শরীরী ভাষায় ক্লান্তি, কপালে ঘামের বিন্দু, কিন্তু চোখেমুখে একরাশ তৃপ্তি। সেঞ্চুরির পর হাঁটু গেড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত তুলে দিলেন স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মুহূর্তেই যেন সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। যেন অনেক না বলা কথার উত্তর, অনেক সমস্যার সমাধান, চাপা কষ্টের উপশম হয়ে এলো এই তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল সংখ্যা।
আজকাল রিজওয়ানের ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা হয় কম, সমালোচনা হয় বেশি। নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে, অথচ পারফরম্যান্স নিয়ে উঠছিল প্রশ্ন। কেন তিনি অধিনায়ক? কেন তাকে দিয়ে দল চালানো হচ্ছে? কেন তার ব্যাটিংয়ে সেই আগের ধার নেই? রিজওয়ান এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন সবচেয়ে চেনা ভাষায়— ব্যাট হাতে।
পাকিস্তানের দায়িত্ব এখন তার হাতে। বাবর আজমের পর তিনিই যেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। স্ট্রাইক রেট বিষয়ক সমস্যার পরও এটাই সত্যি। তাই স্রেফ টিকে থাকাই নয়, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া তার কাজ। আর সেটা করলেন তিনি সেঞ্চুরির মাধ্যমে, কঠিন এক পরিস্থিতিতে। শুধু নিজের জায়গা নয়, দলের আত্মবিশ্বাসও হয়তো কিছুটা ফেরালেন তিনি। সাথে দলের ফাইনাল খেলার টিকেটও নিশ্চিত করেন অনায়াসে।
ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, মাথা ঠাণ্ডা রেখে এক এক করে রান তুলেছেন। সময়ের সাথে শট খেলেছেন, স্ট্রোকের পসরা মেলে ধরেছেন। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েছেন, ইনিংসের শেষভাগে গিয়েছেন গিয়ার বদলে। যেন চিরচেনা সেই রিজওয়ান, যিনি দলের বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে যান বুক চিতিয়ে।
এই সেঞ্চুরি শুধু রানসংখ্যা নয়, আরও অনেক কিছুর জবাব। অধিনায়কত্বের ভার, ব্যাটিংয়ের দায়বদ্ধতা, নেতৃত্বের চাপ— সব মিলিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ইনিংসটা যেন হাল না ছাড়া এক সৈনিকের প্রতিচ্ছবি। কি বিরুদ্ধ এক পরিস্থিতিতে তিনি আঘা সালমানের সাথে দলের হাল ধরেছিলেন! রেকর্ড গড়া এক জুটিতে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
সমালোচকদের প্রশ্ন হয়তো শেষ হয়নি, কিন্তু অন্তত করাচিতে এবার রিজওয়ানের ব্যাটই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাখল। আরও কিছু প্রশ্ন থাকলে সেসবের উত্তর না হয় দেওয়া যাবে ফাইনাল কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ময়দানে।