জীবনে সবচেয়ে বেশি স্ট্রেসে ছিলাম কোন সময়ে? – এই প্রশ্ন আসলে আমি অবশ্যই ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা বলি। সেই ম্যাচে আমি ছিলাম দ্বাদশ ব্যক্তি।
সনাথ (জয়াসুরিয়া) আর কালু (রমেশ কালুভিতারানা) রান তাড়া করতে নেমে খুব দ্রুত আউট হয়ে যায়। তখন আমাদের হয়ে ব্যাট করছিল অরবিন্দ ডি সিলভা ও আসাঙ্কা গুরুসিনহা।
আরও পড়ুন
- সেটা অবশ্যই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস
- ডেভ হোয়াটমোর ও নস্টালজিক ১৯৯৬!
- উইলস পাক-ভারত একাদশ: অভিনব এক ইতিহাস
- বিশ্বমঞ্চে লঙ্কাকাণ্ড
- ভীমতেজী এক লঙ্কান সিংহ
তখন পানি পানের বিরতি ঘনিয়ে আসছিল। আমি ছিলাম বার্তাবাহক। আমাকে একে একে এসে অনেকেই নানারকম বার্তা দিচ্ছিল মাঠে যারা আছে তাঁদের জানানোর জন্য।
একে একে ড্রেসিংরুমে এসে সবাই এটা ওটা বলছিল। ওই সময় কে যেন বললো, ‘অরবিন্দকে ওটা করতে বলো।’ আবার কে যেন বললো, ‘গুরুকে বলবে ও যেন শুধু স্পিন বোলিংয়ে পেটাতে পায়, পেস বোলিংয়ে না।’
আমি কারো কথা শুনছিলাম, কারোটা কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিল না। সিঁড়ি দিয়ে কেবল নামবো তখন। দেখলাম ডেভ হোয়াটমোর (শ্রীলঙ্কা দলের তখনকার কোচ) আসছেন। আমাকে কি যেন বলে বুঝিয়ে দিলেন মাঠে অরবিন্দ আর গুরুকে বলতে। তখন আমার ইংরেজি ছিল যাচ্ছেতাই। আমি কিছুই বুঝলাম না। শুধু ওকে বললাম, ‘ওকে ডেভি!’ বলেই মাঠে দৌঁড় দিলাম।
যখন সেন্টার উইকেট পর্যন্ত পৌঁছালাম তখন সব কিছু গুলিয়ে ফেলেছি। খুব স্ট্রেস লাগছিল। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারলাম, ‘ওয়েল প্লেড আইয়া (ভাই), কিপ গোয়িং।’ এরপর বিরতি শেষে আবার দৌঁড়ে চলে আসলাম।
ড্রেসিং রুমে ফিরলাম। তখন আবারো সবাই জেঁকে বসলো। ‘পুষি, বলেছো তো?’, ‘অ্যাই আমি যেটা বলেছিলাম, ওটা বলে দিয়েছো তো?’ সবাইকেই আমি হাসিমুখে হ্যা বললাম। তখন ডেভ আমার কাছে আসলো। কি যেন জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে। আমি কিছুই বুঝলাম না। শুধু বুঝলাম যে ওই মেসেজটার ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করছিল। আমি মাথা নেড়ে দিব্যি বলে দিলাম, ‘হ্যা, আমি বলেছি।’
বাকিরা আমার কথা বিশ্বাস করে ফেললেও, ডেভের চেহারা দেখে বুঝলাম যে – ওর আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না!
ওইরকম আকাশ সমান চাপের মুহূর্ত আমার জীবনে আর আসেনি। বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত আমি কোনো দিনও ভুলবো না। তবে, সেদিন যে আমি একটা বার্তাও ঠিক ঠাক মত মাঠে পৌঁছাতে পারিনি সেটাও কোনো দিন ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়!
____________________
এই ভদ্রলোকের নাম রবিন্দ্র পুষ্পাকুমারা। ডান হাতি এই ফাস্ট বোলার শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন ২৩ টি টেস্ট ও ৩১ টি ওয়ানডে। জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলেন ২০০১ সালে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন। ফাইনালে ছিলেন দ্বাদশ ব্যক্তি। তাই, নিয়ম অনুযায়ী মাঠে পানি পানের বিরতির সময় তিনি প্রবেশ করার এখতিয়ার রাখেন। যদিও, তাঁর অপটুতায় বাড়তি কোনো সুবিধা হয়নি লঙ্কানদের। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা তিনি করেছেন ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে।
পুষ্পাকুমারা না পারলেও কোনো ক্ষতিও হয়নি। আন্ডারডগ হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাতে অর্জুনা রানাতুঙ্গার দল। ৪২ রানে তিন উইকেট, ও পরে রান রান তাড়া করতে নেমে ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন অরবিন্দ ডি সিলভা।