অগোছালো আর অব্যবস্থাপনার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট স্ট্রাইকার্সের টানা দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে ফরচুন বরিশাল। ১৯৫ রানের বিশাল টার্গেট ব্যাটারদের দক্ষতায় এক ওভার বাকি থাকতেই উৎরে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
একটা বিতর্ক দিয়েই সাকিব আল হাসান শুরু করেছেন এবারের বিপিএল। বিস্তৃত আরেক বিতর্কেও সাকিবের নাম যুক্ত হয়েছে ফরচুন বরিশালের প্রথম ম্যাচে। সিলেট স্টাইকার্সের বিপক্ষে ম্যাচে সবাই ভেবেছিল সাকিব হবে অধিনায়ক। তবে না, তাঁর পরিবর্তে টস করলেন মেহেদি মিরাজ। অপর ডাগআউটেরও একই চিত্র। আগের ম্যাচের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার বদলে সিলেটের অধিনায়কের ব্যাটন হাতে মুশফিকুর রহিম।
গোজামিলে শুরু হওয়ার ম্যাচটায় টস জিতে ব্যাট করতে নামে ফরচুন বরিশাল। চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা ও এনামুল হক বিজয়ের হাত ধরে দারুণ সূচনা পায় বরিশাল। এই জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। ঠিক সেখান থেকেই বড় রানের আভাস দিতে শুরু করে বরিশাল। তবে সপ্তম ওভারে এই জুটির পতন ঘটার পরপরই দুই ওপেনিং ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে বড় সংগ্রহের পথটা খানিকটা কুয়াশাচ্ছন্ন হতে শুরু করে।
সেই কুয়াশার মাঝেও হঠাৎ এক ফালি উষ্ণতা নিয়ে হাজির সাকিব আল হাসান। তাঁর ব্যাট উত্তাপ ছড়ায়। মাতিয়ে তোলে গোটা মিরপুরকে। ব্যাটে তাঁর রানের ফুলঝুরি। মাঠের চারিদিকে দৃষ্টিনন্দ সব শটের বদৌলতে তিনি তুলে নেন অর্ধশতক। প্রায় দুইশ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেন ফরচুনের অঘোষিত অধিনায়ক। তাঁকে লম্বা সময় ধরে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও করিম জান্নাতের ছোট ছোট ক্যামিও বরিশালের সংগ্রহ বরং বাড়িয়েছে। শেষ অবধিই সাকিব টিকে ছিলেন, রান করেছেন। সাকিব যখন ৬৬ রানে আউট হয়ে প্যাভিলনে পথ ধরেন, তখন দলীয় রান ১৮৩ রান। শেষ অবধি খুব বেশি রান করতে পারেনি বরিশাল। ১৯৫ রানের টার্গেট দেয় সাকিব বাহিনী।
সেই টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে সূচনাতেই আঘাত সিলেটের ব্যাটিং অর্ডারে। রান আউটে কাঁটা পড়েন কলিন অ্যাকারম্যান। খানিকটা হেয়ালিপনায় নিজের উইকেটটি বিলিয়ে আসেন ডাচ এই খেলোয়াড়। প্রাথমিক সেই ধাক্কাটা অবশ্য ভালভাবেই সামাল দেন দুই বাংলাদেশি তরুণ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। নির্ভীক দুই যোদ্ধার তরবারী যেন তাদের ব্যাট। তাদেরকে অবশ্য বেশকিছু সুযোগ করে দিয়েছে বরিশালের খেলোয়াড়রা ক্যাচ ফেলে। ঠিক সেকারণেই নতুন জীবন পেয়ে হাতখুলে খেলতে থাকেন দুই বাংলাদেশি ব্যাটার।
তবে মারকাটারি ব্যাটিংয়ে শান্তর থেকে এগিয়ে ছিলেন হৃদয়। এগিয়ে ছিলেন রান সংগ্রহেও। শান্ত ৪০ বলে ৪৮ রানের এক মন্থর গতির ইনিংস খেলে বিদায় নিলেও হৃদয় ঠিকই তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। তাঁর ব্যাটে ভর করেই বিশাল টার্গেট টপকে যাওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করে সিলেট। তবে খানিক বাদেই সেই স্বপ্ন খানিকটা ম্লান হয়ে যায়।
কিন্তু আরেক তরুণ ক্রিকেটার জাকির হাসান টানা দুই জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। ১৮ বলে ঝড়ো ৪৩ রানের ইনিংসটি সিলেটকে জয়ের কক্ষপতেই রাখে। জয়টাকে আরও সহজ করে তোলেন মুশফিকুর রহিম ও থিসারা পেরেরা। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার দ্রুত রান তুলতে থাকেন। খালেদ আহমেদকে পরপর দুই ছক্কা মেরে এক ওভার বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেন পেরেরা। এই জয়ে টেবিলের শীর্ষ্যস্থানে নিজেদের অবস্থানটা শক্ত করলো সিলেট স্ট্রাইকার্স।