ছয় দশকের অপেক্ষার অবসান

ছয়টা দশক, কত কিছু বদলে গেছে এই ছয় দশকে। ইউরোপ হয়েছে আরো উন্নত। পৃথিবীর প্রতিটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ফুটবল। ইউরোপিয় ফুটবলের ধার বেড়েছে, মান বেড়েছে, আরো বেড়েছে খেলোয়াড়, ক্লাব সবকিছুর দামটাও।

কিন্তু এই ষাট বছর ধরে একটি টিম অপেক্ষায় ছিলো। হারানোর অপেক্ষায় বার্সেলোনাকে। যেই বার্সা এখন ইউরোপিয় ফুটবলের পরাশক্তি। অবশেষে আক্ষেপের হয়েছে অবসান। মিলিছে বহুল প্রতিক্ষিত জয়ের সন্ধান। জিতেছে এস এল বেনফিকা, হেরেছে বার্সেলোনা। দীর্ঘ ছয় দশক শেষে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বেনফিকার ঘরের মাঠ এস্টাদিও দা লুজ- এ খেলতে নামে পর্তুগিজ প্রিমিয়ার লিগের টেবিলের শীর্ষে থাকা দল এস এল বেনফিকা এবং তাঁদের প্রতিপক্ষ লা লিগায় ধুকতে থাকা বার্সেলোনা।

বার্সার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি ছেড়েছেন ক্যাম্প ন্যু। তার উপর দলের আক্রমণের ভাগের খেলোয়াড়দের অধিকাংশ রয়েছেন ইনজুরিতে। তাছাড়া রক্ষণের দূর্বলতা রয়েছে বার্সা শিবিরে গত তিন সিজন ধরেই।

অগোছালো, মাঠের পার্ফরমেন্সে দূর্বলতা কিন্তু কাগজে কলমে জায়েন্ট তকমা নিয়ে এদিন লিসবনে খেলতে নামে রোনাল্ড কোমেনের দল। অপরদিকে লিগের টানা সাত ম্যাচে জয়ী বেনফিকা পূর্ন উদ্যম ও ঘরের দর্শকদের সমর্থন সাথে নিয়ে খেলতে নামে।

ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় বার্সার ভঙ্গুর রক্ষণে প্রথম আঘাত হানেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজ। গোলপোস্টের বাম কর্ণার দিয়ে নিজের প্রথম গোল আদায় করেন নুনেজ। আশায় বুক বাঁধতে থাকেন বেনফিকার সমর্থকেরা। এ বুঝি এলো সেই জয়, হবে প্রতিক্ষার অবসান।

এর আগে একবারই মাত্র ইউরোপিয়ান কোন প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনাকে হারাতে পেরেছিল বেনফিকা। ১৯৬০/৬১ মৌসুমের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে সেবার বার্সা হেরেছিল ৩-২ ব্যবধানে। সেকালের পর্তুগাল তথা বেনফিকার সবচেয়ে বড় তারকা ইউসেবিও ছাড়াও দল জিতেছিল।

ইউসেবিও ফুটবল ইতিহাসে সেরাদের একজন। যিনি তাঁর একক নৈপুণ্যে পর্তুগালকে তুলেছিলেন বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল অবদি। একটা দল কতটা বিধ্বংসী হলে তাঁর সেরা তারকা ছাড়াই জিতে নিতে পারে একটি ফাইনাল। ঠিক ততটাই বিধ্বংসী ছিল তৎকালীন বেনফিকা। ১-০ তে পিছিয়ে গিয়েও তাঁরা জিতেছিল।

এরপর বার্সার বিপক্ষে আর জয়ের দেখা পায়নি বেনফিকা। সেই জয়ের প্রত্যাশা আরো বাড়িয়ে দেয় ৬৯ মিনিটে আরো প্রবল করেন বেনফিকার আরেক আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় রাফা সিলভা। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি আদায় করেন তিনি। আশার আলো প্রখর হতে শুরু করে।

গত ম্যাচের আগে ইউরোপিয় মহাদ্বৈরথে বার্সা-বেনফিকার দেখা হয়েছিল সাত বার। তাঁর মধ্যে বেনফিকার প্রথম এবং শেষ জিতেছিল সেই বছর ষাটেক আগে। পক্ষান্তরে বকাতালানরা জয় পেয়েছে তিন বার ও ড্র হয়েছে তিনবার।

নিজেদের রেকর্ড গড়া জয় সুনিশ্চিত করতে এবং দু’দলের পরিসংখ্যানে নিজেদের পাল্লা খানিক ভারী করতে বেনফিকাকে অপেক্ষা করতে হয় ম্যাচের ৭৯ মিনিট অবদি। ৭৮ মিনিটে বার্সা ডিফেন্ডার সার্জিনো ডেস্ট ডি-বক্সের মধ্যে হাত দিয়ে বল স্পর্শ করায় জয় সুনিশ্চিত করার সুযোগ এসে হাজির হয় বেনফিকার সামনে পেনাল্টি রুপে।

ডারউইন নুনেজের গোল সংখ্যা বাড়াতে কিংবা তাঁর উপর ভরসা রেখেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পেনাল্টি নেওয়ার। তিনি ভুল করেননি। চার্লস ডারুইনের বিবর্তনবাদের সর্বউৎকৃষ্ট সংস্করণে থাকা ডারউইন নুনেজ তাঁর কি আর ভুল করা সাজে?

বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মার্ক এন্ড্রে টারস্টেগেনকে রীতিমত বোকা বানিয়ে বার্সার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন নুনেজ। আহা! কি মধুর ইতিহাস গড়া। সমুদ্র সমান অপেক্ষার অবসান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link