টেস্ট ক্রিকেট যেন জীবনেরও গল্প

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন, শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন।

জীবনের আরেক অর্থ যদি ক্রিকেট হয়, তাহলে কেমন হয়? আসলেই কোথাও গিয়ে যেন জীবন আর ক্রিকেট মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জীবনের প্রতি মুহূর্তেই চলার পথে মানুষ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, আর মানুষই পারে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে। ক্রিকেট যদি জীবন হয় সেই খেলার রঙ্গমঞ্চেও খেলোয়াড়দের বসতে হয় পরীক্ষায়, আর সেই ক্রিকেট নামক খেলাটির মধ্যে দিয়ে সেই পরীক্ষার নামটি হয় টেস্ট ক্রিকেট।

হ্যাঁ, টেস্ট নামটার মধ্যেই তো পরীক্ষা কথাটা লুকিয়ে আছে, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলে তবেই তো কোনো ক্রিকেটারের মোক্ষলাভ, টেস্ট ক্রিকেট ই তাই ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা, যেখানে খেলোয়াড়দের চারিত্রিক দৃঢ়তার সাথে, স্কিল, টেকনিক, ধৈর্য সব কিছুরই পরীক্ষা হয়ে যায়।

টেস্ট ক্রিকেট চালু হয় ১৮৭৭ সাল থেকে, তারপর থেকে কালে কালে দেশে দেশে টেস্ট ক্রিকেটের মধ্যে দিয়ে বিশ্বক্রিকেট পেয়েছে অসংখ্য অমূল্য রত্ন, অসংখ্য সব কিংবদন্তীকে, যাঁরা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। আজও মানুষ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে, লেগ স্পিনের কিংকবদন্তি শেন ওয়ার্নের শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি নিয়ে কিংবা ব্রায়ান চার্লস লারার অপরাজিত ৪০০ নিয়ে আলোচনা করে।

মনের মনিকোঠায় রেখে দেয় গ্যারি সোবার্সের দুর্ধর্ষ সব পারফরমেন্স, শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ১৬ বছর বয়সে ওয়ানসিম আকরাম, ইমরান খানদের সামনে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই, ক্যারিবিয়ান দুর্দমনীয় পেস আক্রমণের সামনে সুনীল গাভাস্কারের পাল্টা লড়াই কিংবা মুত্তিয়া মুরালিধরণের স্পিনের মায়াজালে ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠানো।

মানুষ এখনো নস্টালজিক হয় ২০০১ সালের সেই ঐতিহাসিক ইডেন টেস্ট ম্যাচে সৌরভের ভারতের ফলো অনের পরেও অসাধারণ টেস্ট জয় বা বছর খানেক আগেই হেডিংলি টেস্টে বেন স্টোকসের ক্যাঙ্গারু বধ নিয়ে। হ্যাঁ সবকিছুই ঘটেছে টেস্ট ক্রিকেটে। ভারতের একটা অ্যাডিলেড টেস্ট জয়, শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয় বা অ্যাশেজ সিরিজের উত্তেজনা একটা গোটা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগেও মিলবে না।

টেস্ট ক্রিকেট মানে ভাঙা গড়ার খেলা। টেস্ট ক্রিকেট মানে পাঁচ দিনের পরীক্ষা, অসম্ভব ধৈর্য ও মানসিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা লাগে এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে, যার প্রতি ঘন্টায় বদলে যেতে পারে ম্যাচের রঙ। জীবনের পরীক্ষায় কখনো কখনো একবার ব্যর্থ হলে যেমন আরেকটা সুযোগ আসতে পারে, টেস্ট ক্রিকেটও খেলোয়াড়দের আরেকটা সুযোগ দেয় ফিরে আসার জন্য, থাকে দ্বিতীয় ইনিংস।

সাদা পোশাকে  কোনো টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম দিন লাল টুকটুকে বলটা হাতে থাকা এক ফাস্ট বোলারের মুখোমুখি হওয়া কোনো ওপেনারের সামনে জীবনের এক পরীক্ষা ই যেন। কোনো দুই ব্যাটসম্যানের বিশাল পার্টনারশিপের সামনে বোলারদের পরীক্ষাও নেয় এই টেস্ট ক্রিকেটই। প্রথম ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হয় একটা খারাপ বলকে বাউন্ডারিতে পাঠানোর জন্য, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হয় ব্যাটসম্যানের একটা ভুলের অপেক্ষায়।

হ্যাঁ, মানসিক কাঠিন্য, চরিত্র এসব কিছুরই এক চরমতম মঞ্চ একজন ক্রিকেটারের কাছে টেস্ট ক্রিকেটটাই। যেখানে সত্যিই ক্রিকেট যেন জীবনের গল্পও বলে যায়, তাই না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link