লিটন দাস, বাইশ গজের হেয়ালি চরিত্র

দ্রুতই ধারাবাহিকতার সাথে বড় ইনিংস খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে লিটনকে; নাহলে তামিম ইকবাল বিহীন টাইগার টপ অর্ডারের নড়বড়ে অবস্থা চলতেই থাকবে। 

নয় ম্যাচ, ২৮৪ রান, গড় ৩১.৫৫ আর স্ট্রাইক রেট ৮০ – বিশ্বকাপে এটাই লিটন দাসের পারফরম্যান্স। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন পরিসংখ্যান রীতিমতো সর্বকালের সেরা; আর কোন টাইগার ওপেনার পারেননি এক আসরে এত রান করতে। কিন্তু তুলনা যদি করা হয় বিশ্বের সঙ্গে, তাহলে হতাশ হতেই হবে।

চলতি বিশ্বকাপ আসরের সেরা ব্যাটারদের তালিকায় প্রথম দশজনের মাঝে পাঁচজনই ওপেনার। কুইন্টন ডি কক, রাচিন রবীন্দ্র, রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নার, ডেভিড মালান – প্রত্যেকেই বড় ইনিংস খেলেছেন, সেঞ্চুরিও পেয়েছেন। অথচ লিটনের অর্জন মোটে দুইটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস, বারবার সেট হয়েও অল্পতেই থামতে হয়েছে তাঁকে। তাছাড়া তাঁর আউটের ধরনও বিরক্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নয় ম্যাচের মধ্যে দুইবার এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন এই ডানহাতি; আর দুইবারই বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বলেই ফ্লিক করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন, নেদারল্যান্ডস ম্যাচে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কিপারের গ্লাভসবন্দী হন।

আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার সাথে অবশ্য ভাল বলে আউট হয়েছিলেন তিনি। ফজল হক ফারুকীর বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়েছিলেন ১৩ রান করে; এছাড়া প্রোটিয়া ও লঙ্কানদের বিপক্ষে সরাসরি এলবিডব্লুর ফাঁদে আটকা পড়েন এই তারকা।

যদিও বাকি চার ম্যাচেই রান পেয়েছেন তিনি; সবশেষে ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ের মুখে ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে; এছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে করেছিলেন ৬৬ রান। সেদিন অহেতুক রবীন্দ্র জাদেজার উপর ছড়াও হতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি।

একই ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে; দুর্দান্ত শুরু পাওয়া সত্ত্বেও অ্যাডাম জাম্পাকে মাথার উপর দিয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন এই ওপেনার। কি জানি, বারবার এমন সফট ডিসমিসালের ফাঁদে না পড়লে হয়তো এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখা পেতে পারতেন তিনি।

লিটনের এমন খাপছাড়া পারফরম্যান্সের পেছনে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্টও দায়ী। টুর্নামেন্ট চলাকালীন দুইবার দেশে ফেরত যাওয়ার পাশাপাশি আচরণগত কারণে কয়েকজন প্রভাবশালী বোর্ড কর্তা অসন্তুষ্ট হয়েছিল তাঁর ওপর, সেজন্য তাঁকে ক্ষমাও চাইতে হয়েছিল।

কারণ যাই হোক, এই উইকেটকিপার ব্যাটার পারফর্ম করতে পারেননি সেটার মাশুল দিতে হয়েছে পুরো বাংলাদেশকে। দ্রুতই ধারাবাহিকতার সাথে বড় ইনিংস খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তাঁকে; নাহলে তামিম ইকবাল বিহীন টাইগার টপ অর্ডারের নড়বড়ে অবস্থা চলতেই থাকবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...