ডব্লিউ জি গ্রেস বলেছিলেন, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নিতে হবে। অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। ১৮৯০ সালে বলা সেই কথা, এখন কি শুনলে হাসি পায় না?
শতকের পর শতক কেটে গেছে, কিন্তু কিছু কিছু কুসংস্কার টিকে আছে। ‘কোট-প্যান্ট’ পরা নস্টালজিক বুড়োরা এখনও ‘আমাদের সময়ে’র ব্যাটিং উইকেট বোঝাতে গিয়ে ঘেমে-নেয়ে বলেন, ‘চতুর্থ ইনিংস তো ভয়ানক!’
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের আগুনে আজকের পিচ পুড়ে বালু হয়! আগের মত দ্রুত চরিত্র পাল্টায় না। সেশন শেষে পিচের কোনও ক্র্যাক পড়ে না, ভাঙে না, স্পিন ধরে না আগের মত।
তাই তো বেন স্টোকসও টস জিতে ব্যাটিং নয়, ‘চেজ ফার্স্ট’ বলে ফেলেন, বোলিংয়ের ভয় পান না। ডব্লিউ জি গ্রেসের ‘শ্রদ্ধেয় ঐতিহ্য’ সেখানে ধোপে টেকে না।
সময় পাল্টেছে। পৃথিবীও। ক্রিকেট তো অনেক আগেই নিজের ধারা ভেঙেছে। টেস্ট ক্রিকেট এখন আর সেই পুরোনো ধ্যানমগ্ন ধারা নয়, এখন সেখানে আপোস নেই—আক্রমণ আছে, আগ্রাসন আছে, অ্যাডজাস্টমেন্ট আছে।
ভারতের মতো দলও অনেক সময় ধরা পড়ে যায় সেই পুরোনো ফ্রেমে। হেডিংলিতে পঞ্চম দিনের উইকেট বদলায়নি। গলেও তেমন হয়নি কিছু। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটেও সেই মন্থরতা ছিল, যেখানে উইকেটের ভয় ছিল না, ছিল কেবল নিজের সাহসের সংকট।
ক্রিকেটের ধারা পাল্টে গেছে। বিনোদনের সংজ্ঞা বদলে গেছে। টি-টোয়েন্টির উত্থানে টেস্টের ক্লাসিক তর্জনীও বদলে গিয়ে স্লগ সুইপ হয়ে উঠেছে। বাজবল এসেছে, রোহিত শর্মারা একদা ভয়ডরহীন ক্রিকেটের বার্তা দিয়েছিলেন।
ভারতের তাও ক’দিন আগেও বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা ছিলেন, যারা সাদা পোশাকেও মাঠে একটা ক্যারেক্টার দেখাতে পারতেন। এখন তাঁরা নেই, কিছুই নেই।
ক্রিকেটে এখন আর ফরম্যাট খুব বেশি ম্যাটার করে না। এখন পুরো বিষয়টাই সিচুয়েশনের সাথে অ্যাডজাস্টমেন্ট। যখন যেমন পরিস্থিতি, সেভাবে খেলো। ম্যাচের চাহিদা বুঝে খেলো। সেভাবে ব্যাট করো, সেভাবেই পরিকল্পনা সাজাও।
কলম্বোতে বাংলাদেশ প্রথম সেশনে রান তুলেছে ২.৭৩ হারে। কী অর্থহীন, কী নিরুত্তাপ, কী নির্জীব এক ব্যাটিং! না কোনো উত্তেজনা ছিল, না কোনো লড়াই হয়েছে।
এটা কোনো ম্যাচ নয় — যেন একটা কৃত্রিম জীবনরক্ষা ব্যবস্থা। যেন কেউ জোর করে টেস্ট ক্রিকেটকে লাইফসাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আর সেই ডাক্তারদের নাম? এনামুল হক বিজয়! সত্যিই, টেস্ট ক্রিকেটের কপাল খুবই খারাপ।