অনন্ত রানক্ষুধার অনবদ্য দৌঁড়

লম্বা এই সময় দুনিয়া থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু তাঁর এবং তাঁর ওই ভারী ব্যাটের ক্ষুধা কেড়ে নিতে পারেনি। যখনই উইকেটে যেতেন, রান করার অসীম ইচ্ছে ফুটে বের হতো। বহুকাল পরও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতে গেলে তার নাম উঠে আসবে।

সাধারণের চেয়ে ভারী ব্যাট দিয়ে ব্যাট করতেন।

সেই ভারী ব্যাট নিয়েই ৩০ বছর প্রায় কাটিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটের ময়দানে। লম্বা এই সময় দুনিয়া থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু তাঁর এবং তাঁর ওই ভারী ব্যাটের ক্ষুধা কেড়ে নিতে পারেনি। যখনই উইকেটে যেতেন, রান করার অসীম ইচ্ছে ফুটে বের হতো। বহুকাল পরও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতে গেলে তার নাম উঠে আসবে।

হ্যাঁ, তিনি গ্রাহাম গুচ।

লন্ডনের হুইপস ক্রস নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে ১৯৫৩ সালের ২৩ জুলাই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। পূর্ব লন্ডনের একটি ছোট্ট শহর লেটনে বেড়ে ওঠা গ্রাহাম গুচের। পরবর্তীকালে লন্ডনের ক্রিকেট তীর্থক্ষেত্রে এক ইতিহাস গড়বেন এই কিংবদন্তি। তবে এর যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৯ বছর বয়সে এসেক্স দলে জায়গা পাওয়ার মাধ্যমে। ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত এই দলটির হয়েই খেলে গিয়েছেন গুচ।

এসেক্সের হয়ে প্রথম দেখা যায় রান আর গ্রাহামে গুচের কী এক বন্ধন। একজন যেনো আরেকজনের পিছুই ছাড়ে না। দুই বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে ডাক আসে ইংল্যান্ড দলে। তবে শুরুটা ঠিক গ্রাহাম গুচ সুলভ হয়নি। দুই টেস্ট খেলার পরই দল থেকে বাদ পড়ে যান। তবে এসেক্সের হয়ে রীতিমত রানের বন্যা বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনবছর বাদে আবার যখন জাতীয় দলে ফিরলেন তখন বোঝা গেল গ্রাহাম গুচকে। বোঝা গেলো নতুন এক ইতিহাসের অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে।

১৯৮০ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ারও হলেন। তবে ১৯৮২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী সফরে গিয়ে ক্যারিয়ারে আবার কালো মেঘ টেনে আনলেন গ্রাহাম গুচ। জিওফ বয়কট, বব উলমারদের সাথে গ্রাহাম গুচও নিষিদ্ধ হলেন তিন বছরের জন্য। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আবারো ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব নেন তিনি। সেই বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ সময় পার করেন পরের বছর। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সাথে সেই সময় দারুণ জয় পায় দলটি। লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচেই গ্রাহাম গুচ করেছিলেন ৪৫৬ রান। প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩৩৩ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রান। তিনি বাদে শুধু কুমার সাঙ্গাকারার এক টেস্ট ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে আছে ৪৪৮৪৬ রান। এছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটে করেছেন ২২২১১ রান। সবমিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে গ্রাহাম গুচের ঝুলিতে আছে ৬৭০৫৭ রান। এর আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক ছিলেন জ্যাক হবস। তিনিও প্রায় ২২ বছর ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। তাঁর ঝুলিতে আছে ৬১৭৬০ রান।

বিশ্বকাপেও দারুণ সফল ছিলেন গ্রাহাম গুচ। ইংল্যান্ডের হয়ে তিন দশকে মোট তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তিন  বারই ফাইনাল খেলেছিল তাঁর দল। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দলকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে ২১ ইনিংস খেলে ৪৪.৮৫ গড়ে করেছিলেন ৮৯৭ রান।

এছাড়া ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ৪২.৫৮ গড়ে করেছেন ৮৯০০ রান। ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩৩ রানের ইনিংস সহ আছে মোট ২০ টি সেঞ্চুরি। সেই সময় এটিই ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। এরপর শুধু অ্যালেস্টার কুক তাঁকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।  এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৪২৯০ রানের মালিক তিনি।

ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আবার এসেক্সের কোচ হিসেবে কাজ করা শুরু করেন তিনি। সেই সময়ে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক শিষ্য হিসেবে পান অ্যালেস্টার কুককে। গ্রাহাম গুচ তাঁর রানের ক্ষুধা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন কুকের মধ্যেও। পরবর্তীকালে কুক ছাড়িয়ে যান তাঁর কোচ গ্রাহাম গুচকেও।

এছাড়া ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ হওয়ার পর দারুণ সাফল্য পান তিনি। তাঁর সময়ে মাত্র ১৫ মাসে অনেকগুলো ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পায় ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। সবমিলিয়ে গ্রাহাম গুচ যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তাঁর রানের ক্ষুধা ছড়িয়ে দিয়েছেন। নিজে যেমন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় রান করে গিয়েছেন তেমনি শিষ্যদের শিখিয়েছেন রানের সাথে বন্ধুত্বটা কত গভীর হওয়া দরকার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...