টি-টোয়েন্টি ও বাংলাদেশের মিসিং লিংক

বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, ক্রিকেটের অন্য ফরম্যাটগুলোর তুলনায় জনপ্রিয়। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং কম সময়ের ম্যাচ হওয়ায় সারাবিশ্বে এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ছোট ফরম্যাটে মুহূর্তের ভুলে বড় কিছু ঘটতে পারে, আবার মুহূর্তের পালাবদলে ম্যাচও বের হয়ে আসতে পারে। আর এই ফরম্যাটে রাজত্ব করতে শুধু ঘরের মাঠেই নয় বরং আধিপত্য রাখতে হয় বিপক্ষ দলের মাঠেও। বিপক্ষ দলের মাঠে যারাই আধিপত্য রেখে পারফর্ম করতে পারে তারাই ক্রিকেট বিশ্বে খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।

ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে যেকোন জায়গায় ভালো করার জন্য দরকার হয়, একটি সুন্দর ক্রিকেটীয় কাঠামো, এই ফর্মেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো করা ক্রিকেটার এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক আসর যেখান থেকে খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রমাণ করে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিপক্ষ দলের মাঠে খেলা ম্যাচগুলোতে শতকরার হিসেবে ৬৪% জয় নিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে ভারত এবং আফগানিস্তান। এই তালিকায় সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ ম্যাচ জিতে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ।

ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণে বাংলাদেশ বরাবরই পিছিয়ে। ঘরের মাঠে কিংবা বাইরের দেশে সবজায়গায়ই বাজে পারফরম্যান্স এর নজির রেখে চলেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে বর্তমানে সাফল্য পেলেও বাইরে গেলেই সম্পূর্ণ ছন্দপতন হয় বাংলাদেশের। যেন এক অচেনা বাংলাদেশকে দেখি সবাই। এতদিন পরে এসেও দেশের বাইরে বড় কোনো দলের বিপক্ষে সাফল্য নেই বাংলাদেশের।

এই তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানে বাংলাদেশের থাকা অনুমেয় ই বটে। সুন্দর ক্রিকেটীয় কাঠামো কিংবা এই ফরম্যাটে পারফর্ম করা খেলোয়াড়ের অপ্রতুলতার সাথে অনুষ্ঠিত হওয়া লিগগুলোর স্বচ্ছ জবাবদিহিতার অভাবই বলে দেয় বাংলাদেশ কতটুকু এগোতে পারবে এই ফর্মেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বরাবরই খারাপ করা বাংলাদেশ দেশের বাইরে আরো নাজুক। দেশের বাইরে খেলা ৪৩ ম্যাচের মাঝে মাত্র ১৩ ম্যাচে জয় লাল সবুজের এই দলটার।

বিপক্ষ দলের মাঠে খেলা ম্যাচগুলোতে জয়ী ম্যাচের হার সবচেয়ে বেশি ভারত এবং আফগানিস্তানের। তবে ক্রিকেটের আদর্শ কাঠামোর উদাহরণ হিসেবে ভারত কে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যাবে। সুন্দর ক্রিকেটীয় কাঠামো কিংবা টি-টোয়েন্টি ফর্মেটে মানিয়ে নেওয়া ক্রিকেটারের সাথে আছে দারুণ প্রতিযোগিতামূলক আসরও।

আইপিএলে সবদেশের তারকা ক্রিকেটারদের সাথে খেলার সুযোগ পেয়ে জুনিয়ররা ভালো কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছে। তাই ভারতের শীর্ষে থাকাটাই বরং স্বাভাবিক। ভারত বিপক্ষ দলের মাঠে খেলা মোট ৬৭ ম্যাচের মাঝে ৪৩ ম্যাচেই জয়লাভ করেছে। শতকরা হিসেবে যা ৬৪%।

একই সাথে এক নম্বরে অবস্থান করছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের কয়েকজন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা রয়েছেন৷ রশিদ খান,মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবি কিংবা হযরতউল্লাহ জাজাই সব আরো বেশ কয়েকজন। এরাই আফগানিস্তান ক্রিকেট কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও আফগানিস্তানের খেলা ম্যাচ গুলো অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলের সাথে হওয়ায় তাদের জয়ের শতকরা হার অনেক বেশি। আফগানিস্তান বিপক্ষ দলের মাঠে খেলা মোট ২৫ ম্যাচের মাঝে ১৬ ম্যাচেই জয়লাভ করেছে। শতকরা হিসেবে যা ৬৪%।

তিন নম্বরে অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার। দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অন্যতম পরাশক্তি। দক্ষিন আফ্রিকা বিপক্ষ দলের মাঠে খেলা সর্বশেষ ১৫ ম্যাচের মাঝে ১১টি তেই জয়লাভ করেছে। সর্বমোট খেলা ৫৩ ম্যাচের ৩২ টি তেই জয়লাভ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা শতকরা হিসেবে ৬০%

চার নম্বরে অবস্থান পাকিস্তানের। টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিং এ বেশ কিছুদিন এক নম্বরে(বর্তমানে তিন) থাকা দলটার রয়েছে ধারাবাহিক পারফর্ম করা বেশ কিছু ক্রিকেটার। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান কিংবা শাহীন শাহ আফ্রিদি এর কথা না বললেই নয়। এদের হাত ধরেই শীর্ষে উঠেছে দলটি। বিপক্ষে দলের মাঠে হওয়া ৮১ ম্যাচের মাঝে ৪৫ ম্যাচে জয়লাভ করেছে দলটি। যা শতকরা হিসেবে ৫৬%।

সর্বশেষ দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল নিউজিল্যান্ড আছে এই তালিকার পাঁচ নম্বরে। বিপক্ষে দলের মাঠে হওয়া ৫২ ম্যাচের মাঝে ২৭ ম্যাচে জয়লাভ করেছে দলটি। শতকরা হিসেবে যা ৫২%।

৪৮% জয় নিয়ে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়া এক্ষেত্রে গতবছর বাংলাদেশের সাথে বাজেভাবে সিরিজ হার বড় কারন হতে পারে। এছাড়াও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে খেলা ম্যাচগুলোয় একচ্ছত্র আধিপত্য হারিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশের বাইরে হওয়া ৬৫ ম্যাচের মাঝে ৩১ টি তে জয়লাভ করেছে দলটি।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যম্পিয়ন ইংল্যান্ড আছে এই তালিকায় সাত নম্বরে। দেশের বাইরে হওয়া ৫৭ ম্যাচের মাঝে মাত্র ২৭ ম্যাচে জয়লাভ করেছে দলটি। শতকরা হিসেবে তাদের জয় ৪৭%। এই তালিকায় ৮ নম্বরে অবস্থান শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কা ৬০ ম্যাচের মাঝে জয়লাভ করেছে ২৪ ম্যাচে। শতকরা হিসেবে যা ৪০%।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালার দেশ উইন্ডিজকে এই তালিকায় নয় নম্বরে দেখে অনেকটা অবাকই হওয়ার কথা। যে দেশের ক্রিকেটাররা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ মাতিয়ে বেড়ায় সারাবছর তাদের দল দেশের বাইরে খেলা ৫৫ ম্যাচের মাঝে জয়লাভ করেছে মাত্র ১৯ ম্যাচে। শতকরা হিসেবে যা মাত্র ৩৪% (পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচসহ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link