হায়দ্রাবাদের পরিকল্পনা আর বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক

চার ম্যাচের তিনটি ম্যাচই হেরেছে তারা। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা বাদে টানা তিনটি ম্যাচেই হেরেছে গেল আসরের রানার্সআপ দলটি।

২৮৬ রান স্কোরবোর্ডে তুলে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আসর শুরু করেছিল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। দলটা নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হেরেছে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে। অথচ, তাদের রান উৎসব করবার কথা, প্রতিপক্ষকে চার-ছক্কার স্টিমরোলারে পিষে মেরে ফেলার কথা। কিন্তু তেমনটা আর হচ্ছে কই!

চার ম্যাচের তিনটি ম্যাচই হেরেছে তারা। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা বাদে টানা তিনটি ম্যাচেই হেরেছে গেল আসরের রানার্সআপ দলটি। বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের কাছেও সম্ভবত নেই এই পরাজয়ের কোন প্রকার উত্তর।

দলে রয়েছে মারকুটে সব ব্যাটার। ট্রাভিস হেড থেকে শুরু এরপর অভিষেক শর্মা, ঈশান কিষাণ, হেনরিখ ক্লাসেন, নিতীশ কুমার রেড্ডি মত ব্যাটাররা রয়েছেন। বাউন্ডারি হাকাতে পারলেই যারা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। এমন তুখোড় ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে প্রথম ম্যাচেই একটা বার্তা দিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে তারা। সবাই ধরেই নিয়েছিল এবারের আইপিএলে সানরাইজার্সকে হারানো হয়ে যাবে ভীষণ কষ্টসাধ্য।

কিন্তু ততটাও কি কষ্টকর হচ্ছে তাদের হারানো? ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতার কাছে পাত্তাই পায়নি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুতেই দুই উইকেট তুলে নেয় হায়দ্রাবাদের বোলাররা। কিন্তু এরপরের পুরো গল্প জুড়ে কলকাতার ব্যাটারদের বীরত্ব গাঁথা। ভেঙ্কেটেশ আইয়ার ও আঙকৃষ্ণ রাঘুবানশির অর্ধশতকের কারণে বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০ রানের সংগ্রহ জড়ো করে কলকাতা।

হায়দ্রাবাদের জন্যে এই লক্ষ্যমাত্রা মামুলি হওয়ারই কথা। কিন্তু হয়েছে উলটোটা। প্রচণ্ড খাবি খেয়েছে হায়দ্রাবাদের ব্যাটাররা। তাতে করে বড় ব্যবধানের পরাজয়ই বরণ করতে হয়েছে প্যাট কামিন্সদের। এর আগের ম্যাচেও হেরেছে তারা। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে মোটে ১৬৩ রানের পুঁজি পায় হায়দ্রাবাদের বোলাররা। মোহাম্মদ শামি, হার্শাল প্যাটেল, প্যাট কামিন্সের সাথে উইয়ান মুল্ডারের মত বোলাররা থাকা সত্ত্বেও চার ওভার ও সাত উইকেট বাকি থাকতেই ম্যাচ হেরেছে হায়দ্রাবাদ।

তার ঠিক আগের ম্যাচে হায়দ্রাবাদের ঘরের মাঠে লখনৌ সুপার জায়ান্টস ধরাশায়ী করেছে প্যাট কামিন্সদের। সে ম্যাচে ১৯০ রানের সংগ্রহ জয়ের জন্যে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচটাও হেরেছে তারা ২৩ বল আর পাঁচ উইকেট বাকি থাকতে। পুরো দলটা যেন অপেক্ষায় আছে ব্যাটিং ইউনিটের পাঁচজন ব্যাটারের উপর। তাদের অতিমানবীয় ইনিংসের উপর ভর দিয়েই ম্যাচে জেতার পরিকল্পনা হায়দ্রাবাদের।

কিন্তু বাস্তবতা আর পরিকল্পনার ছকের মাঝে রয়ে যাচ্ছে বিস্তর ফারাক। প্রতিদিনই ব্যাটাররা ঝড় তুলতে পারবেন না বাইশ গজে। মাঝে মাঝে দলের অন্য ইউনিটকেও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাছাড়া হায়দ্রাবাদের পরিকল্পনাতেও রয়েছে ভীষণ গলদ। কার্যকর স্পিনারের অভাবটা ভালভাবেই টের পাচ্ছে তারা। যেখানে প্রায় প্রতিটা দলই তাদের বিপক্ষে স্পিনের চালে করছে বাজিমাত। শুধু মাত্র একটা ইউনিটের বলে যে ম্যাচ জেতা যায় না- তার এক অনন্য নিদর্শন তৈরি করে দেখাল এবারের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। এখন দেখবার পালা শিক্ষা গ্রহণ করে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, নাকি ব্যাটাররা প্রত্যাশার চাপে নুইয়ে পড়ে।

Share via
Copy link