ডাক খেয়ে ডাক মারা!

কুসংস্কারাচ্ছন্ন রসের বিশ্বাসটি হাঁস সম্পর্কিত। রস টেলর কোন ম্যাচের আগে হাঁস (ডাক) খেতেন না। তাঁর ধারনা ছিলো যে তিনি ডাক খেলে ডাক মারবেন।

ক্রিকেটটা ভদ্রলোকের খেলা হলেও তাতে নানা কুসংস্কার প্রচলিত। ক্রিকেটারদের কুসংস্কার নিয়ে চাইলে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ করা যায়। এবার নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ব্যাটার রস টেলর জানান দিলেন আরেকটি কুসংস্কারের। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর রস টেলর মনোনিবেশ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী লেখনীতে। সম্প্রতি প্রকাশিত রসের আত্মজীবনী ‘রস টেলর: ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট’-তে তিনি নিজের জীবনের নানা না বলা অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করেছেন। আর সেই বইতেই তিনি তাঁর ক্রিকেটীয় জীবনে মেনে চলা হাস্যকর এক কুসংস্কারকে তুলে ধরলেন।

কুসংস্কারাচ্ছন্ন রসের বিশ্বাসটি হাঁস সম্পর্কিত। রস টেলর কোন ম্যাচের আগে হাঁস (ডাক) খেতেন না। তাঁর ধারনা ছিলো যে তিনি ডাক খেলে ডাক মারবেন। এর নেপথ্যের ঘটনা হলো, ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর বিশ্বকাপ অভিষেকে তিনি শূন্য রানে (ডাক) আউট হয়েছিলেন। সেই ম্যাচটির আগের রাতে সেন্ট লুসিয়াতে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন তিনি। সেইখানে মেন্যুতে ক্রিস্পি সুগন্ধি হাঁস ছিল, যা রস টেলরের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে একটি।

তিনি ডিনারে সেই হাঁস (ডাক) খেয়েছিলেন। ব্যস, তাতেই নাকি তাঁর কপাল পুড়ে। পরেরদিন ইংল্যান্ডের লিয়াম প্লাঙ্কেটের প্রথম বলেই তিনি বোল্ড হয়ে সাঁজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। সেই ঘটনা থেকে রস টেলর বিশ্বাস করেন আগের রাতে ডাক খেয়েছিলেন বলেই পরদিন তিনি শূন্য রানে ফিরে গিয়েছিলেন।

রস টেলর আরও জানান, তাঁর বিশ্বাসটা আরও পাকাপোক্ত হয় যখন তিনি আগের ঘটনার প্রায় বছরখানেক পর আরেকটি ঘটনার সম্মুখীন হন। সেবার ডিনারে তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি হাঁস খাবেন না কোনো ভাবেই। কারণ দুইদিন বাদেই তাঁর ম্যাচ আছে। কিন্তু যেহেতু ম্যাচটি দুইদিন পর ছিল, তাঁর বন্ধুরা তাঁকে জোরপূর্বক আশ্বস্ত করে যে ওই নিয়ম কেবল খেলার আগদিনের জন্য।

রস হাঁস খেলেন সেদিন ডিনারে। আবারও ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! দুইদিন পরের ম্যাচে আসলেই তিনি গোল্ডেন ডাক নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এই ঘটনার পর রস টেলর আর কোনদিনও ম্যাচের কাছাকাছি সময়ে হাঁসের (ডাক) স্বাদ নেয়ার সাহস করেননি। তাঁর জীবনে একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়ালো বিষয়টা।

নিউজিল্যান্ডের এই কিংবদন্তি তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৩৬ টি ম্যাচ খেলেছেন সবমিলিয়ে তাতে ৮৫৮৮ রান করতে সক্ষম হয়েছেন। ওয়ানডেতে টেলরের নামে রয়েছে ২১ টি সেঞ্চুরি ও ৫১ টি হাফ সেঞ্চুরি। তর্কাতীতভাবে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটার তিনি। কিন্তু অবশ্যই কুসংস্কার মেনে চলাটা বড্ড বেশি মানসিক ব্যাপার। একজন ক্রিকেটার যখন কুসংস্কার মেনে মাঠে ব্যাট বা বল করতে নামেন, তা তাঁর আত্মবিশ্বাসকে বাড়াতে ও ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কুসংস্কার কাজ করুক বা না করুক, এই আত্মবিশ্বাসটুকুই একটি বিধ্বংসী পারফরমেন্স তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। তাইই ঘটে থাকে সাধারণত। যেভাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বিরাট কোহলির পুরোনো গ্লাভস ব্যবহার করতেন, ডেল স্টেইন মাঠে সবসময় বাঁ পা আগে রেখে প্রবেশ করতেন, মাহেলা জয়াবর্ধনের ব্যাটে চুমু খাওয়াকে শুভ মানতেন, তেমনি রস টেলরও ডাক (হাঁস) বর্জন করে তাঁর ক্যারিয়ারে ডাক কে দূরে রাখতেন।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...