অধিনায়ক তামিম: ভরসা নাকি আশঙ্কা

শুরুতেই নতুন অধিনায়ক যাকে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য মনোনয়ন করা হয় তার অধীনে বাংলাদেশ কেমন করলো? ১৫ ম্যাচে ১০ জয় এবং পাচঁ হার। খুশিতে গদগদ হওয়ার মতো রেজাল্ট আসলে হয় নি। ‘ঠিক আছে’ বা ‘চলে’ টাইপ বলতে পারেন এই রেজাল্টকে। খুব যে চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়েছি এখন অবধি এমন না।

২০২৩ বিশ্বকাপের আর প্রায় এক বছর বাকি। এক বছর পূর্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটের ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে?

শুরুতেই নতুন অধিনায়ক যাকে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য মনোনয়ন করা হয় তার অধীনে বাংলাদেশ কেমন করলো? ১৫ ম্যাচে ১০ জয় এবং পাচঁ হার। খুশিতে গদগদ হওয়ার মতো রেজাল্ট আসলে হয় নি। ‘ঠিক আছে’ বা ‘চলে’ টাইপ বলতে পারেন এই রেজাল্টকে। খুব যে চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়েছি এখন অবধি এমন না।

ঘরে উইন্ডিজকে হারিয়েছে যারা নিয়মিত এশিয়াতে ম্যাচ হারে। ট্রানজিকশনে থাক শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের সাথে ৩-০ তে জয় সাথে বিদেশে কিউইদের সাথে একটা জয় হইলে হয়তো গদগদ হওয়া যেতো। তবে সামনে হবে আসল পরীক্ষা। আফ্রিকা সিরিজ, ঘরেও ভারত, ইংল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষ সিরিজ খেলবে। সেখানের পার্সেন্টেজ খুব মুখ্য হবে।

তামিম অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিলেন?

শুরুতে তামিম যখন অধিনায়ক হন তখন আলোচনার বিষয় ছিল তামিম কি মুশফিকের বাজে অধিনায়কত্বের রেকর্ড ভাঙবেন! তামিম সেভাবে কখনোই তাঁর অধিনায়কত্বের দক্ষতা প্রমাণ করেননি, তাতে সবার মনে তাই শঙ্কা ছিলই। যদিও তামিম-রহিমের রেস শুরুর হওয়ার আগেই এই আলোচনা শেষ করেন মমিনুল হক সৌরভ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে অধিনায়কত্বের ট্যাগটা তিনি কাড়াকাড়ি শুরু করেন।

তবে, তামিম অপ্রত্যাশিত ভাবেই দারুণ করতে শুরু করেন। শুরুতে অধিনায়কে হওয়ার পরের ২-১ সিরিজ এভারেজ ছিলেন এর মধ্যে হওয়া বিপিএলে আরও জঘন্য ছিলেন। তবে আস্তে আস্তে তামিম নিজেকে মেলে ধরেন। তার অধিনায়কত্ব সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার মতো। এই সিরিজটায় তিনি খুবই ভালো ছিলেন একজন অধিনায়ক হিসেবে। এক কথায় ১০ এ ১০!

তবুও এক বছর আগে দাঁড়িয়ে তামিমের অধিনায়কত্ব এই দল নিয়ে আশা খুব একটা করা যাচ্ছে না। তামিমের অধিনায়কত্ব ভালো লাগলেও ভরসাটা ঠিক তৈরি হচ্ছে না। আশঙ্কা বেশি হচ্ছে।

প্রথম আশঙ্কা তামিমকে নিয়েই। তামিম নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’। তামিম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হতে চান দেশের মধ্যে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসাবে দেখতে চান এবং ১০০০০ রানের মালিকও হতে চান। এই জিনিস গুলো অনেকে স্পোর্টিংলি নিতে না পারলেও, আমি আসলে এতে কোনও সমস্যা খুঁজে পাই না। একজন ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন রাখতেই পারে এটা স্বাভাবিক।

তবে, তামিমের এই নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা তামিমের জন্য বড় চাপের! ট্রফি না থাকলে যেখানে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলে সেখানে একটা টুর্নামেন্ট ডাহা ফ্লপ হয়ে এই দাবিটা তো আরও বেশি ঠুনকো লাগে। তামিম তাই যথেষ্ট চাপেই থাকবেন শেষ বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য। শেষ বিশ্বকাপেও যদি ভালো করতে না পারেন তবে অপূর্ণ থাকবে তার নিজের কাছেই। এই একটা চাপ তো রইলোই।

দ্বিতীয় চাপটা হবে একজন অধিনায়ক হওয়ার। বাংলাদেশে ক্রিকেটে আসা শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারদের নিয়ে শেষ বিশ্বকাপ। অর্থাৎ এই বিশ্বকাপের আলাদা একটা মূল্যায়ন থাকবে। অধিনায়ক হিসাবে এই দল নিয়ে ভালো কিছুর চাপ তামিম থাকবে তার উপর যে কোনও পূর্বের অধিনায়কের চেয়ে বেশি। এই বিষয়টা তামিম নিজেও অনুভব করেন, নিজেই বলছেন ইনডিভিজুয়াল হিসাবে অনেক কিছু করলেও দল হিসাবে দেশকে এখনও তারা তেমন কিছু দেননি।

চার বিশ্বকাপ ঢালাও ভাবে ফ্লপ থেকে, এত চাপ প্রত্যাশা থেকে তামিম নিজে কেমন করেন এটা সবার আগে। তামিম যদি ফ্লপও হন তাহলে অধিনায়ক হিসাবেও দলকেও ডুবাবেন। যেটা মাশরাফি গত বিশ্বকাপে করেছেন বলে অনেকেই বলেন। ফুটবলে একজন ডিমোটিভ কোচ আর ক্রিকেটে একজন ডিমোটিভ অধিনায়কের থেকে দল কিছুই পায় না।

অধিনায়ক হওয়ার পর তামিম নিজেও বোধহয় চাপটা অনুভব করতেছেন। ৩৩ গড়ে ৪৯৬ করেছেন এ পর্যন্ত। এর মধ্যে এক ম্যাচেই করেছেন মোট রানের চার ভাগের ১ ভাগ রান। তামিমের ফর্মে ফেরাটা খুব দরকারি হবে। চরম ফর্ম নিয়েও যেখানে ২০১১ এবং ২০১৯ ব্যার্থ হলেন সেখানে ফর্মহীন অবস্থায় বিশ্বকাপে গিয়ে কিছু করার চান্স জিরো। তাই সামনের ১ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভালো দিক হলো তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে ছয় মাসের ছুটি কাটাবেন। আশা করি ছুটিটা আরও বাড়াবেন। নিজেকে নিয়ে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের সাথে কাজ করাটা খুব জরুরি হবে তার জন্য। ২০১৯ বিশ্বকাপের স্মৃতিটাও তামিম চাইলে মনে রাখতে পারেন তামিম ইকবাল।

এই দলের ভালো ব্যাপার হচ্ছে একটা ভালো পেস বোলিং গ্রুপ খুজে পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ খুব কার্যকারি হয়েছেন। ব্যাটিং তার ইমপ্রুভমেন্ট এসেছে।বোলিং এও কনসিসটেন্সি এনেছেন। লিটন রান পাচ্ছেন এটাও স্বস্তির ব্যাপার।
লিটন মিডল অর্ডারে ভালো হবে এইটা অনেক দিনের আলাপ লিটন সম্ভবত নিজেই চান না।

লিটনকে মিডল অর্ডারে পাঠাতে হলে তামিমকে দল থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ তামিম কনসিসটেন্সি মিলিয়ে প্রতি দিন পাওয়ার প্লেতে ৫০-৫৫ সর্বোচ্চ ৬০ উঠান। এটা মিনিমাইজ করার জন্য হলেও অপর পাশে ৮০-৮৫ স্ট্রাইকরেটেট কাউকে দরকার৷ লিটন ছাড়া এই রোল প্লে করার কেউ নাই আপতত।

জয় বা ইমনকে আরও প্রস্তুত করা উচিত। ১ বছর আগে ধরে নিয়ে এসে হঠ্যাৎ বোল্ট, স্টার্কদের পাওয়ার প্লে এরা সামলাতে পারবে না।

নম্বর পাচঁটা লিটনকে দিতে পারলে ভালো হতো। যদিও লিটন চান কিনা প্রশ্নে সাথে এখন তামিমের এই কচ্ছপের মতো ব্যাটিং করাটাও একটা বিষয়! ইয়াসির ২ ম্যাচ সুযোগ পেয়ে প্রমাণ করতে পারেন নি। তবে এই দলের সবচেয়ে বড় দুইটা বিষফোড়াঁ হচ্ছে মুশফিকের গ্লাভস এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

মুশফিকের কিপিং প্রসঙ্গে তামিমকে দায় নিতে হবে। অন্তত সাংবাদ মাধ্যমের বক্তব্যের পর দায়টা আরও বেশি নিতে হবে। অনেক সুশীলবাদি হয়ে জিনিসটা পুরো ম্যানেজমেন্টের উপর দিয়ে চালিয়ে দিতে চান।তবে ম্যানেজমেন্ট হেড কোচ এবং অধিনায়ক মিলেই হয়৷ তো ম্যানেজমেন্টের পার্ট হিসাবে তামিম দায়ী।

তাকে প্রশ্ন করা হইছিলো টি২০ থেকে মুশফিককে সরানো হয়েছে ওয়ানডেতে কি হবে? উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি যতদিন অধিনায়ক আছি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি মুশফিক আমার দলে কিপিং করবে।’ এটা কোনও অধিনায়ক সূলভ মন্তব্য না। রীতিমতো বাকিদের বলে কিপার হিসাবে তুমি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট হলেও আমার আন্ডারে সুযোগ নাই। নিজের প্লেয়ারকে সাহস দিতে এটাও বলা যায় বেটার অপশন পেলে আমরা ভেবে দেখবো আপতত সে আমার দলের নাম্বার ওয়ান চয়েস। জাতীয় দলে ব্রাডারহুড শো করার জায়গা না।

মুশফিকের কিপিং করানো নিয়ে তামিম যে একপ্রকার গোয়ার্তুমি এটা তো বলে দেয়াই যায়। ম্যানেজমেন্ট বা কোচের সাথে তিনি যে ইচ্ছা করেই কিপিং করাচ্ছেন এটা তো পরিষ্কার ব্যাপার।

রাসেল ডোমিঙ্গো ১২০ বলের ম্যাচে মুশফিককে ভরসা করে না তার থেকে কিপিং ছিনায় নেয় সেখানে সে ৩০০ বলের ক্রিকেটে মুশফিককে বিশ্বাস করতেছে? এটা কোনও ভাবে সম্ভব? ক্যারিয়ার নড়বড়ে রিয়াদের সাথে পারলেও হয়তো তামিমের সাথে এই ব্যাপারে পারেন নি।হিসাব তো পরিষ্কার।

আরেকজন ক্রিকেটার হচ্ছেন রিয়াদ। পচে যাওয়া একটা কলা হচ্ছেন বর্তমান রিয়াদ। ফিটনেসের যা তা অবস্থা। ফিল্ডিং নিয়ে কিছু বলার নাই সবটাই দৃশ্যমান। ক্যাচ মিস কবে শেষ তিনি করেন নি? ক্যাচ মিস না করলেও মিস ফিল্ড সহ স্লো ফিল্ডিং দিয়ে প্রতি ম্যাচে কিছু রান দিয়ে দেন। ব্যাটিং তার দ্বারা হইতেছে না। রিফ্লেক্স তো হারিয়ে ফেলেছেন। ৪০ বল খেলার পর যেভাবে হাঁপান।

পুরো টিভি স্ক্রিনে যখনই আসেন যেটুকই আসেন একটা নেগেটিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজের কেউ আসেন। রিয়াদকে নিয়ে খেলা মানে অনেকটা দশ বা সাড়ে দশ জন নিয়ে ক্রিকেট খেলা। নিজের দল সাড়ে দশ জনের হইলেও রীতিমতো ফিল্ডিং দিয়ে প্রতিপক্ষের দলকে ১২-১৩ জনের দল বানায় দেন লাইফ দিয়ে দিয়ে।খুবই বাজে ব্যাপার হবে রিয়াদ ২০২৩ এই দলের সাথে থাকলে।

তামিম মাঠে অধিনায়কত্বটা ভালো করছেন। এখন এইসব সিন্ডিকেট প্রতি বায়াসড না থেকে তার উচিত ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নেয়া। সিডন্সের সাথে কাজ করা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...