যাটার্জি এক্সপেলড। আমরা কেউ ভাবিনি লোকটা দল বদলাবে। অন্য কোথাও যাবে। যায়ওনি। বিশ্বাস।
আটপৌরে বাংলার রাজনীতি। দেওয়াল লিখন। খবরের চ্যানেল। খেউর যে বিনোদন বোঝেনি কেউ তখনও। রাগ। বিচ্ছেদ বলতে – ‘মা জানতে পেরে গেছে। আর দেখা হবে না, আমাকে ভুলে যা…’; এত সমীকরণের মাঝে কী সাবলীল, সরল জুঁইফুল।
সময়টা থাকবে না। বুঝিনি। দ্রুত বদলাল। এয়ারে কাটল। মাঠের ভাষায় – ‘বসে গেল বলটা…’। আচমকা দেখা গেল নিজেরাই আউট। কোথাও কেউ নেই। অথবা আছে। ছদ্মবেশে। বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যামের মতো বাঁক নিয়ে। দ্বিতীয় দশক। স্টিভ ওয়াহর ড্রেসিং রুমের কবিতা পড়া আর স্টিফেন ফ্লেমিং-এর হাসির ভেতর দিয়ে যারা এল তারা কতকিছু যে ফেলে এল আগের দশকে।
গুগলি। লেগস্পিন। আদতে চুক্কি। বোকা বানানো। মাইক গ্যাটিং-এর স্টাম্পের ওপর আমাদের এই সময়টা। যাদের ফ্রন্ট ভাবছি, তারাই লেগস্পিনের আঙুল লুকিয়ে গুগলি ফেলছে। মাঠের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন শেন ওয়ার্ন। শৈশব-কৈশোর ডিঙোনো সে সব নাইন্টিজের চোখ, চ্যানেল নাইন, সাদা সিগালের ঝাঁক, ‘কাম অন শ্যেন, কাম অন…’।
চিৎকারে আড় ভাঙা কান সবকিছুতে অভ্যস্ত হচ্ছে। অভ্যস্ত হচ্ছে শেন ওয়ার্নের সামনে জীবনের সমস্ত অসহায়তায়। যত দিন যায়, ফিকে হয়ে আসে মুখের ভেতর থেকে বিগ বাবুলের মিষ্টি গন্ধটুকু; আরও স্পষ্ট হয় সে আপ্তবাক্য- ‘শেন ওয়ার্ন মরিয়া প্রমাণ করিলেন, সে মরে নাই!’