১৫ মাস এমনিতে হয়তো আহামরি কোনো সময় নয়। কিন্তু নামটা যখন স্টিভেন স্মিথ, তখন অপেক্ষার প্রহরটাকে একটু বেশিই বলা যায়। অস্ট্রেলিয়ান এই কিংবদন্তির জন্য ১৬ ইনিংস আর ১৫ মাস সেঞ্চুরির অপেক্ষা করাটা একটু দীর্ঘ বিরতিই বটে। গলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে আবারো জানান দিয়ে রাখলেন, বর্তমান সময়ের ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ এর চাইতে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে রান পাওয়া, ধারাবাহিকতা, টেকনিক আর টেম্পারমেন্ট এ অনেকটাই এগিয়ে আছেন তিনি।
সেঞ্চুরির স্বাদটা বোধহয় ভুলতেই বসেছিলেন তিনি। অন্তত সাবেক অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের বেলায় এটা বলাই যায়। ৮৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৬০ এর ওপর গড় নিয়ে খেলে চলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কিছু দিনের অফ ফর্মে ৬০ এর নিচে নেমে আসা গড়টা বোধহয় বেমানান ই লাগছিলো স্মিথ এর পাশে।
শ্রীলঙ্কার গলের প্রচণ্ড গরম আর বিরুদ্ধ কন্ডিশনও স্মিথকে টলাতে পারেনি একটুও। ১৬ চারে সাজানো তার ২৭২ বলে ১৪৫ রানের ইনিংস ছিলো একদম নিখুঁত, পরিপাটি। লম্বা ইনিংসে কোনো চান্স দেননি বোলারদের। স্মিথের ইনিংস যেন ঠিক স্মিথের মতই। রান পেতে স্মিথের মত ক্ষুধার্থ আর কেউ থাকেন কিনা সে নিয়ে তর্ক হতে পারে। প্রথম টেস্টে রান আউট হবার পর তার মুখে ফুটে ওঠে চরম হতাশা। আর এবার সেঞ্চুরির পর সেলিব্রেশন যেন ছিল স্বস্তির, ১৫ মাস পর সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়ার।
সীমিত ওভারে তার চাহিদা কমছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও ডাক পড়ে না তেমন এখন। কিন্তু টেস্টে অপ্রতিরোধ্য স্টিভেন স্মিথ। টেস্টে ব্যাটিং এর ধরণ আর এপ্রোচ দিয়ে প্রতিপক্ষের মনোবল গুড়িয়ে দিতে স্মিথের জুড়ি মেলা ভার।
বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্মিথের আগ্রাসী মনোভাবে আঘাত করেছে প্রবলভাবে। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর গত তিন বছরে দেখেছেন ক্যারিয়ারের কঠিন রূপটাও। নিষেধাজ্ঞার পর অ্যাশেজ এ ফিরেছিলেন প্রবলভাবে।
৬০ এর নিচে নেমে যাওয়া ক্যারিয়ার গড়টাকে ৬০ এর ওপরে নিয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের ২৮ তম সেঞ্চুরির মাধ্যমে। ছুঁয়ে ফেললেন ইংল্যান্ডের জো রুটকে। ফ্যাবুলাস ফোর এর মধ্যে টেস্ট সেঞ্চুরিরতে যৌথভাবে সবার ওপরে স্মিথ আর রুট। চরম অফ ফর্মে থাকা ভারতের বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি একটা কম।
গলের প্রচণ্ড গরমে ১ দিনের বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করেছেন স্মিথ। ইনিংস শেষে ছিলেন নট আউট। পুল,সুইপ,কাভার ড্রাইভ,কাট-সব শটই খেলেছেন নিখুঁতভাবে। বোলার, ফিল্ডারদের কোনো চান্সই দেননি। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ব্যাটিংকে বদলে দেবার সামনের দিকের নায়ক স্মিথ।
উপমহাদেশের মাটিতে তার চেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বর্তমান অস্ট্রেলিয়া দলে নেই। ক্যারিয়ারের শুরুতে স্পেশালিষ্ট লেগ স্পিনার স্মিথ আধুনিক ক্রিকেট ব্যাটিং এর পুরধা হয়ে উঠেছেন দিনের পর দিন। গলের এই বিরুদ্ধ কন্ডিশনে এই অসাধারণ ইনিংসে আবারো জানান দিলেন, কেন তিনি ফ্যাবুলাস ফোর এর বাকি তিনজনের চেয়ে টেস্ট ফরম্যাটে ঢের এগিয়ে।
গলের টেস্টটা স্মিথ মনে রাখতেই চাইবেন। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়া দল নয়। কারণ, স্বাগতিক লঙ্কান বাহিনীর কাছে অজিরা রীতিমত নাস্তানাবুদই হয়েছে। হেরেছে ইনিংস ও ৩৯ রানের ব্যবধানে।