সকালের সূর্য নাকি পুরো দিনের কথা বলে। কিন্তু ক্রিকেটে এমন কিছু ভাবার সুযোগ নেই। অনেক দুর্দান্ত সূচনাময় ক্যারিয়ারও থেমে গিয়েছে অল্পতে, আবার অনেকে হতাশাজনক শুরুর পরেও সময়ের সাথে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়।
এই যেমন, ওপেনার মাধব আপতে। সাত ম্যাচ শেষে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি মাধবকে। অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজার পথের শুরুটা ছিল সাদামাটা, কিন্তু এখন তিনি জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই অনিশ্চয়তার মাঝেও কয়েকজন ক্রিকেটার আলাদাভাবে নজর কাড়েন। তাঁদের খেলার ধরন, উন্নতি সবকিছুতেই বিশেষত্ব থাকে। এদের দেখলেই মনে হয় এই বুঝি ফুল ফুটে সৌরভ ছড়াবে।
শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার ছিলেন এমনই। বর্তমান ভারত দলেও আছেন ‘বিশেষ প্রতিভা’। একজন ঋষাভ পান্ত, আরেকজন শুভমান গিল।
এই দুই তরুণের উপর ভরসা রাখা যায়, বিশ্বাস রাখা যায়। অনুকূল পরিবেশ আর যথেষ্ট সময় পেলে এরাই হতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিঙ।
মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরী হিসেবে দ্রুতই অবশ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রিশাভ পান্ত। সে হিসেবে খানিকটা সময় লেগেছে শুভমান গিলের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিরাট কোহলির পর গিল-ই ব্যাটিং লাইনআপের বড় নাম হবেন, সেটা বলা যায়।
চলতি বছরের এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে ভারতের স্বপ্ন পূরণের অন্যতম কান্ডারি শুভমান গিল। ওয়ানডে ফরম্যাটে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন এই ডানহাতি; রোহিত শর্মার সঙ্গে তাঁর কম্বিনেশনও বেশ প্রশংসনীয়।
ব্রিসবেন টেস্টে মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউডদের বিপক্ষে ৯১ রানের ইনিংস খেলে প্রথমবার লাইমলাইটে উঠে এসেছিলেন শুভমান গিল। এরপর থেকে যতবারই সুযোগ এসেছে ততবারই সেটা কাজে লাগিয়েছেন এই উদীয়মান তারকা।
শুভমান গিল সবচেয়ে বড় শক্তি বোধহয় তাঁর টাইমিং। শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিদের মত করেই আলাদা ব্যক্তিত্ব নিয়ে গড়ে উঠেছেন ব্যাটার শুভমান। গ্যাপ খুঁজে স্রেফ টাইমিংয়ের জোরে বাউন্ডারি – এটিই সম্ভবত গিলের ব্যাটিংয়ের বড় আকর্ষণ।
ফরম্যাট বদলালেও বদলায় না শুভমান গিলের ব্যাটিং স্টাইল। সংস্করণ ছোট হলেও নতুন নতুন শট বের করতে হয় না তাঁকে। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করেই বোলারদের শাসন করেন তিনি; প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেও ফিল্ড সেটআপ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেন।
লেগ সাইডে ফ্লিক কিংবা গ্ল্যান্স, অফ সাইডে ড্রাইভ – শুভমান গিল উইকেটের চারপাশেই খেলতে জানেন। তাই তিনি ক্রিজে থাকলে রান আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে – ঠিক যেমনটা বিরাট, শচীনদের ব্যাটিংয়ে দেখা যায়।
ডট বল যথা সম্ভব কমানো শুভমানের গিলের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারছেন বলেই বিরাট কোহলির পর আরো একজন রান মেশিন খুঁজে পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে ভারত।
শচীন, শেবাগদের প্রজন্মকে যেভাবে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল রোহিত, বিরাটরা তেমনি তাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে কত কত নতুন মুখ। আর উদীয়মান তারকাদের দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভমান গিল, হয়তো একদিন ভারত জাতীয় দলের আর্মব্যান্ডও থাকবে তাঁর হাতে।