পোরেল পাখি, বাংলা থেকে দিল্লীর দৃশ্যপটে

রোহিত শর্মার চোখেমুখে তখন অবিশ্বাসের ছাপ। মুস্তাফিজুর রহমানের আউটসাইড অফের দিকে আসা বলটি ইয়র্কার জোনেই ছিল। রোহিত শর্মা সেটিই থার্ড ম্যানের দিকে ঠেলে দিতে চাইলেন। ব্যাটের কানায় লেগে বলটা পিছনে থাকা উইকেটরক্ষকের নাগালের বাইরেই ছিল। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বলটি গ্লাভসবন্দী করেন দিল্লী ক্যাপিটালসের উইকেটরক্ষক অভিষেক পোড়েল। 

রোহিত শর্মার চোখেমুখে তখন অবিশ্বাসের ছাপ। মুস্তাফিজুর রহমানের আউটসাইড অফের দিকে আসা বলটি ইয়র্কার জোনেই ছিল। রোহিত শর্মা সেটিই থার্ড ম্যানের দিকে ঠেলে দিতে চাইলেন। ব্যাটের কানায় লেগে বলটা পিছনে থাকা উইকেটরক্ষকের নাগালের বাইরেই ছিল। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বলটি গ্লাভসবন্দী করেন দিল্লী ক্যাপিটালসের উইকেটরক্ষক অভিষেক পোরেল।

এমন ক্যাচের পর রোহিত শর্মাকে তো বিস্ময়ে ভাসালেনই, সঙ্গে কমেন্ট্রি বক্সে থাকা জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের কাছ থেকেও আদায় করে নিলেন ভূয়সী প্রশংসা। হার্শা ভোগলে বলে উঠলেন, ‘যে ক্যাচটি এই মুহূর্তে সে ধরলো তাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চের নজরে সে এখনই চলে এসেছে।’

দিল্লী ক্যাপিটালসের নিয়মিত উইকেটরক্ষক ঋষাভ পান্ত এবার আইপিএল খেলতে পারছেন না। গত বছরের ডিসেম্বরে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে আছেন বেশ ক’মাস ধরেই। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আইপিএলেও দর্শক হয়ে মাঠের বাইরে রয়েছেন পান্ত। দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের অনুপস্থিতিতে দিল্লী ক্যাপিটালসের টিম ম্যানেজমেন্টও স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়ে যায়।

অবশ্য দিল্লীর এই দলটাতেই ছিলেন আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার সরফরাজ খান। যিনি আবার রঞ্জি ট্রফি থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। কিন্তু দিল্লীর হয়ে সেই ফর্ম আর আইপিএল টেনে আনতে পারলেন না সরফরাজ। তাই দিল্লীর ম্যানেজমেন্ট প্রথম ম্যাচের পরই একজন পুরোদস্তুর উইকেটরক্ষক খেলানোর দিকে ছুটলেন।

ঋষাভ পান্তের ইনজুরির কারণে তাঁর জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছিল অভিষেক পোরেলকে। মাত্র ২০ বছর বয়সী এ উইকেটরক্ষক উঠে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বেঙ্গলের হয়ে রঞ্জি ট্রফি দিয়ে প্রথম নজরে পড়া। এরপর সরাসরি আইপিএলের মঞ্চে পদার্পণ। অবশ্য পোরেলের এ পথচলা সহজ হয়ে যায় দিল্লী ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর সৌরভ গাঙ্গুলীর কল্যাণে।

বাংলার ক্রিকেটের সাথে অতপ্রোতভাবে যুক্ত গাঙ্গুলী। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি থাকাকালীন বেশ কিছু ক্রিকেটার তাঁর নজরেও ছিল। এর মধ্যে অভিষেক পোরেলও ছিল। তাই যখন দিল্লীর একজন উইকেটরক্ষক প্রয়োজন হলো, তখন সৌরভের সিদ্ধান্তেই দলভুক্ত হয়ে যান বেঙ্গলের এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

অবশ্য অভিষেক পোরেল নিজেও শেষ মৌসুমে দারুণ ফর্মে ছিলেন। আর সেই ফর্মই মূলত তাঁকে দিল্লীর দুর্গে পান্তের জায়গায় ঠাঁই দেয়। গেল বারের রঞ্জি ট্রফিতে সর্বোচ্চ ৪০ টি ডিসমিশালের রেকর্ড গড়েছিলেন পোরেল। এ ছাড়া ভিনু মানকড় ট্রফিতে ব্যাট হাতেও দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

রঞ্জি ট্রফির আগে অভিষেক পোরেল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলেরও অংশ ছিলেন। শেষবারের যুব বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে খেলেননি যদিও। তবে কোভিডের কারণে ভারতের যে ৫ জন ক্রিকেটার ছিটকে গিয়েছিলেন, তাদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যাওয়া ৫ ক্রিকেটারের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

ঐ বিশ্বকাপের পরই বেঙ্গলের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পান অভিষেক পোরেল। মূলত বেঙ্গলের নিয়মিত উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার বেঙ্গল ছেড়ে ত্রিপুরাতে যোগ দেওয়ায় কপাল খুলে যায় পোরেলের। বেঙ্গলের হয়ে প্রথম আসরেই নিজেকে মানিয়ে নেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

উইকেটের পিছনে বেঙ্গলকে সামলানো ছাড়াও ব্যাট হাতে নিজের প্রথম আসরে ৩৩.৩৪ গড়ে ৩০৩ রান করেন অভিষেক। আর এতেই নিজেকে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যান তিনি। ঋষাভ পান্তের অনুপস্থিতিতে বিষ্ময়করভাবে দিল্লীর হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে যান এ ক্রিকেটার।

দিল্লীর হয়ে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতেও অবশ্য খারাপ করেননি অভিষেক। শেষ দিকে ব্যাটে এসে ১১ বলে ২০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে তো গ্লাভস হাতে দারুণ সব ক্যাচ নিয়ে চমক দেখিয়েই যাচ্ছেন। তবে ব্যাট হাতে এখনো সেই অর্থে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি।

অবশ্য দেশি বিদেশী তারকা ব্যাটারদের ভিড়ে লোয়ার মিডল অর্ডারেই জায়গা হচ্ছে পোরেলের। এমন সময়ে ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেটে থিতু হওয়ার সুযোগই থাকে না, পরিস্থিতির আবদার মিটিয়ে অলআউট অ্যাটাকে যেতে হয়। পোরেলকেও সেই অ্যাপ্রোচেই ব্যাটিং করতে দেখা গিয়েছে।

তবে সেভাবে ব্যাট হাতে সফল হতে পারছেন না এ ক্রিকেটার। অবশ্য এখন পর্যন্ত ম্যাচই খেলেছেন মাত্র ৩ টা। সময় গড়ানোর সাথে সাথে চমক জাগানো এই উইকেটরক্ষক নিশ্চয়ই নিজের ব্যাটিং দিয়েও সবাইকে বিস্ময়ে ভাসাবেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...