উইলস পাক-ভারত একাদশ: অভিনব এক ইতিহাস

লঙ্কান বোর্ড প্রতিবেশী ও সহ-আয়োজক ভারত এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান কি পারবে নিজেদের মধ্যকার বৈরিতা ভুলে একসাথে লঙ্কানদের পাশে দাঁড়াতে? উল্লেখ্য, সেই ৮৯/৯০ মৌসুমের পর ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের সাথে কোন সিরিজ খেলতে সম্মত হয় নি!কিন্তু সবাইকে চমকে ভারত, পাকিস্তান বোর্ড শুধু সাহায্যের হাতই বাড়িয়ে দিল না, আরও বড় কিছু করল! দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলো যৌথ একাদশ গঠন করে তারা লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের একটি ম্যাচ খেলবে। সেটাও খোদ কলম্বোতে!

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল সম্মিলিতভাবে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বকাপ শুরু হবার কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা দেয় তাঁরা ‘নিরাপত্তা-জনিত’ কারণে শ্রীলঙ্কায় কোন ম্যাচ খেলতে যাবে না! ব্যাপারটি শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, পুরো বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির উপর বড় আঘাত ছিল।

বিব্রত লঙ্কান বোর্ড প্রতিবেশী ও সহ-আয়োজক ভারত এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান কি পারবে নিজেদের মধ্যকার বৈরিতা ভুলে একসাথে লঙ্কানদের পাশে দাঁড়াতে? উল্লেখ্য, সেই ৮৯/৯০ মৌসুমের পর ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের সাথে কোন সিরিজ খেলতে সম্মত হয় নি!

কিন্তু সবাইকে চমকে ভারত, পাকিস্তান বোর্ড শুধু সাহায্যের হাতই বাড়িয়ে দিল না, আরও বড় কিছু করল! দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলো যৌথ একাদশ গঠন করে তারা লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের একটি ম্যাচ খেলবে। সেটাও খোদ কলম্বোতে!

যৌথ একাদশের নাম দেয়া হল উইলস ইন্ডিয়া পাকিস্তান ইলেভেন। অধিনায়ক আজহারউদ্দিন এবং ম্যানেজার ইন্থিখাব আলম। দলের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন-শচীন টেন্ডুলকার, সাইদ আনোয়ার, আমির সোহেল, ইজাজ আহমেদ, অজয় জাদেজা, রশিদ লতিফ, ওয়াকার ইউনুস, ওয়াসিম আকরাম, অনিল কুম্বলে এবং আশিষ কাপুর।

লঙ্কান একাদশের অধিনায়ক ছিলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গে এবং বাকি সদস্যগণ ছিলেন- জয়সুরিয়া, কালুভিথারানা, গুরুসিংহা, আতাপাতু, তিলকরত্নে, চন্দনা, ধর্মসেনা, ভাস, মুরালি এবং পুস্পকুমারা। হেভিওয়েটদের মধ্যে শুধু অরবিন্দ ডি সিলভা ছিলেন না।

খেলা অনুষ্ঠিত হল ১৩ ফেব্রুয়ারি। ৪০ ওভারের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করতে নামে।

শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে তারা চাপের মুখে পড়ে যায়। প্রথমে ওয়াসিমের বলে কালুভিতারানাকে তালুবন্দী করেন শচিন! অফিশিয়াল স্কোরার ‘c Tendulkar b Wasim Akram’ লেখার সময় নিশ্চয়ই উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছিলেন! কারণ, এরকম ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়া কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়! অপর উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জয়সুরিয়াকে প্যাভিলিয়নে ফেরান ওয়াকার ইউনুস। ক্লিন বোল্ড।

রানাতুঙ্গে এবং গুরুসিংহা ৭০ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরপর আর কোন কার্যকরী জুটি গড়ে না ওঠায় লঙ্কান দল শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৬৮ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। যৌথ একাদশের পক্ষে সফলতম বোলার ছিলেন কুম্বলে। ৮ ওভারে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে তিনি ৪ উইকেট দখল করেন। এরমধ্যে অধিনায়ক আজহারের দু’টি দুর্দান্ত ক্যাচ ছিল! আশিষ কাপুর ২টি এবং ওয়াসিম, ওয়াকার ও শচীন দখল করেন একটি করে উইকেট।

১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে মাঠে নামে যৌথ একাদশের উদ্বোধনী জুটি শচিন টেন্ডুলকার ও সাইদ আনোয়ার! এই দুজন শুধু সেই আমলই নয়, এখনও অনেকের সর্বকালের সেরা একাদশে উদ্বোধনী জুটি হিসেবে থাকবেন!

শচীন আক্রমণাত্মক শুরু করলেও সাইদ দেখে খেলতে থাকেন। ফলে উদ্বোধনী জুটিতেই পঞ্চাশোর্ধ রান জমা হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে রানাতুঙ্গে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। এর ফলও পান দ্রুত। এক পর্যায়ে যৌথ একাদশ ১২৬/৫ এ পরিণত হয়। জয়ের জন্য তখনও দরকার ৪৩ রান। সে সময় অজয় জাদেজা এবং রশিদ লতিফ দারুণ একটি জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। ১৬৪ রানের মাথায় জাদেজা ফিরে গেলেও ওয়াকার নেমে প্রয়োজনীয় রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

দুর্দান্ত বোলিং এর জন্য ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন অনিল কুম্বলে। লঙ্কান দল হেরে যায় এবং যৌথ একাদশ জেতে ৪ উইকেটে। আসলে, ভুল বললাম! সেদিন ক্রিকেট জিতেছিল! শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান- সবাই জিতেছিল! আর জঙ্গিবাদ হেরে গিয়েছিল!

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা: ৪০ ওভারে ১৬৮/৯ (আসাঙ্কা গুরুসিংহা ৩৪, অর্জুনা রানাতুঙ্গা ৩২; আশীষ কাপুর ২/৩৪, অনিল কুম্বলে ৪/১২)

উইলস পাক-ভারত একাদশ: ৩৪.৩ ওভারে ১৭১/৬ (শচিন টেন্ডুলকার ৩৬, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ৩২; মুত্তিয়া মুরালিধরণ ২/৪৬, উপুল চন্দনা ২/৩৫)

ফলাফল: উইলস পাক-ভারত একাদশ ৩৩ বল বাকি থাকতে চার উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: অনিল কুম্বলে (উইলস পাক-ভারত একাদশ)

যদিও, এত কিছু করেও অজি এবং ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের মন গলানো যায় নি। তাঁরা শেষ পর্যন্ত খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। লঙ্কানরা নির্মম প্রতিশোধটা জমা রেখেছিল ফাইনালের জন্য। সেবার এই অজিদের হারিয়েই তো চ্যাম্পিয়নের ট্রফি পায় অর্জুনা রানাতঙ্গার দল।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নিয়েও ম্যাচটির কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছিলেন রানাতঙ্গা। বলেছিলেন, ‘আমার অবশ্যই আজহার আর ওয়াসিমকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। যখন আমাদের ঘোরতর বিপদ, তখন তারা দল নিয়ে কলম্বোতে এসে ম্যাচ খেলে গেছে। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

তবে, এই ম্যাচের পুরো ফুটেজ পাওয়া যায় নি। তবে, লঙ্কান দলের উইকেট পতন আর ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস পাওয়া গেছে। সেটা পোস্টের সাথে জুড়ে দিলাম।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...