অবহেলা ঝরে ঘাম হয়ে

একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বলা হতো বা-হাতি স্পিনারদের খনি। তবে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বা-হাতি স্পিন বিষে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা খুবই কম। তবুও দেশের ক্রিকেটে কমশ্র ফুরিয়ে আসা বা-হাতি স্পিন খনির এক মহামূল্যবান সম্পদ হচ্ছেন তাইজুল ইসলাম।

টাইগারদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তাইজুল ইসলামের। তিনি অবশ্য সে ফরম্যাটের পরিকল্পনাতেও নেই খুব একটা। তবুও নিজের কাজটা তো করে যেতে হবেই তাঁকে। প্রস্তুত থাকতে হবে সর্বদা। তাইতো আজ মিরপুর একাডেমি মাঠে ঘাম ঝড়িয়েছেন তাইজুল ইসলাম। নিজের বোলিংটা আরও একবার একটু শাণ দিয়ে নিলেন অভিজ্ঞ এই স্পিনার। এদিন বেশিরভাগ সময় নিজের বোলিংয়ের রিলিজ পয়েন্ট নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এর আগে, এশিয়া কাপ চলাকালীন সময়েও মনোযোগ দিয়েছেন নিজের ফিটনেসে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবহেলার অন্য নাম হলেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশ টেস্ট দলের তিনি নিয়মিত মুখ। তবে দেশের জার্সি গায়ে সচরাচর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তেমন একটা মাঠে নামতে দেখা যায়না তাইজুল ইসলামকে। তবুও, যখনই সুযোগ পান দিয়ে যান নিজের সেরাটা। এমনই এক উদাহারণ- এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ। সেই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে খেলার সুযোগ না পেলেও সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে তাঁকে একাদশে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সে ম্যাচে ২৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন এ বাহাতি স্পিনার।

২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে প্রবেশ করেন তাইজুলের। সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই ১৩৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট শিকার করেন তাইজুল। অবশ্য সেই সিরিজে দলের সঙ্গে থাকার কথাই ছিলো না তাইজুলের। তবুও ভাগ্যক্রমে সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সে সিরিজে সাকিব আল হাসান বিশ্রাম নেয়ায় দলে সংযুক্ত করা হয়েছিল তাইজুল ইসলামকে। 

একই বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাইজুলের। নিজের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন তিনি। দিনের পর দিন নিজের বোলিংকে আরো শাণিত করেছেন তাইজুল। তবুও, কোন এক অজানা কারণে তাঁর নামের পেছনে লেগে গেছে টেস্ট বোলারের তকমা। একজন বাংলাদেশী বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ উইকেটের ফিগারটাও আছে তাঁর নামের পাশেই। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচ খেলে ৩৩.০২ গড়ে তাইজুল নিয়েছেন ১৫৮টি উইকেট। তবে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টেস্ট অপেক্ষা কম ম্যাচ খেললেও রেকর্ড বিবেচনায় সেখানেও বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন তাইজুল।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ১১৪ ওভার বল করে ২২.৩৫ গড়ে নিয়েছেন মোট ২০ উইকেট যেখানে তার ইকোনোমি মাত্র ৩.৯২। যদিও আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাইজুল ইসলাম মাত্র ২ ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এই দুই ম্যাচে মাত্র ৭ ওভার বোলিং করে ৫৮ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ১টি উইকেট।

ওয়ানডে ক্রিকেটে তাইজুলের এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তাঁর বোলিং করার দক্ষতা। তবুও তিনি সাদা বলের ক্রিকেটে অবহেলিত। তবে সেসব নিয়ে মাথা ঘামান না তাইজুল। নিজের কাজটা তিনি করে যান মন দিয়ে। নিজের ভুলত্রুটি শুধরে, নতুন উদ্যমে তিনি আবার নেমে পড়েন মাঠে। দিনশেষে বুকের বা পাশে ব্যাজটা তো একই। লড়াইটা তো তিনি করেন সেই লাল-সবুজের মান রক্ষার্থে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link