কোটার খেলোয়াড় থেকে উইকেট টেকার

তাইজুল ইসলামকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল ক্যাপ্টেন্স কল। বোর্ডের নির্বাচকদের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান দলে রেখেছিলেন তাইজুল ইসলামকে। যার কারণে আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার মানে নাসুম আহমেদ দল থেকে জায়গা হারান। বিষয়টা তখন প্রচার হয় একটু নেতিবাচক উপায়ে।

বলা হয়, তামিমের কোটায় দলে জায়গা হয়েছে তাইজুলের। গণমাধ্যম সেই ইস্যু নিয়ে সরব হয়। সেটা যথেষ্ট যৌক্তিকও ছিল। কারণ, ধীরে ধীরে যখন সাদা বলের ক্রিকেটে ভরসা হয়ে উঠছিলেন নাসুম, তখন কেনই বা পেছনে ফেরা, কেনই বা তাইজুলকে দেওয়া? অংকটা মিলছিল না। তামিম ইকবালকেও প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়।

তামিম খারাপ ব্যাখ্যা দেননি। বলেছিলেন, শেষ তিন ওয়ানডেতে যার পাঁচ উইকেট আছে – তাঁকে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে দেশের মাটিতে দলে না রাখাটাই তাই অযৌক্তিক। পরিসংখ্যানটা ভুল নয়। তারপরও, ওয়ানডেতে তাইজুলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোকের অভাব ছিল না।

তাইজুলের জন্য মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটা তাই ছিল নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ। আর সেই মঞ্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন পাশ মার্কই পেয়েছেন বলা চলে। তিনটা উইকেট নিয়েছেন। আর পরিস্থিতির বিবেচনায় তিনটা উইকেটই খুব মূল্যমান ছিল। প্রতিটা উইকেটেই বারবার ইংল্যান্ডের লাগাম টেনে ধরতে চেয়েছিলেন তাইজুল।

তাতে শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। ইংল্যান্ড তিন উইকেটে জিতেছে ডেভিড মালানের অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরির ওপর ভর করে। তবে, তারপরও তাইজুল নিজের স্টেটমেন্টটা ঠিকই রাখতে পেরেছেন ম্যাচে। অন্তত, আরেকটি বারের জন্য তিনি বোলিং দিয়ে বলতে পেরেছেন যে তিনি অধিনায়কের বদান্যতায় দলে জায়গা পাননি। তিনি পারফর্মার, উইকেট টেকার – স্রেফ তাঁর উইকেট নেওয়ার ক্ষমতাটা মূল্যায়ন করলেই তাঁকে ওয়ানডে একাদশে রাখা যায়।

২০১৪ সালে তাইজুলের যখন ওয়ানডে অভিষেক হয়, তখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ১১ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। তবে, আট বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ানডেতে তেমন একটা ডাক আসেনি তাঁর। ৫০ ওভারে সর্বসাকুল্যে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৩ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেখানে উইকেট তাঁর ২৩ টি। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন একবার। মানে ম্যাচ প্রতি প্রায় দু’টি করে উইকেট নেন তাইজুল।

এই পরিসংখ্যানটা কিন্তু বাংলাদেশে বিরল। ফলে, কোটায় খেলেন বলে তাইজুলের জায়গা নিয়ে যে প্রশ্নটা উঠছে সেটা অমূলক। বরং, এখানে অধিনায়কের সিদ্ধান্তই বাড়তি প্রশংসার জায়গা রাখে। তিনি নিজেরে যোগ্য অস্ত্রটির যথার্থ মর্যাদা দিতে পেরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link