কাতার বিশ্বকাপের সংজ্ঞায়ন

তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। লুসাইলে মেসি ট্রফি হাতে উল্লাস করবেন নাকি ফ্রান্স নিজেদের ঘরেই রেখে দেবে বিশ্বকাপের ট্রফিটা সময়ই বলে তা। যাইহোক, লুসাইলে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস।  

প্রথম শীতকালীন বিশ্বকাপ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের বিশ্বকাপ নিয়ে বিতর্কের অন্ত ছিল না। শ্রমিকদের মৃত্যু, মানবাধিকার লঙ্ঘন, পোশাকের বিধিনিষেধ – সবমিলিয়ে ফিফা এবং স্বাগতিক দেশ ছিল ভীষণ বিপাকে। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই যেন ঘানিম আল মুফতাহ এবং মরগ্যান ফ্রিম্যান সুরটা বেঁধে দিলেন। পরের এক মাস ফুটবলে বুঁদ হয়ে রইলো গোটা বিশ্ব। নানা অঘটনের পর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স। 

প্রথম অঘটনের জন্ম দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যেরই আরেক দেশ সৌদি আরব। ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপটাই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল সৌদিরা। অন্যদিকে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথম জায়ান্ট হিসেবে বাদ পড়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই।

শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও কাই হ্যাভার্টস ম্যাজিকে ৩-২ গোলে জিতেছিল তাঁরা। কিন্তু আরেক ফেবারিট স্পেন এশিয়ার ব্রাজিলখ্যাত জাপানের কাছে হেরে যাওয়ায় শেষরক্ষা হয়নি তাঁদের। ব্যর্থতার দায় মেনে নিয়ে হ্যান্সি ফ্লিক বলেছেন, ‘পুরো বিশ্বকাপজুড়ে আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারিনি এবং সঙ্গত কারণেই আমরা বাদ পড়েছি।’

কোস্টারিকার বিপক্ষে ৭-১ গোলের বিশাল জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা স্পেনও বেশিদূর এগোতে পারেনি। আধুনিক প্রেসিং ফুটবলের সামনে মার খেয়ে গেছে লা রোজাদের টিকি টাকা। বুঝিয়ে দিয়েছে পুরনো ঐতিহ্য পেছনে ফেলে সামনে এগোনোর সময় হয়েছে জাভি-ইনিয়েস্তাদের উত্তরসূরীদের। পাসের পর পাস খেললেও ফরোয়ার্ড লাইনের ব্যর্থতা তাঁদের এগোতে দেয়নি বিশ্বকাপে। 

বিশ্বকাপে নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে স্পেনের সাবেক হয়ে যাওয়া কোচ লুইস এনরিকে বলেন, ‘যদি আমি বিশ্বকাপের একটি ব্যাপার পরিবর্তন করতে চাই, সেটা হলো পাবলো সারাবিরাকে আরো কিছুক্ষণ খেলতে দেয়া।’ টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট ব্রাজিলের ভাগ্যটা বদলায়নি।

ইউরোপজুজুতে আরো একবার আটকে গেছে ব্রাজিল। সেমিতে উঠার লড়াইয়ে টাইব্রেকারে লিভাকোভিচ নামের এক ক্রোয়াট দানবের বাঁধা পেরোতে পারেনি সেলেসাওরা। প্রফেসর তিতে অবশ্য দেরি করেননি, ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। 

অন্যদিকে মরক্কোর রূপকথার যাত্রা অব্যাহত ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিতে উঠেছিল ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যরা। সর্বশেষ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরোতে পেরেছিল তাঁরা। এবারে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, কানাডাকে নিয়ে গড়া শক্তিশালী এক গ্রুপ থেকেই তাঁরা উঠেছিল পরের রাউন্ডে।

এরপর মরক্কোতে কাটা পড়েছে স্পেন এবং পর্তুগাল। যদিও শেষ দুই ম্যাচে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে চতুর্থ হয়েই বিশ্বকাপ শেষ করেছে তাঁরা। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে না পারলেও মরক্কোর খেলা প্রশংসিত হয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আফ্রিকার ফুটবলের জন্য অনুপ্রেরণার এক নাম হয়ে থাকবেন হাকিম জিয়েশ, ইয়াসিন বোনোরা। 

গোটা বিশ্বকাপ অঘটনে পূর্ণ থাকলেও ফাইনালে উঠেছে দুই ফেবারিটই। সৌদির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারের ধকল কাটিয়ে উঠে লিওনেল মেসির দল সবার আগে পৌঁছেছে ফাইনালে। অন্যদিকে গোটা টুর্নামেন্টজুড়েই নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। দুই ক্লাব সতীর্থ মেসি এবং এমবাপ্পে তাই মুখোমুখি হবেন বিশ্ব জয়ের লড়াইয়ে।

২০১৮ বিশ্বকাপের সেই তারকাবহুল মিডফিল্ড এবার ফ্রান্স পায়নি। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন লুকাস হার্নান্দেজ, করিম বেনজেমার মতো তারকা। তবু ফ্রান্সের ছিলেন একজন জাদুকর, দিদিয়ের দেশম। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতায় গোটা দলকে একসুতোয় গাঁথার মন্ত্রটা তিনি জানতেন, দুই দশক পরেও সেই নীতিতেই এগিয়েছেন কোচ হিসেবে। গ্রিজম্যান-জিরুডরা যেন পুর্নজন্ম পেয়েছেন, অমরত্বের পথে আরেক ধাপ এগিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনার শুরুটা হয়েছিল দু:স্বপ্নের মতো। কিন্তু জুলিয়ান আলভারেজ নামের এক পরশপাথর খুঁজে পেয়েছেন লিওনেল স্কালোনি, যার জাদুতে মোহাবিষ্ট হয়েছে গোটা বিশ্ব। মেসির ফ্যানবয় থেকে হয়েছেন সতীর্থ, বিশ্বকাপে জানান দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের। অন্যদিকে শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা মেসি তো আছেন চেনা ছন্দেই। 

তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। লুসাইলে মেসি ট্রফি হাতে উল্লাস করবেন নাকি ফ্রান্স নিজেদের ঘরেই রেখে দেবে বিশ্বকাপের ট্রফিটা সময়ই বলে তা। যাইহোক, লুসাইলে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...