একটি দল ও একটি স্বপ্নের শিরোপা জয়

একটা স্বপ্নযাত্রা। কল্পনার দূর-দূরান্তেও হয়ত ছিল না। তবে দিনশেষে হাসির রোল। একটা আনন্দ উল্লাস। বীর বেশে নিজদেশে পদার্পণ। শূন্য হাতে ফেরার কথা। তবে হাতটা জুড়ে স্বর্ণালী এক শিরোপা। দাসুন শানাকার মুখটা জুড়েই তো হাসি। একটা গর্বের হাসি। তবে আদৌ তো বিশ্বাস ছিল না মিলবে অধরা শিরোপা।

দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধুকছে শ্রীলঙ্কা দল। সে পরিস্থিতি থেকে এখনও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে তেমনটা বলার সুযোগ নেই। তবে খানিকটা আলাপ তো হতেই পারে এশিয়া কাপ জয়ের পেছনের কিছু ফ্যাক্টর নিয়ে। একটা দল টুর্নামেন্টের শুরুতেই সহ্য করেছে তুচ্ছতা। র‍্যাংকিংও নেই তাঁদের পক্ষে। শুরুর ম্যাচটায় একেবারে যাচ্ছে তাই ভাবে হার। এত সবকিছুর পরও শেষ অবধি চমকটা দেখিয়ে দিল দল।

চমকটা দেখাতে পেরেছে কারণ একটা দল হয়ে খেলতে পেরেছিল তাঁরা। শুরুটা অবশ্য তাঁদের ওপেনারদের হাত ধরেই হয়েছে। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই লংকান ওপেনাররা দলকে একটা ভাল শুরু এনে দিয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কা হেরেছে একটি ম্যাচ। আর সেটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সে ম্যাচটা বাদে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই স্বস্তিদায়ক শুরুটা করে দিয়েছেন শ্রীলংকার ওপেনাররা। কুশাল মেন্ডিস সেদিক থেকে খানিকটা বেশিই মারকুটে ভঙ্গিতে ব্যাট করেছেন।

প্রথম পাওয়ারপ্লের পূর্ণ ব্যবহারটা করেছে তাঁদের ওপেনিং ব্যাটাররা। সেই সাথে শেষ দিকে ভানুকা রাজাপাকশের ব্যাট প্রয়োজনের সময় জ্বলে ওঠা শ্রীলঙ্কার পক্ষে কাজ করেছে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই। ভানুকা শেষের দিকে খুব দ্রুত রান তুলতে পেরেছেন। তাঁর পাওয়ার হিটিং সক্ষমতা আখেরে শ্রীলঙ্কাকে ১০-১৫টা রান বেশি করবার সুযোগ করে দিয়েছে। ভানুকা ভরসা জুগিয়ে গেছেন। সেই সাথে ফাইনাল ম্যাচটা শ্রীলঙ্কার হাতের মুঠোতেই রাখতে তাঁর অবদানটা কোন অংশেই কম নয়।

শেষ দিকে ১৪১ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন লংকান ব্যাটাররা। ঠিক এই দিকটায় বাকিদের থেকে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। নিজেরা শেষের দিকে রান আদায় করে নিলেও প্রতিপক্ষকে কোন প্রকার ছাড়ই দেয়নি লংকান বোলাররা। টুর্নামেন্টের শুরুতেই দুশমন্থ চামিরার ইনজুরির কারণে ছিটকে যান। অনভিজ্ঞ একটা পেস আক্রমণ নিয়েও শেষ দিকে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে রেখেছিল দাসুন শানাকার দল। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের হাত খুলে ব্যাট করবার সুযোগটাই দেননি থিকসানা, মাদুশাঙ্কারা।

পুরো একটা দল হিসেবেই শ্রীলঙ্কা পারফরম করেছে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই। এবারের এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার অথবা সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটাররা শ্রীলঙ্কান নন। তবে তাঁদের প্রতিটা ব্যাটার অথবা বোলার নিজেদের কাজটা মন দিয়ে করে গেছেন। একটা ইউনিট হিসেবে শ্রীলঙ্কা খেলেছে। ভানুকা রাজাপাকশে, কুশাল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কারা রান করে গেছেন।

আবার বোলারদের মধ্যে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, চামিকা করুনারত্নে ও প্রমদ মাদুশানরা উইকেট শিকার করেছেন। রান আটকে রাখার চেষ্টা করে গেছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে। কোন একজনের উপর ভর করে অন্তত জয়ের আশা করেনি শ্রীলঙ্কা। বরং তাঁদের প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেদের কাজটা করে গেছেন। দলগতভাবে তাঁরা জয়টা ছিনিয়ে এনেছেন।

আর এই পুরো দলটাকে একত্রে গেঁথে রাখার কারিগর দাসুন শানাকা। একটি কঠিন মুহূর্তে তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এই দলটার উপর ভরসা করেছেন, সময় দিয়েছেন। শেষমেশ তিনি বিশ্বাস জুগিয়েছেন যে তাঁরা পারবে। তাঁরা জিতে নেবে এবারের এশিয়া কাপ। শেষ অবধি তিনি সেটাই দলকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন। নিজেও ব্যাট ও বল হাতে পারফরম করেছেন।

শেষমেশ, একটা দল হয়ে পারফরম করলে যে কোন অসাধ্য সাধন করা সম্ভব সেটাই আবার প্রমাণ করে দিলো গোটা শ্রীলঙ্কা দল। তবে ভাগ্যটাও হয়েছে বেশ সুপ্রসন্ন। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই টস ভাগ্য তাঁদের পক্ষে এসেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে কুশাল মেন্ডিসের বেশকিছু ক্যাচ ছুটে গেছে। ফাইনালের দিনেও একই চিত্রের মঞ্চায়ন হয়েছে। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার জন্যেই যেন ছিল এবারের এশিয়া কাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link