ঝড়ো গতিতে, কখনো বা ধীর গতিতে

ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিলো দূর্দান্ত, অভিষেকেই ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট! একদম স্বপ্নের মতো জাতীয় দলে পা দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় খেলেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপ, পারফরম্যান্সও ছিল মনে রাখার মত।

কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। তবে, বাজে ফর্ম আর ইনজুরিতে বাদ পড়ার পর দল ফিরতে কোনো চেষ্টার কমতি রাখেন তিনি! জিম, প্র‍্যাকটিস কি না করেছেন তিনি।

কিন্তু, এরপরও যখন ২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ পেলেননা, তখন মিডিয়ার সামনে নিজের অশ্রু আর ধরে রাখতে পারেননি৷ বিশ্বকাপের আগে ঘরোয়াতে পারফরম্যান্সটাও ছিলো নজরকাড়া, কিন্তু ভাগ্য যে তার সাথে ছিলো না।

তবে দমে যাননি তিনি! সাফল্যর ছোঁয়া পেতে শুরু করলেন কঠোর অনুশীলন। করোনায় পুরো পৃথিবী থমকে গেলেও থেমে যাননি এই পেসার। বাসার ভিতরেই অনুশীলন, জিমে সময় দেয়া থেকে চেষ্টা করেছেন অভিনব কিছু ফিটনেস অনুশীলন। প্রবাদে আছে ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি!’

পরিশ্রম করলে ফল আপনি পাবেনই। তাহলে এই ছেলেটি কেনো পাবে না? নিজের উপর আত্ববিশ্বাস রেখে যেই ছেলেটা দিনের পর দিন ধৈর্য্য ধরে জাতীয় দলে ফেরার আসায় পরিশ্রম করে গেছেন, সে তো একটা সুযোগ ডিজার্ভ করেন অন্তত!

সবশেষ ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে বাদ পড়ার আগের ম্যাচে ৭ ওভারে ৬৬ রানে দুই উইকেট নেন তিনি! সে ম্যাচে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে প্রোটিয়াদের কাছে হার মানে বাংলাদেশ দল। ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায়ও পড়ে। এরপরের সিরিজেই দলে নেই তিনি, এরপর চোট আর ভাগ্য সহায় না হওয়ায় তিন বছর গায়ে জড়াতে পারেননি জাতীয় দলের জার্সি।

কালো মেঘের আড়ালে কিন্তু সূর্য ঠিকি ঢাকা থাকে, আর কালো মেঘ সরে গেলেই সূর্য উঁকি দিয়ে আবারো আলোর আভা ছড়াতে শুরু করে। তেমনি কালো মেঘ সরিয়ে অবশেষে আলোর দেখা পেলেন তিনি। হ্যাঁ – তাসকিন আহমেদ! দীর্ঘ তপস্যা আর কষ্টের পর অবশেষে তিনি সুযোগ পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জাতীয় দলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে। প্রায় ১১৬৪ দিন পর সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে! আরেকটু সহজ ভাবে বললে প্রায় তিন বছরের লম্বা বিরতি কাটিয়ে দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। আত্মবিশ্বাস-ধৈর্য্য-পরিশ্রম-সাফল্য সব মিলে যদি একটা প্যাকেজ তৈরি করেন সেটাই হবেন তাসকিন।

ফিরলেন গতির মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে! কিন্তু ভাগ্যটা ঠিকঠাক মেরামত করে উঠতে পারেননি তিনি। সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে কতো সুযোগই না তৈরি করেছিলেন তাসকিন! কিন্তু ভাগ্যর কি লীলাখেলা তার বলেই কিনা গুটি কয়েক ক্যাচ ড্রপ! যার ফলস্বরুপ ভালো বোলিংয়ের পরেও নামের পাশে রান বন্যা আর উইকেট খরা।

দীর্ঘদিনের কষ্ট, পরিশ্রম সবটার ফল কি তাসকিন পেয়েছেন? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে নিজের পেস আর বাউন্সে বেশ কয়েকবার পরাস্থ করেছেন কিউই ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ভাগ্য যে তার সহায় হয়নি তাই দলের সাথে সাথে নিজের ঝুলিতেও অর্জনটা শূন্য!

তাসকিন তার ছোট্ট ক্যারিয়ারে বিশেষ কিছু করতে পারেননি। নাম কামিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিড স্টার হিসেবে। কিছুটা দূর্ভাগাও বটে, ভাগ্য সহায় হয়না তার! নয়তো উইকেট সংখ্যাটা আরো বেশিই হতো। তাসকিনের সামনে চ্যালেঞ্জের কমতি নেই। গতির সাথে লাইন লেন্থ ধরে রেখে সাফল্য পাওয়া, জাতীয় দলে লম্বা সময় সার্ভিস দেওয়া – চ্যালেঞ্জের শেষ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link