টেস্ট প্রাঙ্গনের ‘বঞ্চিত’ গ্রেট

টেস্ট ক্রিকেট - ক্রিকেট খেলার দীর্ঘতম সংস্করণ এবং একই সাথে সর্বোচ্চ মানদণ্ড। এই মানদণ্ডেই কতশত রথী মহারথীর নাম ক্রিকেটের পাতায় উজ্জ্বল বর্ণে লেখা হয়েছে। তবে এমন ক্রিকেটারও আছে যাদের মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ক্যারিয়ারে কখনোই টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি।

টেস্ট ক্রিকেট – ক্রিকেট খেলার দীর্ঘতম সংস্করণ এবং একই সাথে সর্বোচ্চ মানদণ্ড। এই মানদণ্ডেই কতশত রথী মহারথীর নাম ক্রিকেটের পাতায় উজ্জ্বল বর্ণে লেখা হয়েছে। তবে এমন ক্রিকেটারও আছে যাদের মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ক্যারিয়ারে কখনোই টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। এমন ১০ ক্রিকেটারকে নিয়েই খেলা-৭১ এর আজকের আয়োজন।

  • পদ্মকার শিভালকার- ভারত

বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) হয়ে টানা ২৭ মৌসুম খেলেছেন এই ক্রিকেটার। এ সময়ে ১২৪ ম্যাচে মাত্র ৫৮৯ নেওয়ার পাশাপাশি তার ঝুলিতে ছিল ৪২ টা ফাইফার। এর পরেও জাতীয় দলে কখনোই টেস্ট খেলার সুযোগ মেলেনি পদ্মকার শিভালকারের।

এর পেছনে অবশ্য আরেকটা কারণ হলো, সে সময়ে ভারতের স্পিন শক্তির অন্যতম ভরসার নাম ছিল বিশান সিং বেদী। সে সময়ে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও ছিল তাঁর। তাই প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও বিশান সিং বেদী ততদিনে নিজের জায়গা গড়ে নেওয়ায় শিভালকারের টেস্ট খেলার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।

  • কাইরেন পোলার্ড- ওয়েস্ট ইন্ডিজ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টা যার রক্তে মিশে গিয়েছে সেই পোলার্ড নাকি প্রথম দিকে নিজেকে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টই মনে করতেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট খেলার প্রবল আকাঙ্খা ছিল তাঁর।

অন্তত ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই ইচ্ছার পেছনে ছুঁটেছেন তিনি। কিন্তু একটা সময়ে সেই সুযোগ না মেলায় থেমে যান তিনি। ২০১৫ এর পর আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই আর খেলেননি তিনি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সাদা জার্সিতে আর মাঠে নামা হয়নি তাঁর।

  • ভিনসেন্ট বার্নস – দক্ষিণ আফ্রিকা 

মাত্র ১১.৯৫ বোলিং গড়ে ক্যারিয়ারে ৩২৩ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান এ পেসার। কিন্তু একটা ভুল সময়ে জন্মেছিলেন তিনি। বর্ণবৈষ্যমের যুগে দক্ষিণ আফ্রিকায় অ-শ্বেতাঙ্গদের জন্য সুযোগ সুবিধা ছিল কম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে পারলেও সে সময়ে অ-শ্বেতাঙ্গদের জন্য জাতীয় দলের দরজা ছিল বন্ধ। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আর টেস্ট খেলতে পারেননি ভিনসেন্ট বার্নস।

  • রায়ান টেন ডেসকাট – নেদারল্যান্ড

ওয়ানডেতে ৩৩ ম্যাচে ৫ শতক আর ৯ অর্ধশতকে ওয়ানডেতে ঝলমলে ক্যারিয়ার ডেসকাটের। গড় ৬৭। এর পাশাপাশি বোলিংয়ে ৫৫ উইকেট। কিন্তু ভাগ্যটা বোধহয় এমনই হয়, যে দেশের হয়ে তিনি খেলেছিলেন সেই দল আজ অবধি টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি। টেস্ট ম্যাচ তাই খেলবেন কী করে?

তবে টেস্ট খেলার স্বপ্নকে পুঁজি করে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কাউন্টি দল এসেক্সের হয়ে কাটিয়েছেন প্রায় ১৮ টি মৌসুম। সেখানেও পরিসংখ্যানটা খারাপ ছিল না তাঁর। ২১ সেঞ্চুরিসহ ৪০ গড়ে রান করেছিলেন ৯৮৪১। তবে এরপরও কখনো টেস্ট না খেলার দলেই নাম উঠে যায় ডেসকাটের।

  • ক্লাইভ রাইস – দক্ষিণ আফ্রিকা

২৬৩৩১ রান, সাথে ৯৩০ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রিসের এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কী দুর্দান্ত সম্পদ হতে পারতেন। কিন্তু প্রোটিয়াদের হয়ে ৩ ওয়ানডে খেলেই ক্যারিয়ার থেমে যায় ক্লাইভ রাইসের

এর জন্য অবশ্য তাঁর দায় নেই বললেই চলে। কারণ সে সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করা হয়। যার জন্য রাইসেরও ক্যারিয়ার থেমে যায় দেশের হয়ে ৩ ওয়ানডে খেলে। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও দেশের হয়ে তাঁর টেস্ট খেলার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত আরাধ্যই থেকে যায়।

  • ডেভিড হাসি – অস্ট্রেলিয়া

বড়ভাই মাইক হাসি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলেছিলেন ৩০ বছর বয়সে। তবে ছোটভাই ডেভিড হাসির কখনোই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাগি গ্রিন স্পর্শ করা হয়নি। লিমিটেড ওভার ক্রিকেট দারুণ পারফর্ম করার জন্য পরিচিতি থাকলেও লঙ্গার ভার্শনে তিনি ছিলেন আরো দুর্দান্ত। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫২.৫০ গড়ে ১৪২৮০ রান সেটিই প্রমাণ করে।

২০০৯/১০ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ড ট্রফিতে ৯৭০ রান করে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার। সে ধারা অব্যাহত রেখে ফাইনালেও খেলেছিলেন ১৬৮ রানের ইনিংস। দুর্দান্ত এ ফর্মের কারণে তাই নিজেও আশা করেছিলেন এবার অন্তত অ্যাশেজ সিরিজে ডাক পাবেন তিনি ৷

কিন্তু, সেটি তো হয়নি, বরং এক মাসের মাঝে তাকে অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তাই ক্যারিয়ারে কখনোই টেস্ট খেলতে পারেননি ডেভিড হাসি।

  • মহাদেবন সাথাশিভম – শ্রীলঙ্কা

গ্যারি সোবার্স তাকে নিয়ে বলেছিলেন, দ্য গ্রেটেস্ট ব্যাটসম্যান এভার অন আর্থ। ফ্রাঙ্ক ওরেলও সেই একই সুরে সুর মিলিয়ে ছিলেন।

কিন্তু মহাদেবন যখন ক্রিকেট শুরু করেন তখনো শ্রীলঙ্কা টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি। তাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি এবং ৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৭৫৩ রান করলেও দেশের হয়ে টেস্ট খেলা হয়নি মহাদেবন সাথাশিভমের।

  • অমল মুজুমদার – ভারত

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অভিষেকেই ২৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অমল মুজুমদার। ক্যারিয়ারে ৪৮.১৩ গড়ে রান ১১,১৬৭ করার পাশাপাশি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৩০ টা। কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারটা এই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই আটকে থাকে। কখনোই ভারতের হয়ে টেস্ট খেলতে পারেননি তিনি।

শুধু টেস্ট কেন, কোনো ফরম্যাটেই তিনি জাতীয় দলের জার্সি পাননি। অথচ, নিজের সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন ছিলেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!

  • অ্যালান জোনস – ইংল্যান্ড

একটিও টেস্ট না খেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা অ্যালান জোনসের। পুরো ক্যারিয়ারে ৩৬০০০ রান করা এ ব্যাটার ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত প্রত্যেকটি মৌসুমেই করেছিলেন ১০০০ এর বেশি রান৷

তবে অ্যালান জোনস একটি টেস্ট খেলেছিলেন। রেস্ট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে তিনি ৫ ও ০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু টেস্ট কেবল দুটি দেশের মধ্যে হতে পারে, এই মর্মে পরবর্তীতে এ টেস্টটিকে বাতিল করে দেয় আইসিসি। অ্যালান জোনসও এরপরে আর কোনো টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। তাই তিনিও ঢু্কে যান টেস্ট না খেলাদের দলে।

অবশ্য এর ৫০ বছর পরে, ইসিবি অ্যালান জোনসকে টেস্ট ক্যাপের সম্মাননা দেয়। ইংল্যান্ডের ৬৯৬ নম্বর ক্যাপটা এখন জোনসের। যদিও অফিশিয়ালি তিনি কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেননি।

  • সুজি বেটস – নিউজিল্যান্ড

১৪২ টা ওয়ানডে এবং ১৩১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। অথচ দেশের হয়ে একটিও টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়নি সুজি বেটসের। অবশ্য এর পেছনে সামান্য পরিমাণ দায়ও নেই তাঁর। কারণ নারী ক্রিকেটের ক্ষেত্রে আইসিসি এফটিপি থেকে বহু আগেই টেস্ট কমিয়ে দেয়। নিউজিল্যান্ড নারী দল যেখানে ২০০৪ সালে শেষ টেস্ট খেলেছিল সেখানে সুজি বেটসের অভিষেকই হয়েছিল ২০০৬ সালে। তাই লাল বলের ক্রিকেটে কখনোই দেখা যায়নি তাঁকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...