ডেটলাইন আগস্ট, ২০২১। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি। ক্যারিবিয়ানরা প্রথমে ব্যাট করছে। দ্বিতীয় ওভার বল করতে গেলেন জশ হ্যাজেলউড। ক্রিস গেইল তৃতীয় বল থেকে চালাতে শুরু করে দিলেন। হ্যাজেলউড সাধারণত যা করেন, অর্থাৎ অফ-মিডিলে ব্যাক অফ লেন্থ। অর্থাৎ প্রায় আদর্শ টেস্ট ম্যাচ লেন্থ। গেল হ্যাজেলউডের টেস্ট লেন্থ বোলিং থেকে ওভারের শেষ ৪ বলে নিলেন ১৮ রান।
ডেটলাইন অক্টোবর, ২০২১। অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১। সেই হ্যাজেলউড। সেই টেস্ট লেন্থ। এবার কিন্তু শ্রীলংকার দুই ওপেনার, পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল পেরেরা, কেউই হ্যাজেলউডকে আক্রমণ করলেন না। দুজনেই মোটের ওপর খুচরো রান নেবার চেষ্টা করতে লাগলেন। একটা বল হ্যাজেলউড একটু শর্ট ফেললেন এবং পেরেরা পুল করে ৪ রান পেলেন।
এই গৌরচন্দ্রিকা টুকু করার কারণ, হ্যাজেলউডকে কিভাবে খেলা যেতে পারে, এবং আপামর দল তাঁকে কিভাবে খেলে তার ফারাকটা বোঝানো।
গত দেড় বছরে হ্যাজেলউড খেলেছেন ১২ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সেই ১২ ম্যাচে তিনি করেছেন ২৮০ বল। তার মধ্যে ১৬৮ টি বল (৬০%) পাওয়ারপ্লে তে, ৪২ টি বল (১৫%) মাঝের ওভারে (৭-১৫), এবং ৭০ টি বল (২৫%) ডেথে। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়া তাঁকে মূলত পাওয়ারপ্লে বোলার হিসাবেই ব্যবহার করে থাকে। আর করবে নাই বা কেন? পাওয়ারপ্লেতে তাঁর ইকোনোমি ৫.৩৬। মাঝের ওভারে ৬.২৯ এবং ডেথে ৯.৭৭।
হ্যাজেলউডের ১২ টি সাম্প্রতিকতম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার করা মোট পাওয়ারপ্লে ওভারের ৩৮.৮৯% করেছেন হ্যাজেলউড। এই লেখাটা লিখবার জন্যেই হ্যাজেলউডের খেলা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলির ধারাভাষ্য পড়ছিলাম।
তা পড়তে পড়তে দেখলাম, পরিস্থিতি যেমনই হোক, হ্যাজেলউড পাওয়ারপ্লে তে প্রায় একই ভাবে টেস্ট ম্যাচ লেন্থে বল করে গেছেন। এবং বিপক্ষের ওপেনাররা হ্যাজেলউডের সেই বোলিং অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথে খেলেছেন। ব্যতিক্রম ওই ক্রিস গেইলের ম্যাচটি।
এই বিশ্বকাপেও তো, প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হ্যাজেলউডের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই কেমন যেন গুটিয়ে রইলো। ফলত পাওয়ারপ্লে তে ২ ওভার করে বেরিয়ে গেলেন হ্যাজেলউড। ফিঞ্চ চান হ্যাজেলউডকে পাওয়ারপ্লেতে যত বেশি সম্ভব ওভার করাতে। কারণ শেষের দিকে হ্যাজেলউড স্বভাবতই মার খেয়ে যান। এবং কামিন্স এবং স্টার্ক রয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডেথ বোলার হিসাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিপক্ষ দলগুলি হ্যাজেলউড ও ফিঞ্চের এই পরিকল্পনা কিভাবে ভেস্তে দিতে পারেন? উত্তর হলো শুরুতে এমন কাউকে পাঠানো, যাঁর লেন্থ বলের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক রেট ভালো।
সামনের পা ক্লিয়ার করে, লেগ সাইডে স্লগ করতে পারেন। কিন্তু সুনীল নারাইনের মতো বেশি পেসের বিরুদ্ধে অপটু কেউ হলে হবে না। ভারতের প্রেক্ষাপটে বললে হার্দিক পান্ডিয়ার মতো কেউ, যিনি লেন্থ বল ভালো খেলেন, তাঁকে ওপেনে পাঠানো। হ্যাঁ শুনে অবশ্যই আশ্চর্য্য মনে হচ্ছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ এই বিশ্বকাপে অনেকটাই সেরা চার বোলারের ওপর নির্ভরশীল। এবং প্রতি ম্যাচেই তাঁরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং আক্রমণ শানাতে পারছেন।
হ্যাজেলউডকে শুরু থেকেই মারতে শুরু করলে হয়তো তিনি এক আধটা উইকেট নেবেন। কিন্তু সেই ঝুঁকি নেবার সাহসটা থাকতে হবে। কারণ এই সুইসাইড বোম্বার যদি খেটে যায়, চাপ গিয়ে পড়বে স্টোয়িনিস-ম্যাক্সওয়েল দের ওপর। ক্রিস গেইল আগেই করে দেখিয়েছেন, জশ বাটলার এই কাজটা শুরু থেকেই করেছেন। বাকিদের কেও সাহস টা দেখাতে হবে। নাহলে অজিরা ড্যাং ড্যাং করে সেমি-ফাইনালে।