ঋদ্ধিমান সাহা বক্স অফিস ছিলেন না কখনও। তাঁর ব্যাটিংয়ে পিকচার পারফেক্ট সৌন্দর্য খুঁজলে ভুল করবেন। তবে, তিনি চীর লড়াকু। পুরোটা ক্যারিয়ারজুড়েই লড়াই করে বাঁচার গান গেয়েছে তাঁর ব্যাট। বাঙালির ক্রিকেট পাতে ঋদ্ধিমান সাহা নামের আইটেমটা খুবই মুখরোচক। সেই স্বাদের পুরোটাও এই লড়াই দিয়ে ভরা।
লড়াই করার মানসিকতা কিংবা ব্যাটিং শৈলী – কোনো কিছু দিয়েই হয়ত তিনি আধুনিক ক্রিকেট ভক্তদের মুগ্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু, তারপরও ক্রিকেট ইতিহাসের পাতা তাঁকে মনে রাখতে বাধ্য। আর সেটা হল তিনি উইকেটরক্ষক হিসেবে ছিলেন নিজের সময়ের সেরা। তাঁর প্রতি অবিচার করেছে ভারত – এই কথা বলার লোকেরও অভাব নেই।
কেবল একজন ঋদ্ধিমান সাহা ছিলেন বলেই স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনিও উইকেটের পেছনের জায়গাটা নির্ভার হয়ে ছেড়ে দিতে পেরেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা ছিল বিরাট কোহলি অধিনায়ক হওয়ার পরও। এমন সময় ঋষাভ পান্ত নামের একজন ‘ফেনোমেনন’-এর আবির্ভাব হয় ভারতীয় ক্রিকেটে।
উইকেট কিপিং স্কিলে ঋদ্ধিমানের চেয়ে হাজার গুণ পিছিয়েই থাকবেন পান্ত। কিন্তু ব্যাটিং? ওই যে সেই প্রথম কথা – ঋদ্ধি তো বক্স অফিস নন। তিনি চাইলেই আধুনিক ঘরানার ব্যাটিং করতে পারেন বটে, তবে সেটা ঋষাভ পান্তের মত নিয়মিত নয়। ঋষাভ পান্ত হওয়া ছেলের হাতের মোয়া নয়, কেউ কেউ স্রেফ ঋদ্ধিমান সাহা হয়েই হারিয়ে যান।
হ্যাঁ, হারিয়েই গিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। তা না হলে, বাঙালির আদরের এক সংগ্রামী ক্যারিয়ারের বিদায় বেলায় কোনো আওয়াজ হবে না কেন! সত্যিই, খুব দ্রুতই হারিয়ে গেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। ভারতের সাদা পোশাকের জায়গাটা একবার হারিয়ে ফেলার পর সেই অর্থে আর কখনওই নিজেকে ফিরে পাননি।
ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি নিজের উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছেন। টানা আইপিএল তিনি খেলেছেন। মাঝে মধ্যে ঝড়ও তুলেছেন। তবে, সেটা কখনওই আলোচনায় থাকার মত যথেষ্ট ছিল না।
তবে, দিন শেষে এটা সত্যি যে, তাঁর মত লড়াকু ক্রিকেটার আজকালকার ক্রিকেট দুনিয়াতে বিরল। আসলে, এখন তাঁর মত চরিত্র খুঁজে পাওয়াটাই মুশকিল। তিনি সত্যিকারের দক্ষতার পূজারী। যেটা দিনের পর দিন তিনি উইকেটের পেছনে করে দেখিয়েছেন। কিন্তু, ওটা তো ডার্টি ওয়ার্ক। ওই শিল্প তো পেটে ভাতের সন্ধান দেয় না। তাই তো, লোকে ঋষাভ পান্ত খুঁজে বেড়ায়, ঋদ্ধিমান সাহারা হারিয়ে যান অনন্তকালের আকাশে। তাঁদের নিয়ে দিন শেষে আক্ষেপ করার জন্যও কোথাও কেউ নেই!