সৌম্য-লিটন, অপাত্রে অমূল্য ধন

বৈশাখ মাস শুরু হওয়ার ঠিক আগে দিয়ে, আমের মুকুলে ছেয়ে যায় আমগাছ। বেশ নতুন এক সম্ভাবনার বার্তা দেয়। তবে হুট করেই কোন এক কালবৈশাখি ঝড়ে, গাছ থেকে ঝরে যায় সম্ভাবনার সেই মুকুল। ঠিক তেমনি করেই যেন ঝরে যাচ্ছেন লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার।

না তাদের জীবনে কোন ঝড় বয়ে যায়নি। যে ঝড় তাদেরকে ছিটকে দিচ্ছে কক্ষপথ থেকে। বরং তারা চিরায়ত নিয়ম মেনে টিকে থাকার লড়াইটুকু করতে পারছেন না। আবার করতে চাইছেন না- বললেও কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল বলা হয় না।

কেননা ঠিক যে পরিমাণ সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বেলে তারা এসেছিলেন জাতীয় দলে, সেই প্রদীপের জ্বালানি এখন প্রায় শূন্যের কোটায়। একটু বাড়তি অক্সিজেনে জ্বলে ওঠে সেই প্রদীপ কালেভদ্রে, দারুণ এক পারফরমেন্স হয়ে। আর সেটুকু তৃপ্তি নিয়েই অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন ধরে।

শেষ কবে লিটন দাস সেঞ্চুরি করেছিলেন, তা যেন মনে করা দায়। টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরিটা এসেছিল প্রায় ২২ মাস আগে। ২০২২ সালের মে মাসে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওয়ানডে সেঞ্চুরির বয়স হয়ে গেছে প্রায় ২৫ মাস। তাছাড়া গেল এক বছর জুড়েই নিদারুণ হতাশ করে চলেছে লিটনের ব্যাট।

ওই যে স্ফুলিঙ্গ হয়ে মাঝে মধ্যেই জ্বলে ওঠে, দপ করে আবার নিভে যায় প্রত্যাশার আগুনে জল ঢেলে। ২৫ এর ঘরে গড় নিয়ে তিনি দিব্যি খেলে যাচ্ছেন একটানা। অন্যদিকে সৌম্য সরকার আসা-যাওয়ার মাঝেই থেকে যাচ্ছেন। যদিও আগের ওয়ানডে সিরিজেই ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রান করেছিলেন। এরপর আর ধারাবাহিকতা ছুঁয়ে দেখে না তাকে।

সৌম্যর ব্যাটে রান, তাও এ এক অমাবস্যার চাঁদ। হ্যালির ধুমকেতু বললেও ভুল বলা যায় না খুব একটা। তবুও এই দুই ব্যাটারের ভরসাতেই চলছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওপেনিং। ওই যে সম্ভাবনার ছল দেখিয়ে এখনও তাদের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশন।

এমনকি সৌম্য সরকার যে জাতীয় দলের বাইরে যাচ্ছেন, আবার ফিরছেন দলে- এর মাঝে যে ঘরোয়া ক্রিকেটে আহামরি কোন পারফরম করছেন তাও নয়। তবুও তিনি ফিরছেন বারেবারে। অন্যদিকে লিটনের যে ফুরসত নেই জাতীয় দল থেকেই। মাঝারি মানের ইনিংস খেলেই দিব্ব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন দিন।

অথচ এই জায়গাটায় একটু হলেও ধারাবাহিক সুযোগের দাবি রাখেন এনামুল হক বিজয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে তো ধারাবাহিকভাবেই পারফরম করছেন তিনি। স্রেফ টেকনিক জনিত কারণে তাকে দিনের পর দিন অবহেলা করবারও তো বিশেষ কারণ নেই। টেকনিকই যদি শেষ কথা হতো তবে বীরেন্দ্র শেহবাগ থেকে যেতেন পর্দার আড়ালে।

তাছাড়া সম্ভাবনার বুলি আওড়ানোর হয়ে গেছে প্রায় এক দশক। তবুও যে ধারাবাহিকভাবে লিটন-সৌম্যরা পারছেন না ভরসা হতে। তরুণ কাওকে তো এখনই বাজিয়ে দেখার সুযোগ। তানজিদ হাসান তামিমের মত তরুণ ক্রিকেটার, বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে যার। তিনিও থেকে যাচ্ছেন ব্রাত্য। তবে কি পারফরমেন্সকে ছাপিয়ে যায় সৌন্দর্য?

দিনশেষে একরাশ হতাশা নিয়েই টুঁটি চেপে ধরতে হয় সে স্বপ্নের- যেখানে ছিল সৌম্য-লিটনের দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং। মুগ্ধতা ছড়ানোর সাথে সাথে আগ্রাসনের বিনোদনের সেই আক্ষেপের জলে আর কতদিন ডুবে থাকবে বাংলাদেশ? এবার অন্তত মুক্তি হোক। লিটন-সৌম্যরা নিজেদের ঢেলে সাজিয়ে আবার ফিরুক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link