Social Media

Light
Dark

দ্য আদার ওয়াসিম!

পাকিস্তানের ওয়াসিম। না, তিনি ওয়াসিম আকরাম নন। তিনি ফাস্ট বোলার নন। রিভার্স স্যুইং তিনি জানেন না। তবে, বড় তারকা হওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেহায়েত কম ছিল না।

১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তাঁর। তাঁর নাম মোহাম্মদ ওয়াসিম। অবশ্য সেই টেস্টে কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম কাঁধের চোটের কারণে নিজেকে সরিয়ে নেন। সেই ওয়াসিমের পরিবর্তে এই ওয়াসিমের দলীয় একাদশে সুযোগ জুটে যায়।

তাঁকে মনে রাখার আরেকটা বিশেষ কারণ হচ্ছে অভিষেক সেই টেস্টে তিনি প্রথম ইনিংসে ডাক মেরেছিলেন আর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন! ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার সেই ইনিংসে ১০৯ রান করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে দশম কনিষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে তিনি সেঞ্চুরির রেকর্ড করেছিলেন। তিনি মূলত ছিলেন উইকেটরক্ষক। আবার ডান-হাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ ব্রেক গুগলি বোলিংটাও দরকারে করতে পারতেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাকিস্তানের হয়ে আঠারোটি টেস্ট ও পঁচিশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।

তাঁর এই স্বল্প খেলোয়াড়ি জীবনে ১৮ টেস্টে দুইটি সেঞ্চুরি ও দুইটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ মোট ৭৮৩ রান করেছিলেন তিনি। পঁচিশটি ওয়ানডেতে তিনটি অর্ধ-শতক থাকলেও কোন শতক জোটেনি তাঁর ঝুলিতে।

অনূর্ধ্ব১৯ দলের অধিনায়কত্বও করেছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চেয়েও তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ার সফল ছিল। প্রথম শ্রেণীর ১৯৪ টি ম্যাচে তাঁর রান ১০,০৭৪। যেখানে তিনি করেছিলেন ২৭ টি সেঞ্চুরি ও ৪৩ টি হাফ-সেঞ্চুরি। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত মোহাম্মদ ওয়াসিমের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল।

নিজের প্রায় অসফল ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি বলেন,আমি পরের টেস্ট খেলেছি, তারপর বাদ পড়েছি। এরপর আমি পুরো এক বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলিনি। সামগ্রিকভাবে, আমার সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমি অবশ্যই ছয় বা সাতটি কামব্যাক করেছি। যা কারও আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

ওয়াসিমকে তাঁর রানসংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করার চেষ্টা করাটা অনেকটা ভ্যান গগকে তাঁর শিল্পকর্ম বাদ দিয়ে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মূল্যায়ন করার মত। যদিও, সঠিক পরিচর্যা পেলে তার রানের অ্যাকাউন্টটাও হয়তো ফুলে ফেঁপে উঠতো।

১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ১২২ বলে ৯১ রান করেছিলেন যখন অন্য প্রান্তে তার সঙ্গীরা দুইয়ের ঘরেই পৌঁছাতে লড়াই করে যাচ্ছিল।  গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্ন এর মতো বোলারদের তিনি খুব কৌশলে খেলে গিয়েছিলেন। যদিও সেই টেস্টে শেষমেশ অস্ট্রেলিয়া জিতে।

ওয়াসিম একবার ক্রিকেট মান্থলিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উপহাস করে বলেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই ওপেনার থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত প্রতিটি পজিশনে ব্যাট করেছি।’ মানে, তাঁর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সেই সময় পাকিস্তান এতটাই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিল।

তাঁর অসফল ক্যারিয়ারের জন্য তিনি অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেককে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। সেই সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড়ের শক্তি সম্পর্কে আরও সংহতি এবং বোঝাপড়ার দরকার ছিল।

মোহাম্মদ ওয়াসিমকে যখন যে অর্ডারে ইচ্ছা সে অর্ডারে খেলানো হয়েছিল। যেমন ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়াসিম আকরাম তাঁকে ব্রিসবেনে হওয়া প্রথম টেস্টে পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাটিং ওপেন করতে বলেছিলেন। সেখানে হঠাৎ নতুন বলে গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং ড্যামিয়েন ফ্লেমিংএর মত বোলারদের মুখোমুখি হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

তাছাড়া ওয়াসিম ১৮ টেস্টে পাঁচ জন অধিনায়কের অধীনে খেলেছিলেন। এবং খেলোয়াড়দের ঘন ঘন এবং এলোমেলো আবর্তন তো ছিলই। সব কিছুর ওপরে বাজে রকমের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ছায়াও লুকিয়ে ছিল।২০০০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। দল থেকে বাদ পড়ার পর তাকে আর পাকিস্তান দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

২০০২-০৩ মৌসুমে পাকিস্তান ত্যাগ করেন। একই মৌসুমে নিউজিল্যান্ডে ওতাগোর পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন। দুই বছর পর ওটাগো ত্যাগ করে পাকিস্তানে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। ওয়াসিম দাবী করেন যে, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলার প্রস্তাবনা পেলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আশাবাদী ছিলেন যে, পাকিস্তানের পক্ষে খেলার জন্য তাকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার শেষে কোচিং ক্যারিয়ার বেছে নেন। নেদারল্যান্ড এবং পরে সুইডেন ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পাশাপাশি টেলিভিশনে ক্রিকেট বিশ্লেষকের ভূমিকাও পালন করে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link