ক্রিকেটে ওপেনিং একটি বিশেষায়িত জায়গা। ওপেনারদের নতুন বল কিংবা পিচের আদ্রতা সামলে টিকে থাকলেই শুধু হয় না পাশাপাশি ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার জন্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিংও করতে হয়। ফলে ব্যাটিং লাইন আপে ওপেনারদের কাজটা বেশ কঠিন।
তবে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনারদের দায়িত্বের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে পাওয়ার প্লে ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করাটাই মূল লক্ষ্য। ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন বলের ধাঁর সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জ। দুটি কাজ আলাদা বলেই হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সফল কয়েকজন ওপেনারকে টেস্টে খুব কমই ওপেন করতে দেখা গিয়েছে। ওয়ানডের সেরা সেই ওপেনারদের নিয়েই এই আয়োজন।
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)
ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের আক্রমণাত্মক ও অন্যতম সফল এক ওপেনারের নাম অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে ওপেনিং কে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন এই অজি ওপেনার। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবমিলিয়ে গিলক্রিস্টের ঝুলিতে আছে ৯৫৯৫ রান। এর মধ্যে ওপেন করেই করেছেন ৯২০০ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মোট ২৫৯ ইনিংসে ওপেন করে ৩৬.৫১ গড়ে এই রান করেন তিনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এতটা সফল হবার পরেও টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে ওপেন করতে দেখা যায়নি বললেই চলে। ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১টি মাচেই ওপেন করেছিলেন তিনি। সেখানে ২০ রান করেছিলেন। তবে টেস্টে সাত নম্বরে ব্যাট করে অনেক মূল্যবান ইনিংস খেলেছেন গিলক্রিস্ট। মূলত টেস্টের দ্বিতীয় নতুন বল ব্যবহার করার জন্যই তাঁকে সাতে ব্যবহার করত অজিরা।
- সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যানের নাম সৌরভ গাঙ্গুলি। টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দারুণ সফল ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তবে দুই ফরম্যাটে তাঁর দায়িত্ব ছিল ভিন্ন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের হয়ে মোট ২৩৬ ইনিংসে ওপেন করেছেন। সেখানে ৪১.৫৭ গড়ে করেছেন ৯১৪৬ রান।
ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটেও ১১৩ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৭২১২ রান। তবে টেস্টে ওপেন করেছেন মাত্র একটি ইনিংস। টেস্টে সাধারণ ৫ নম্বরে ব্যাট করতেন ভারতের সাবেক এক অধিনায়ক। কম্বিনেশনের কারণে কখনো কখনো ৬ নম্বরেও ব্যাট করেছেন। সেখানে শচীন, রাহুল দ্রাবিড়দের সাথে দারুণ সব জুটি গড়েছেন তিনি।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
ভারতের ও ক্রিকেট বিশ্বের আরেক কিংবদন্তির নাম শচীন টেন্ডুলকার। ওয়ানডে ক্রিকেটের সফলতম ওপেনারও তিনি। ভারতের হয়ে ৩৪০ ম্যাচে ওপেন করে ৪৮.৩০ গড়ে করেছেন ১৫১৩০ রান। সৌরভ কিংবা শেবাগের সাথে ওপেনিং করতে নেমে ভারতকে উড়ন্ত শুরু এনে দিতেন শচীন।
তবে টেস্ট ক্রিকেটে চিত্রটা ভিন্ন ছিল। টেস্টে চার নম্বরই ছিল তাঁর নিয়মিত জায়গা। লম্বা ক্যারিয়ারে মাত্র একবারই টেস্ট ওপেন করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ইনিংসে ১৫ রান করেছিলেন মুম্বাইয়ের এই ব্যাটসম্যান।
- হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ওপেন করে আসছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যান। মাত্র তিনটি ম্যাচে ব্যাট করেছেন ৩ নম্বর পজিশনে। দেশটির হয়ে ১৭৫ ম্যাচে ওপেন করে ৪৯.৯০ গড়ে করেছেন ৮০৮৩ রান।
ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটে আবার তিন নম্বর বাদে অন্য কোন পজিশনে খুব কমই ব্যাট করেছেন তিনি। ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পজিশনে ব্যাট করে হাশিম আমলা করেছেন ৭৯৯৩ রান। এছাড়া ২ বার টেস্টে ওপেন করে ৫২.৫০ গড়ে ১০৫ রান করেছেন তিনি।
- কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনিং এ দক্ষিন আফ্রিকার মূল ভরসার নাম কুইন্টন ডি কক। দেশটির এই কিপার ব্যাটসম্যান ওপেন করতে নেমে ১২১ ম্যাচে ৪৫.৮৩ গড়ে করেছেন ৫২৭১ রান।
ওদিকে স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এই কিপার ব্যাটসম্যান ওপেন করেন না। টেস্টে পুরো ইনিংস কিপিং করে ওপেন করাটা মোটামুটি অসম্ভবই। ফলে টেস্টে মূলত লোয়ার মিডল অর্ডারেই দেখা যায় কুইন্টন ডি কককে। অবশ্য চারবার টেস্টে ওপেন করে তাঁর ঝুলিতে ছে ১৪১ রান।