আত্মবিশ্বাসের পুঁজি এখন শিরোপা

দলটির সংকটকে শক্তিতে পরিণত করার এক অশেষ ক্ষমতা আছে। অস্থিরতায় জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হওয়া দেশটির গল্প গুলো কেবলই নিরাশার, হতাশার, ভঙ্গুরতার। কিন্তু সব টানপোড়েনকে একপাশে রেখে ক্রিকেটেই যেন সব আশার আলো খুঁজে নেয় তাঁরা। বাইশ গজের সাফল্যের মাধ্যমে দেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষকে এক চিলতে সুখের অনুভূতি পাইয়ে দেয়ার তাগিদটা তাই দাসুন শানাকা, রাজাপাকশে, হাসারাঙ্গাদের মাথায় সব সময়ই থাকে।

শ্রীলঙ্কার কথা বলছিলাম তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন। সেই শ্রীলঙ্কা, এবারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। লংকানদের এশিয়া কাপের সফরটা রূপকথার মতই যেন। এশিয়া কাপের পর্দা উঠানো ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে দুর্দান্তভাবে পরাজিত হয়ে অনেকটা বাদ পড়ার পথে ছিল তাঁরা। কিন্তু সেই পরাজয়ের গল্পটাকে দ্রুতই বাংলাদেশের সাথে জয়ে পরিণত করে তাঁরা।

তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সংকটকে শক্তিতে পরিণত করতে মাঠে এগারো অবতার দুর্দান্ত টিম গেম খেলে ফাইনাল অবধি পৌঁছে গেলেন। তারপর শিরোপাটাও নিজেদের করে নিলেন।

দরজায় কড়া নাড়া টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে তাই শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাস যে সবার ঊর্ধ্বে থাকবে তা তো জানা কথা। গা থেকে চ্যাম্পিয়নের গন্ধটা এখনও কাটে নি। সদ্য এশিয়ার সেরা বনে যাওয়া শ্রীলঙ্কা যে বিশ্বসেরা হওয়ার মিশনে কোমর বেঁধেই নামতে যাচ্ছে তাই।

এবার না হয় সংকটকে পুঁজি না করে অর্জনকে পুঁজি করেই মাঠের লড়াইয়ে বুক চিতিয়ে নামবে লঙ্কানরা। আত্মবিশ্বাসী দাসুন শানাকা তো বলেই বসলেন, যদি আমরা মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিই এবং আমাদের পরিকল্পনাগুলি কার্যকর করতে পারি, আমি নিশ্চিত যে আমরা বিজয়ী হতে পারব।’

২০২২ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে অস্ট্রেলিয়া যাত্রার আগে চূড়ান্ত সংবাদ সম্মেলনে শানাকা বলেন, ‘এবার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা অবশ্যই বেশি (গত বিশ্বকাপের চেয়ে)। এমনকি গত বিশ্বকাপেও, আমি অনুভব করেছি যে আমাদের অন্তত সেমিফাইনালে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খেলোয়াড় হিসেবে আপনি দলে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছেন।’

আসছে ১৬ অক্টোবর নামিবিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের অংশ হিসেবে কার্ডিনিয়া পার্ক মাঠে খেলতে নামবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এর প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কান দল। উদ্দেশ্য এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা নেয়া এবং ওই কন্ডিশন অনুযায়ী নিজেদের তৈরি করে নেওয়া। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাঁরা ক্যান্ডিতে দক্ষতার উপর নিবিড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শেষ করেছে। বিশ্বকাপের মিশনে সেরা প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামছে তাঁরা।

শ্রীলঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেন, ক্যান্ডিতে অনুশীলন ক্যাম্পে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই ভালো প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। আমি চিন্তিত ছিলাম যে কিছু ছেলে থাকবে যারা এশিয়া কাপ জেতার পর কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু তাঁরা সেরকম ছিল না। সবাই সমান অনুশীলন করেছিল। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আসন্ন বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারব।’

মাঠের প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরো একটি জাতি। যারা এক চিলতে সুখ খুঁজে নিবে মাঠের পারফরমেন্স থেকে। তবে শ্রীলঙ্কা দল ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে। সদ্য জেতা চ্যাম্পিয়ন তকমা এবং দিশেহারা কোটি মানুষের বুভুক্ষু দৃষ্টির চাহনিই লঙ্কানদের সবথেকে বড় অস্ত্র হিসেবে তাঁদের বাইশ গজে হুংকার দিতে বাধ্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link