জাসপ্রিত বুমরাহর স্লোয়ার ডেলিভারি উপভোগের বস্তু এবং দুর্লভও বটে। প্রতিদিন তাঁর এমন ডেলিভারি দেখা যায় না, কিন্তু যখন দেখা যায় তখন ব্যাটার কিংবা দর্শক কারোই উপভোগ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না। শন মার্শ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, স্টিভ স্মিথের মত বাঘা বাঘা ব্যাটাররাও বোকা বনে গিয়েছিলেন।
সর্বশেষ ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্টে রেহান আহমেদ, বেন ফোকসকে যেভাবে আউট করেছেন এই পেসার তাতে বিস্মিত হতেই হয়। সবচেয়ে বিস্ময় বোধহয় এটিই যে, দেশের দ্রুততম পেসারের সিগনেচার ডেলিভারি স্লোয়ার।
তাঁর অ্যাকশন, রান আপ, রিলিজ পয়েন্ট সবকিছু এতটাই জটিল যে গতির পরিবর্তন বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় পান না ব্যাটাররা। ফলে একটু আগে ১৪৫ কিমি/ ঘন্টার বল মোকাবিলা করা একজন ব্যাটার ১১৫ বা ১২০ কিমি/ঘন্টার বলে সমস্যায় পড়েন। তাঁকে আসলে নিজের মাসল মেমোরির বিরুদ্ধে গিয়ে খেলতে হয় তখন। ফলে ব্যাটিংয়ের শেপ নষ্ট হয়ে যায়।
এই ডানহাতি ব্যাটারের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেন, তাই তো ফুটওয়ার্ক বিশ্বাস ঘাতকতা করে এবং অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না তাঁদের সামনে। এক মিনিট আগে যিনি গতির ঝড়ে কাঁপিয়ে দেন, পরের মিনিটে সেই তিনিই আবার স্লো-পয়জনের মত ধীরেসুস্থে আঘাত হানেন।
এই যেমন ২০১৮ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময়, মার্শ যে বলে আউট হয়েছিলেন সেটার গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় ১১৪ কিমি। অথচ এর আগের বলটি ঘন্টায় ১৪০ কিমি গতিতে এসেছিল। হুট করে ২০/২৫ কিমি পার্থক্যের সাথে মানিয়ে নেয়াটা সত্যি কঠিন।
বুমরান কখনোই স্লোয়ার করতে গিয়ে হাতের গতি কমান না, রান আপে তারতম্য করেন না কব্জির অবস্থানে পরিবর্তন আনেন না। তাঁর স্লোয়ারে কোন প্যাটার্ন নেই, অ্যালগরিদম নেই। আণুবীক্ষণিক চিহ্ন ছাড়া অনুমান করার কোন উপায় রাখেন না তিনি।তাই একজন ব্যাটার কেবল ডেলিভারির পরেই বুঝতে পারেন কি আসতে যাচ্ছে এবার।
তাঁর ধীর গতির বলগুলো এত কার্যকর হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ বোধহয় যে সেগুলো কম ব্যবহার করা। মার্শকে আউট করা বলটি ছিল ওই টেস্ট সিরিজে মাত্র দ্বিতীয় স্লোয়ার। এই তারকার আসলে একই ঘরানার বল খুব বেশি করার দরকার পড়ে না; কেননা ভান্ডারে বাউন্সার, ইয়র্কার, সুইং, কাটার সহ প্রায় সব ধরনের অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন তিনি।
জাসপ্রিত বুমরাহর কোন দুর্বলতা নেই, তাঁর কোন শক্তির জায়গাও নেই। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো বল করতে পারেন তিনি। আধুনিক ক্রিকেটের পরিপূর্ণ বোলারদের একজন ভাবা যায় তাঁকে।