লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটে গুজরাট জায়ান্টস আর ভিলওয়ারা কিংস মধ্যকার ম্যাচ। গুজরাট জায়ান্টসের হয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ততক্ষণে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন ক্রিস গেইল। তবে ফিফটি পূরণের পরই রাহুল শর্মার একটি বল খেলতে গিয়ে ব্যাটে বলে সংযোগ না ঘটায় প্যাডে লাগে গেইলের। সাথে সাথেই বোলারের আবেদন। আম্পায়ার তর্জনী উঁচিয়ে জানিয়ে দিলেন, আউট।
ক্রিস গেইল রিভিউ নিলেন বটে। তবে তাতে কাজ হলো না। টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেল, আম্পায়ার তাঁর নিজ সিদ্ধান্তে সঠিক ছিলেন। জানেন কি, উইকেটের এ প্রান্তে থাকা সেই আম্পায়ার কে ছিলেন? তিনি সাথিরা জাকির জেসি, বাংলাদেশের সাবেক নারী ক্রিকেটার।
জেসির পরিচয় অবশ্য অনেক। বহমুখী প্রতিভার এই মানুষটি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের একদম শুরুর সময়ের সারথি ছিলেন। ক্রিকেট ছাড়ার পর ধারাভাষ্য দিয়েছেন। টেলিভিশনে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রূপেও দেখা গেছে তাঁকে। এরপর আম্পায়ার হিসেবেও পদচারণাও হয়েছে তাঁর। সেই ধারাবাহিকতায় লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করছেন তিনি।
আম্পায়ারিংয়ে দীক্ষার শুরুটা অবশ্য এক যুগ পেরিয়ে ১৪ বছর আগের। ২০০৯ সালে আম্পায়ারিং কোর্স করেছিলেন জেসি। এরপর ১৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০২২ সালে এসে তিনি মাঠে নামেন আম্পায়ার হিসেবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্তির দিনে সাবেক ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে প্রদর্শনী ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন জেসি।
এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি বছরের জুনে নারী ইমার্জিং এশিয়া কাপে একমাত্র নারী বাংলাদেশি হিসেবে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
আম্পয়ার হওয়ার আগে অবশ্য বেশ কিছু ম্যাচে ধারা বিবরণীও দিয়েছেন জেসি। কাজ করেছেন বেশ কিছু ক্রিকেট শো’তেও। আর এভাবেই ক্রিকেট থেকে অবসরের পরও ক্রিকেট নিয়েই নিজেকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি৷
বাংলাদেশের হয়ে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি জেসির। দুটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টিতেই আটকে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে বাংলাদেশ নারী দলের শুরুর সময়ের তারকা তিনি।
শচীন টেন্ডুলকারকে আদর্শ মেনে ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ শুরু জেসির। তবে ক্রিকেট টা যখন মনে লালন করছেন, তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নারীদের জন্য মঞ্চটাই তৈরি হয়নি। তবুও বাইশ গজের লড়াকু যোদ্ধা হওয়ার লক্ষ্যে ২০০১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন জেসি। প্রথম দিকে ক্রিকেট নিয়ে জেসিকে সবাই নিরুৎসাহিত করলেও, তিনি এগিয়ে যান নিজের পুষে রাখা স্বপ্নের পথেই।
আর সেই স্বপ্ন একদিন বাস্তবে এসে ধরাও দিল। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো গড়া বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন লালমনিরহাটের এই মেয়ে।
প্রথমে জাতীয় নারী ক্রিকেট লিগে খেলে নজর কাড়েন জেসি। অলরাউন্ডার হিসেবেই জাতীয় দলে সুযোগ পান এরপর ২০০৭ সালে মালয়েশিয়াতে খেলতে যান এসিসি চ্যাম্পিয়নশিপে। বাংলাদেশ সেবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জেসিকে।
নারী ক্রিকেট দলের ‘প্রথম’ এর গল্পে জেসি যেন এরপর থেকে প্রথম হওয়ার পথেই ছুটেছেন। ক্রিকেট ছাড়ার পর দেশের প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তাঁর হাত ধরেই ছেলেদের তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কোনো নারী আম্পায়াররা। এছাড়া চলতি বছরেই ভারতের একটি বিশেষ ম্যাচেও আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন জেসি।
ছিলেন ক্রিকেটার, এরপর হয়েছেন ধারাভাষ্যকর। উপস্থাপক রূপেও হাজির হয়েছেন বেশ ক’বার। সর্বশেষ আম্পায়ার হিসেবেও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তিনি। সাথিরা জাকির জেসি, নামটাই যেন এ সময়ের আরেক অলরাউন্ডারের সমার্থক রূপ।