ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারের অতীত এবং ভবিষ্যত

মজার ব্যাপার হলো আজ থেকে ১৫ বছর আগে আইসিসি ক্রিকেটে 'সুপার সাব' প্রচলন করেছিল। ২০০৫ সালের জুলাইতে আইসিসি প্রথমবারের মতো জানায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলগুলো চাইলে একজন বদলি খেলোয়াড় নামাতে পারবে।

ফুটবল, রাগবি কিংবা বাস্কেটবলে বদলি খেলোয়াড় নিয়মটা বেশ পুরনো। এমনকি বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামার পর ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দিয়েছেন এমন ঘটনাও হরহামেশাই ঘটে। তবে ক্রিকেটের গল্পটা খানিক আলাদা, ২০২৩ আইপিএলে ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নামে চালু করা হয়েছে বদলি খেলোয়াড়ের নিয়ম। ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের সাফল্য সবাইকে বাধ্য করেছে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে। 

মজার ব্যাপার হলো আজ থেকে ১৫ বছর আগে আইসিসি ক্রিকেটে ‘সুপার সাব’ প্রচলন করেছিল। ২০০৫ সালের জুলাইতে আইসিসি প্রথমবারের মতো জানায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলগুলো চাইলে একজন বদলি খেলোয়াড় নামাতে পারবে। কিন্তু খুব বেশিদিন আলোর মুখ দেখেনি সেটা।

সেই সময়ে ওয়ানডেতে ক্রিকেটের গতিপথ পাল্টে দিতেই মূলত এই নিয়ম চালু করে আইসিসি। যাতে করে অলরাউন্ডাররা আরো বেশি করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। কি ছিল সেই ‘সুপার সাব’ এর নিয়ম? 

তখনকার সময়ে ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের অধিনায়ককে একাদশের পাশাপাশি একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের নাম দিতে হতো। ম্যাচের সময় চাইলে দলগুলো সেই খেলোয়াড়কে একাদশের কারো বদলে মাঠে নামাতে পারতো।

কিন্তু কয়েকদিন পার হতেই এই নিয়মকে ঘিরে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। দেখা যেত বেশিরভাগ দলই সুপার সাব হিসেবে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার খেলানোর চেষ্টা করতো। এতে করে যে দল টসে জিততো তাঁরা অতিরিক্ত সুবিধা পেতো। কেননা টসে জয়ী দল ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার উপরই নির্ভর করতো সুপার সাবের কার্যকারিতা।

অনেক সময়ই দেখা যেত কোনো দল সুপার সাব হিসেবে কোনো ব্যাটারকে নিয়েছে, কিন্তু টসে হেরে তাদেরকেই আগে ব্যাট করতে হচ্ছে। ফলে পুরোপুরি এক পাক্ষিক হয়ে যেত সুপার সাবের ব্যবহার। এ যেন এগারোজনের বিপক্ষে বারো জনের অসম এক লড়াই। 

সেই কারণেই মাঠে কার্যকরের মাত্র নয় মাসের মাথায় ২০০৬ সালে আইসিসি বাধ্য হয় এই নিয়ম বাতিল করতে। মাঝে এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য না করলেও প্রায় দেড় যুগ পর ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সুবাদে অতিরিক্ত ক্রিকেটার নামানোর নতুন যুগে প্রবেশ করলো ক্রিকেট। ২০২৩ আইপিএলে এই নিয়ম চালু হবার আগে অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাঞ্চাইজি লিগ বিগ ব্যাশ চালু করেছিল ‘এক্স ফ্যাক্টর’। সেই নিয়মের আওতায়ও একজন বদলি খেলোয়াড় নামাতে পারতো দলগুলো। 

আইপিএলের বর্তমান ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়মটা অবশ্য টসের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং ম্যাচের আগে চারজন খেলোয়াড়ের নামের তালিকা দেবার পাশাপাশি ম্যাচের যেকোনো সময় দলগুলো চাইলে একজন খেলোয়াড় নামাতে পারে বিধায় অতিরিক্ত সুবিধা পায় না কেউই। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব এবারে বেশ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে আইপিএলের এই উদ্ভাবনকে। 

আইপিএলে সাফল্যের পর এবারে নড়েচড়ে বসেছে আইসিসিও। জানিয়েছে বদলি খেলোয়াড়ের নিয়ম নিয়ে নতুন করে ভাবছে তাঁরাও। অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাই বদলি খেলোয়াড় ব্যবহারের নিয়ম চালু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভবিষ্যতের ক্রিকেটটা তাই আর সীমাবদ্ধ থাকছে না এগারো জনে, বরং ক্রিকেটটা পরিণত হবে বারো জনের লড়াইয়ে। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...