হাবিবুর রহমান সোহানের জন্য এত বড় মঞ্চ, এত তারকার ভীরে নিজেকে আবিষ্কার করা এই প্রথম। প্রথম দিনের অনুশীলনের শুরুতে তাই তিনি যেন একটু ইতস্তত। কী করবেন, কী বলবেন এসব ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে দ্রুতই সোহানের সেই জড়তা ভাঙল, সেই জড়তা কাটানোর দায়িত্বটা তাঁর সতীর্থরাই নিল। সোহান মিশে গেলেন তাঁর দলের সাথে, হয়তো সোহানের জীবনটাও মিল গেল ক্রিকেট জোয়ারে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) হাবিবুর রহমান সোহান এবারই প্রথম সুযোগ পেলেন। তাঁকে দলে টেনে নিয়েছে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দল খুলনা টাইগার্স। দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট গুলোতে তাঁর ঝড়ো ব্যাটিং নজর কেড়েছিল এই কোচের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য সোহান হতে পারেন ট্রাম্পকার্ড এমনটাই মনে করেন ক্রিকেট পাড়ার অনেকেই।
তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ এখনো খুব বেশি পাননি এই পাওয়ার হিটার। তবে যতটুকু পেয়েছেন তাতেই নিজের জাত চেনানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। মারকাটারি ব্যাটিং করে প্রথম বিভাগ টি-টোয়েন্টি লিগে রান করেছেন প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে। এরপর ওয়ানডে ফরম্যাটেও তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫০ ছুঁই ছুঁই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন পাওয়ার হিটার যেন সোনার হরিণ। ঘরোয়া দলগুলোই হোক কিংবা জাতীয় দল কোথাওই খুঁজে পাওয়া যায় না লোকাল পাওয়ার হিটার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের ভোগার অন্যতম কারণও এই পাওয়ার হিটিং। সেজন্যই সোহানের মত একজন ব্যাটার পেয়ে উচ্ছ্বসিত খুলনা টাইগার্স।
এবারের বিপিএলে দলটার ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন এই ছেলেটাই। সেজন্যই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে খুলনা। সিরাজগঞ্জের এই ব্যাটার গত এক বছর ধরেই এই ফরম্যাটে ঝড়ো ইনিংস খেলে আসছেন। তবে সবার নজরে আসার জন্য তিনি বেঁছে নিয়েছিলেন রাজশাহীর একটি লোকাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টকে।
লোকাল টুর্নামেন্ট হলেও সেখানে খেলেছিলেন দেশ-বিদেশের অনেক তারকা ক্রিকেটারই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে সোহানই হয়েছিলেন সেই লিগের সেরা ব্যাটার। রাজশাহীর স্টেডিয়ামে তাঁর চার-ছয় নজর কেড়েছিল গনমাধ্যমের, নজর কেড়েছিল ক্রিকেটপাড়ার অনেকেরই।
আর এবার বিপিএল খেলতে এসেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দলে। প্রথমদিনের অনুশীলনে তামিম মাঠে আসতেই নিজের পরিচয় দিতে তামিমের কাছে যান সোহান। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভাইয়া, আমার নাম হাবিবুর রহমান সোহান।’ আর তামিম সোহানের পিঠে হাত রেখে বললেন, ‘তোমাকে চিনিতো আমি।’ এরপর কোচ সুজনের দিকে তাকিয়েও সোহানকে নিয়ে কিছু একটা বললেন তামিম ইকবাল। ব্যাস, তাতেই যেন একটু হাসি ফুটল সোহানের মুখে। ইতস্তত বোধটাও যেন ভাঙতে শুরু করলো।
এরপর ইয়াসির আলি রাব্বি, সাব্বির রহমান, মুনিম শাহরিয়াররাও কাছে টেনে নেন সোহানকে। তাঁদের আড্ডায় স্থান হয়ে যায় নতুন এই ছেলেটারও। পরিচয় পর্ব শেষে সোহান দেখিয়েছেন নিজের ব্যাটিং স্কিলও। এখানে অবশ্য সোহানের কোন জড়তা ছিল না। নেটে তিনি প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক।
ফলে বিপিএলের ম্যাচ গুলো নিশ্চয়ই মাঠে নামার সুযোগ হবে তাঁর। আর সেখানেও নিজের এই ব্যাটিং স্টাইল ধরে রাখতে পারলে সহজের সবার নজরে আসতে পারবেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলও তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সোহানের ধাঁচের একজন ব্যাটসম্যানকেই খুঁজছে। সোহান সুযোগটা কাজে লাগাক। সোহানের নামটা মানুষের মনে গেঁথে যাক। তাঁকে যেন আর কোথাও গিয়ে নিজের নাম বলতে না হয়।