দলের মধ্যে নেই কোন স্বস্তি। সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিরোধের গুঞ্জন ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। তবে এসবের মাঝেও যেন টলেনি নাজমুল হোসেন শান্তর মনোযোগ। সবকিছুকে একেবারেই নিজের আড়াল করলেন অনায়াসে। ঠিক যেমনটি তিনি করে এসেছেন সেই সব দুর্ষহ সময়গুলোতে। সমালোচনার কালো রাত পেরিয়ে পারফরমেন্সের ধ্রুব আলোয় পরিণত হয়েছেন তিনি।
বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে আরও একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসই খেলে গেলেন তিনি। তার খেলা ৭৬ রানের এই ইনিংসটিতেও অবশ্য হয়েছে রেকর্ড। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়া ম্যাচে এখন শান্তই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রায় ২৫ বছর আগের এক রেকর্ড নতুন করে নিজের করে নিলেন শান্ত।
১৯৯৮ কোকাকোলা ট্রাই নেশন সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। নিজের সেই অভিষেক ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বুলবুল। এরপর রঙিন পোশাকে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব শুরু করবার সাথে সাথে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন, হাবিবুল বাশার সুমন ও সাকিব আল হাসানও।
এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শান্ত। রেকর্ড করে উচ্ছ্বসিত হতেই পারেন শান্ত। তবে বিষাদ এসে হানা দিচ্ছে নিশ্চয়ই। কেননা আরও একটি শতকের পথেই ছিলেন তিনি। এই বছরে ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা তিনি পেয়ে যেতেই পারতেন। মঞ্চ অন্তত প্রস্তুতই ছিল। বিলাসী এক শট খেলেই নিজের উইকেটটি হারিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
৩১.২ বলের সময় অযথাই রিভার্স সুইপ খেলার প্রচেষ্টা চালান। তাতে ব্যাটের সাথে ঘটেনি বলের সংযোগ। বল ছুয়ে দেখে প্যাড। তাতে আম্পায়ারের মাঠের বাইরে যাওয়ার নির্দেশ স্পষ্ট। তবুও রিভিউ নিলেন শান্ত। তাতে অবশ্য কোন লাভ হয়নি। ৭৬ রানেই তাকে ফিরতে হয়েছে প্যাভিলনে। আক্ষেপটা তার শতক পাওয়ার চাইতেও দলকে একটা ভাল অবস্থানে রেখে আসতে না পারা।
এদিনও বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় দিয়েই শুরু। শুরুর তিন ওভারের মাঝেই নেই দুই ওপেনার। ৩৫ রানে নেই তিন উইকেট। এমন এক পরিস্থিতি থেকে শান্ত দলকে একটু স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন একটা প্রান্ত থেকে। প্রায়সময়ই ১০০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। ৮৪ বলের এই ইনিংসে ১০টি চার মেরেছেন শান্ত।
যদিও অধিনায়ক হিসেবে আরও একটু দায়িত্ব নিয়েই খেলত হতো তাকে। কেননা সপ্তম উইকেট হিসেবে তিনি আউট হতে হতে বাংলাদেশের লেজের দিকের ব্যাটারদের চলে আসতে হয়েছে বাইশ গজে। আরেকটু সময় নিয়ে নিজের ইনিংসটি চাইলেই শান্ত দীর্ঘায়িত করতে পারতেন। কিন্তু তেমনটি হয়নি।
শান্ত ফিরে যাওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যেই প্যাভিলনে ফিরেছে বাংলাদেশের দূর্বলতম টেলএন্ডার ব্যাটাররা। ১৬৮ রানে শান্ত আউট হওয়ার পরবর্তী তিন রান তুলতেই বাংলাদেশের তিন উইকেটের পতন ঘটে। ১৭১ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশ। দলের নাজেহাল অবস্থার মাঝেই আরও এক অস্বস্তিকর সংগ্রহ।
তবে এসবের মাঝে নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের জন্যে একটু প্রশান্তির সন্ধান করতেই পারেন। ব্যাট হাতে বছরটা তার কাটছে বেশ। এশিয়া কাপের মাঝে ইনজুরি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়ত সেখানে হয়ে যেতে পারতেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একমাত্র শান্তই রয়েছেন ফর্মে। দলের বাকিদের অবস্থা যাচ্ছে তাই। তাইতো বিশ্বকাপে একটু বাড়তি দায়িত্ব নিয়েই খেলতে হবে শান্তকে। সে জায়গায় নিশ্চয়ই বিলাসী হতে চাইবেন না তিনি।