ঘৃণাটা চলুক, আগুনটা থাকুক

একটা ফুটবলারকে কারা কারা ঘৃণা করতে পারে?

এটা একটা ছোট কিন্তু অবাক করা বিষয়। জুভেন্টাসের বেশ কজন অফিসিয়াল ও আগের ভক্তরা এন্টি রোনালদো, রোনালদোকে ওরা দলে চায়নি। এটা ভালো কথা এবং স্বাভাবিক, জুভেন্টাসের আভিজাত্যকে রোনালদোর আলো খানিকটা ম্লান করে দেয় স্বভাবতই।

আরো বিশেষত যখন দেখা যাবে রোনালদোর কারণে ক্লাবে অনাকাঙ্খিত ভক্তের আগমন ঘটে, ক্লাবের পুরোনো সমর্থকদের মেনে নিতে কষ্টই হবে। তবে এটাও সত্য রোনালদোর, মানে ইন্ডিভিজুয়্যাল রোনালদোর ছাপ নেই এখনো জুভেন্টাসে। সেটা হবে কেবল ও কেবলমাত্র যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে পারে।

দুই, রিয়াল মাদ্রিদ। প্রায় এক দশকের সম্পর্ক, ৪৩৮ ম্যাচ, ৪৫১ গোল। লা লিগার হিসেব বাদ দিলাম, সেখানে অবিসংবাদিত রাজা লিওনেল মেসি, সূর্যের ন্যায় সত্য। কিন্তু পাঁচ মৌসুমে চারটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। যেখানে প্রায় প্রতি মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল, সর্বোচ্চ নক আউট গোল, হ্যাটট্রিক করে দলকে পরের পর্বে নিয়ে যাওয়া। প্রথম লেগের ডেফিসিট ঘুচিয়ে দলকে সামনে নিয়ে যাওয়া।

এখানেও ‘হু নিডস রোনালদো’ প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে, এই প্ল্যাকার্ড কিন্তু ব্যক্তির বক্তব্যও না। বাংলাদেশেও দেখেছি ২০২০ মৌসুমে লা লিগা জয়ের পর বেশ কয়েকজন বলেছে রোনালদো গেছে দেখেই মাদ্রিদে লা লিগা আসছে। এরা এমন পর্যায়ের ভণ্ড এরা বলতো আমরা তো অনেক লা লিগা জিতসি আর লাগবে না। বার্সেলোনা আমাদের কাছাকাছি আসুক। এরা চারটা ইউসিএল প্রত্যক্ষভাবে জেতানো রোনালদোকে বললো, ও চলে যাওয়াতে লিগ জেতা হলো।

তিন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই দলে খানিকটা ঝামেলা আছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বাংলাদেশি ফ্যানবেসের একটা  অংশ আসলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সাপোর্টার না। হয় মাদ্রিদ নাইলে বার্সা, নাইলে এমনে টোটালি ফুটবল দেখে আর কী অতো ডিপলি ক্লাব সাপোর্টার না। এদের একটা অংশ আর্জেন্টিনা ও মেসি ফ্যান তাই রোনালদোকে পছন্দ করে না, অনেক লেজিট। আরেকটা দল, মনে করে রোনালদো বিট্রে করেছে ইউনাইটেডকে।

আমি এটা মনে করিই না। এটা এক প্রকার ভন্ডামি, কারণ রোনালদো এখন পর্যন্ত ইউনাইটেডে খেলা তো বটেই, স্পিড, শুটিং, মাঠে নেতৃত্ব মিলিয়ে মোস্ট কমপ্লিট ফুটবল পারসোনালিটি। যেমন এটাও মানি, মোস্ট কমপ্লিট ফুটবলার লিও মেসি। তো রোনালদোর উত্থানের সময়টা কাটিয়েছেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে, তাঁর স্বপ্ন ছিল মাদ্রিদে খেলা, সে মাদ্রিদে গেছে এবং কোনো নাটকীয়তা বা ভরং ছাড়া। একই কারণে রোনালদোকে অপছন্দ করা লোকেরা রুড ফন নিস্তলরয় ও বেকহামকে পছন্দ করে। আমি নিজে সবাইকেই করি।

তবে রোনালদোর যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে সেটা হলো, ও এইসব নিয়ে অতো ভাবে না। কে ভালোবাসলো, কোথায় কতটা সম্মান পেলো, এগুলো গায়ে না মাখিয়ে চলে আসছে, বিশেষত সান্তিয়াগো বার্ন্যাবুতে দুয়োধ্বনি শোনার যে ব্যাপারটা।

বিশেষত টোটাল ফুটবল ভক্তদের অসহিষ্ণু হওয়ার বেলায়, সবচেয়ে বেশিবার অপছন্দের তালিকায় আসা ফুটবলারটা খেলে চলেছে, গোল দিয়ে চলেছে, এখনো লিগের অন্যদের চেয়ে ২-৩ ম্যাচ কম খেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা লিগে। এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চার ম্যাচে চার গোল।

এখনো মানুষ তাঁকে ঘৃণা করা চালিয়ে যাবে। অদ্ভুতভাবে রোনালদোর পিসিআর টেস্ট নিয়ে সন্দেহও মানুষের মধ্যে নেতিবাচকতা তৈরি করবে, যেই পিসিআর টেস্ট নিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই এখনো অনেক জায়গায়ই করা যায়নি, ইভেন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) একটা টেস্ট বিশ্বাস না করায় পুরো ওয়ানডে সিরিজ বাতিল হয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

এখনো পেনাল্টি নেয়ার কারণে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে মানুষ, যেই একটা পেনাল্টি ঠিকঠাক হলে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে জেতাতে পারতেন প্রায় তিন দশক অধরা আন্তর্জাতিক শিরোপা।

এখনো যে ইউরোতে পুরো টুর্নামেন্ট রোনালদোর গোলে, হেডে, কিকে, এসিস্টে পর্তুগাল শিরোপা ঘরে তুলেছে, সেই টুর্নামেন্টের চিয়ার লিডার বলা হয় তাকে। যেখানে ২০০৫-০৬ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চোটের কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে আর মাঠে নামেনি লিওনেল মেসি, একটা গোল করেছেন টুর্নামেন্টে পানান্থিয়াকোসের সাথে, সেটাকে ধরেই তো মেসির চারটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলা হয় তাই না? আমি নিজেও কখনো বলিনাই মেসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কি একটা কম ধরা হবে? কেনো ধরা হবে?

২০০২ সালে কাকা বিশ্বকাপে কয়টা ম্যাচ খেলেছেন? তাঁকে বিশ্বকাপ জয়ীই বলা হয়। কিন্তু ওর নাম তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ওকে চিয়ার লিডার বলতে হবে, ওকে বলতে হবে যে ইউরোটা ওর না। আর বাকিদের বেলায় সহানুভূতি দিতে হবে, যারা খোলা চোখে ব্যর্থই হয়েছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

এই ঘৃণাটা চলুক। এই আগুনটা থাকুক। এই তুলনাটা ধরা থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link